• মায়ের কলমে নতুন করে প্রাণ পাচ্ছে র‍্যাগিংয়ে প্রাণ হারানো সন্তান...
    আজকাল | ১৪ জুলাই ২০২৪
  • তীর্থঙ্কর দাস: ‌র‍্যাগিং কেড়ে নিয়েছিল সদ্য বি টেক–এ ভর্তি হওয়া এক পড়ুয়ার প্রাণ। তাঁর মৃত্যুতে গর্জে উঠেছিল লেখিকা অর্পিতা সরকারের কলম। অর্পিতার হাতেই উদ্বোধন হল মৃত সন্তানের মায়ের লেখা বই ‘‌ছোটো–ছুটকির কেরামতি’‌। কলকাতা বুক প্রেস থেকে প্রকাশিত হল সুদীপা চৌধুরীর লেখা বই। হাইকোর্টে নিজের চেম্বারে বইটি প্রকাশ করেন কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়। সুদীপা চৌধুরীর লেখা দুটি বই ইতিমধ্যেই পাঠকদের মন জয় করেছে। এশিয়ান প্রেস প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ‘‌আমার দীপের আলোয় মালায় গাঁথা/ কিছু কথা কিছু ব্যথা’‌ এবং বার্তা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত ‘‌একলা মা’‌ বই দুটি জনপ্রিয় হয়েছে। 

    ২০২৩ সালের ২৪ জুলাই বর্ষণমুখর এক বিকেলে একমাত্র সন্তানকে হারিয়েছেন সুদীপা চৌধুরী। উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে বিজয়ওয়াড়ায় পড়তে গিয়েছিল তাঁর ছেলে। ছেলেকে হস্টেলে রেখে বাড়িতে ফেরার দু’‌দিনের মাথায় র‍্যাগিংয়ের শিকার হয় পড়ুয়াটি। মৃত্যুর খবর পৌঁছয় বাবা, চিকিৎসক সুদীপ চৌধুরীর কাছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এই খবর নিয়ে হইচই হলেও সময়ের সঙ্গে তা স্তিমিত হয়ে গেছে ঠিকই, তবে এই ঘটনা বারে বারে গর্জে উঠেছে অর্পিতা সরকারের কলমে।

    সেই অর্পিতাই প্রকাশ করলেন সুদীপার বই। সুদীপার পক্ষে একমাত্র সন্তানকে হারানোর যন্ত্রণা কোনওদিনই ভোলা সম্ভব হবে না। আর সেই সন্তানের স্মৃতি বুকে আঁকড়ে নিয়েই তিনি কলম ধরেছেন। লেখালেখিতে তাঁর অভ্যাস আগে থেকেই ছিল। সেই কলম ব্যবহার করেই ছেলেকে মানুষের মনে বাঁচিয়ে রাখতে চান সুদীপা। বই আকারে তাই প্রকাশ করলেন নিজের নানা লেখালিখি। সুদীপা বলেন, তার ছেলের ডাকনাম ছিল ‘‌ছোটো’‌।‌ তাই বইয়ের নাম দেওয়া হয়েছে ‘‌ছোটো–ছুটকির কেরামতি’‌। আদতে ছোটদের নিয়ে লেখা কয়েকটি ছোটবেলার অভিজ্ঞতা, শিক্ষামূলক ও আনন্দের গল্পের সংকলন বইটি। তিনি বলেন, ‘‌আমি চাই আগের দুটি বইয়ের মতো এই বইও পাঠকদের ভাল লাগুক। সকলের কাছে ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে দেওয়াই আমার লক্ষ্য।’‌ বইপ্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সন্তানহারা বাবা সুদীপ চৌধুরীও। লেখিকা অর্পিতা সরকার বলেন, সন্তান হারিয়েও যেভাবে সন্তানকে নিজের লেখনীর মধ্যে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছেন সুদীপা, সেটি নিঃসন্দেহে একটা দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ। আমাদের সকলেরই উচিত সুদীপাকে অনুসরণ করে সমস্ত দুঃখ, যন্ত্রণা ভুলে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেঁচে থাকা। আর এই ধরনের রাগিংয়ে আর যাতে কোনও মায়ের কোল খালি না হয় তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির পাশাপাশি বাবা–মায়ের উচিত ছেলেমেয়েদের সঠিক শিক্ষা দেওয়া।
  • Link to this news (আজকাল)