অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য মেদিনীপুর যাওয়ার পথে প্রাণ হারালেন শ্যামাপদ
বর্তমান | ১৪ জুলাই ২০২৪
সংবাদদাতা, ঘাটাল: বিয়ে হয়েছিল মাত্র দেড় মাস আগে। তার কিছুদিন পর থেকেই নববধূ অপর্ণার শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। স্ত্রীর চিকিৎসায় কোনও কসুর রাখেননি স্বামী শ্যামাপদ বাগ (২৫)। ক্ষীরপাই শহরের কাশীগঞ্জের ওই বধূকে ঘাটাল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন স্বামী। কিন্তু সেখানে পৌঁছনোর আগেই অ্যাম্বুল্যান্স দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন শ্যামাপদবাবু। দুর্ঘটনায় তাঁর অসুস্থ স্ত্রী বেঁচে গিয়েছেন। ঘাটালের আরও দু’জন ওই দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। যাঁরা শুধুমাত্র অ্যাম্বুলেন্স চালক বন্ধুকে রাতে সহযোগিতা করার জন্য গাড়িতে উঠেছিলেন।
ক্ষীরপাইয়ের ১ নম্বর ওয়ার্ডে শ্যামাপদবাবুর বাড়ি। দুই বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বাড়িতে বাবা-মা রয়েছেন। শ্যামাপদবাবু কাঠের কাজের পাশাপাশি মাটির প্রতিমা তৈরির করতেন। জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষদিকে কেশপুর থানার ভগবানচকের বাসিন্দা সদাগর মল্লিক ও অণিমা মল্লিকের মেয়ে অপর্ণার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের পর কয়েক সপ্তাহ অপর্ণা ভালোই ছিলেন। কিন্তু এরপর তিনি কিছু খেতে পারতেন না। প্রায়ই পেটে যন্ত্রণা হতো। কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসত। সোমবার অপর্ণাকে ক্ষীরপাই গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় বৃহস্পতিবার ঘাটাল সুপার স্পেশালিটিতে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু সেখানে অবস্থার অবনতি হলে শুক্রবার সন্ধ্যায় চিকিৎসক অবিলম্বে মেডিক্যালে স্থানান্তরিত করার নির্দেশ দেন।
শ্যামাপদর বাবা নারায়ণ বাগ বলেন, আমার ছেলে ও তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন বউমাকে নিয়ে রাত প্রায় সাড়ে ১০টা নাগাদ মেদিনীপুরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল। ভোরে দুর্ঘটনায় ছেলে ও ওর শ্বশুরবাড়ির অনেকের মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর পেলাম। শুক্রবার রাতে দাসপুর-মেদিনীপুর রাস্তার পঞ্চমীতে লরির সঙ্গে ওই অ্যাম্বুলেন্সের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। তাতে ছ’জন মারা যান। শ্যামাপদবাবু ছাড়া বাকিরা হলেন অপর্ণাদেবীর মা, মামা, মামী ও অ্যাম্বুলেন্স চালকের দুই বন্ধু জিৎ দোলই (২০) ও সুরজিৎ মাজি(২৬)। জিৎ ও সুরজিতের বাড়ি ঘাটাল শহরের কোন্নগরে।
অ্যাম্বুলেন্স চালক অভিষেক মল্লিকের বাড়িও কোন্নগরেই। ওই রাতে অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া চূড়ান্ত হওয়ার পরই অভিষেক তাঁর দুই বন্ধুকে তাঁর সঙ্গে মেদিনীপুরে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। রোগীকে মেডিক্যালে পৌঁছে দিয়ে রাত দেড়টা-দু’টোর মধ্যে বাড়ি ফিরে আসার কথা ছিল। তাই জিৎ ও সুরজিৎ রাজি হয়ে যান। বন্ধুকে সহযোগিতা করতে গিয়ে তাঁদেরও অকালে প্রাণ গেল। এদিন সন্ধ্যায় কোন্নগরের শ্মশানঘাটে যখন দুই মৃত যুবকের চিতা জ্বলছিল, তাঁদের শেষ দেখা দেখার জন্য কাতারে কাতারে মানুষ ভিড় করেন। শ্যামাপদ বাগ।