• প্লাস্টার করা হাত নিয়ে কীভাবে অ্যাম্বুলেন্স চালাচ্ছিলেন চালক
    বর্তমান | ১৪ জুলাই ২০২৪
  • পিনাকি ঢোলে, মেদিনীপুর: পড়ে গিয়ে ভেঙেছে ডান হাত। সেই হাতে প্লাস্টারও করা রয়েছে। কিন্তু তাতে কী! বাঁ হাতের ভরসাতেই গত একমাস ধরে অ্যাম্বুলেন্স চালিয়ে আসছেন ঘাটালের কোন্নগরের বাসিন্দা বছর বাইশের অভিষেক মল্লিক। তাঁর ভুলেই কি ছ’জনের প্রাণ গেল? কেশপুরে মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর এই প্রশ্ন উঠছে। মৃতদের পরিজনদেরও অভিযোগ, ভাঙা হাত নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স চালানোর সাহস দেখাল কী করে? 


    শুক্রবার রাতে পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরের পঞ্চমীতে লরি ও অ্যাম্বুলেন্সের মুখোমুখি সংঘর্ষে ছ’জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে ভয়াবহ দুর্ঘটনার মুখ থেকে বেঁচে ফিরেছেন অ্যাম্বুলেন্সের চালক। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেল সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন চালক। তাঁর অবস্থা এই মুহূর্তে স্থিতিশীল বলেই জানিয়েছেন চিকিত্সকরা। কীভাবে দুর্ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে শুক্রবার রাতেই তাঁর সঙ্গে একপ্রস্থ কথা বলার চেষ্টা করেন জেলা পুলিসের আধিকারিকরা। যদিও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দাবি করেন তিনি। 


    পুলিস সূত্রের খবর, অভিষেক কখনও তাঁদের জানাচ্ছেন, তিনি রাজ্য সড়কের বাঁ দিক ঘেঁষেই আসছিলেন। কিন্তু লরিচালক এসে ধাক্কা মেরেছে। আবার কখনও বলছেন, তাঁর গাড়ির হেডলাইটের আলো কম ছিল। উল্টোদিক থেকে আসা লরির আলোয় তাঁর চোখ ধাঁধিয়ে গিয়েছিল। যার ফলে এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। তবে শারীরিকভাবে ‘ফিট’ না হওয়া সত্ত্বেও কেন তাঁকে অ্যাম্বুলেন্স চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হল সেই প্রশ্ন উঠছে। এক্ষেত্রে মৃতদের পরিবারের লোকজন অ্যাম্বুলেন্স মালিকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন।


    জখম অপর্ণার আত্মীয় বীরু দলুইয়ের অভিযোগ, সমস্ত অ্যাম্বুলেন্সেরই দ্রুতগতিতে যাওয়ার তাড়া থাকে। ফলে চালকদের অত্যন্ত দক্ষ হতে হয়। এক্ষেত্রে হাত ভাঙা চালককে কীভাবে এরকম গুরুতর কাজের দায়িত্ব দেওয়া হল? হাসপাতাল থেকে শুরু করে প্রশাসনের আধিকারিকরাও কি চোখে ঠুলি পরে থাকেন? তাঁরা দেখতে পান না চালক ভাঙা হাত নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স চালাচ্ছে? পুলিস সূত্রের খবর, অ্যাম্বুলেন্সের মালিকের বাড়ি ঘাটাল শহরে। দুর্ঘটনার তদন্তে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারে পুলিস। তবে অভিষেকের অবস্থা স্থিতিশীল হলেও তাঁর দুই বন্ধু জিৎ দলুই ও সুরজিৎ মাঝির মৃত্যু হয়েছে। পুলিস জানিয়েছে, দু’জনেরই বাড়ি ঘাটাল শহরে। দু’জনেরই পরিবারের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। জিতের বাবা রান্নার কাজ করেন। অভিষেকের সঙ্গেই থাকতেন। গাড়ি চালানো শিখছিলেন। সুরজিৎ রংয়ের কাজ করেন। রাস্তার ধারে তাঁর বাবার ঘুগনি-মুড়ির দোকান রয়েছে। হাসপাতালের বেডে শুয়ে অভিষেক বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই তিন বন্ধু একসঙ্গে ছিলাম। আমি মেদিনীপুর যাব শুনে ওরাও আসতে চায়। কিন্তু এই পরিণতি হবে আমি ভাবতে পারিনি। অভিষেকের প্রলাপ, আমি তো সবাইকেই বাঁচাতে চেয়েছিলাম। কী হতে কী হয়ে গেল!
  • Link to this news (বর্তমান)