• রানাঘাট দক্ষিণের ‘মুকুট’ মুকুটমণির,  বিজয়োল্লাসে সবুজ ঝড় ঘাসফুল শিবিরে
    বর্তমান | ১৪ জুলাই ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের সময় এই বিধানসভাতেও ফুটেছিল ঘাসফুল। কিন্তু ২০১৬ সাল থেকে দীর্ঘ আট বছর পরাজয়ের ব্যর্থতা নিয়েই চলতে হয়েছিল তৃণমূলকে। তাই এবারের উপ নির্বাচনে রানাঘাট দক্ষিণ বিধানসভায় জয় ছিনিয়ে আনাই ছিল তৃণমূলের কাছে প্রেস্টিজ ফাইট। অবশেষে খরা কাটল। দ্বিতীয়বারের সুযোগে রানাঘাট দক্ষিণে তৃণমূলের জয়ধ্বজা ওড়ালেন মুকুটমণি অধিকারী। শনিবার উপ নির্বাচনের ফলাফলে ৩৯ হাজারেরও বেশি ভোটে জয়ী হয়েছেন তিনি। এদিন মুকুটমণির জয় নিশ্চিত হতেই রানাঘাটের রাজপথ ঢেকে যায় সবুজ আবিরে। জয়ের উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের নেতৃত্ব থেকে কর্মী-সমর্থকরা। 


    শনিবার রানাঘাট কলেজের ডিসিআরসি সেন্টারে মোট ১১ রাউন্ডে গণনা চলে। প্রথম রাউন্ড থেকেই এদিন লিড ধরে রাখতে পেরেছিল তৃণমূল। গণনা যত এগতে থাকে, প্রতি রাউন্ডে গড়ে তিন হাজার ভোটে ব্যবধান বাড়াতে থাকেন মুকুটমণি। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, মোট ২ লক্ষ ৬ হাজার ১৯৯টি বৈধ ভোটের মধ্যে মুকুটমণি পেয়েছেন ১ লক্ষ ১৩ হাজার ৫৩৩টি ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির মনোজকুমার বিশ্বাস পেয়েছেন ৭৪ হাজার ৪৮৫টি ভোট। ১৩ হাজার ৮২টি ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে আছেন সিপিএমের অরিন্দম বিশ্বাস। চলতি বছরের লোকসভা নির্বাচনে রানাঘাট দক্ষিণ বিধানসভায় প্রায় ৩৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। উপ নির্বাচনে সেই ব্যবধান মিটিয়ে লোকসভায় পরাজিত মুকুটমণিকে জয়ের রাস্তায় ফিরিয়ে আনাই পাখির চোখ ছিল তৃণমূলের। সেই লড়াইয়ে সফল হতেই সবুজ আবিরের জোয়ারে ভেসে যায় এলাকা।


    জয়ের পর ভিকট্রি সাইন দেখিয়ে জয়ী প্রার্থী তৃণমূলের মুকুটমণি বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দ্বিতীয়বার সুযোগ দিয়ে আমার উপর যে ভরসা করেছিলেন, তার জন্য আমি চিরকৃতজ্ঞ থাকব। বিজেপির মিথ্যে কুৎসা, ধর্মের নামে ভয় দেখানোকে দূরে সরিয়ে রানাঘাট দক্ষিণের মানুষ দু’হাত ভরে তৃণমূলকে আশীর্বাদ করেছেন। প্রত্যেক নেতা ও কর্মীর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল এই জয়। 


    পোস্টাল ব্যালটের গণনাতেও এদিন এগিয়ে থেকেছেন মুকুটমণি। যদিও হারের পর এই ফলাফলকে মানতে নারাজ ছিলেন বিজেপি প্রার্থী মনোজকুমার বিশ্বাস। তিনি বলেন, তৃণমূল প্রার্থী পরীক্ষা না দিয়েই সহজ জয় পেয়েছেন। আমাকে পরীক্ষা দিয়েও হারতে হয়েছে। বাইক বাহিনী দিয়ে সন্ত্রাস চালিয়ে তৃণমূল নিজেদের জয় নিশ্চিত করেছে। এটা গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ফলাফল হতে পারে না। পরাজয়ের পরেও অবশ্য বিরোধিতা করা থেকে বিরত হননি বাম প্রার্থী অরিন্দম বিশ্বাস। তিনি বলেন, আমি যেটুকু ভোট পেয়েছি, সেটা মানুষের রায়। আর তৃণমূল যে ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছে, সেটা সন্ত্রাসের ফলাফল। তৃণমূল ভোটকে প্রহসনে পরিণত করেছিল।


    তৃণমূলের রানাঘাট শহরের মূল কার্যালয় বিনয় ভবন থেকে শুরু করে রানাঘাট দক্ষিণ বিধানসভার সর্বত্র এদিন দুপুর থেকেই শুরু হয়ে যায় সবুজ আবির খেলা। ভ্যাপসা গরম আর অঝোর বৃষ্টিকে উপেক্ষা করেই জয়ের উৎসবে মেতে ওঠেন কর্মীরা। রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, বিরোধীরা যতই অভিযোগ করুক, এদিন মানুষের রায় স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। ধর্মে নয়, ভোটাররা উন্নয়নের উপর আস্থা রেখেছিলেন। লোকসভায় আমাদের যে ব্যর্থতা সইতে হয়েছিল, এই জয়ে তা যেন অনেকটাই ধুয়ে গিয়েছে। আগামী একুশে জুলাইয়ের মঞ্চে এই জয়কে দলনেত্রীর কাছে উৎসর্গ করছি আমরা। 
  • Link to this news (বর্তমান)