• শান্তিনিকেতনের কোপাই লাগোয়া প্রায় ১১ একর জমি সরকারি খাতে নথিভুক্ত করল প্রশাসন
    বর্তমান | ১৪ জুলাই ২০২৪
  • সংবাদদাতা, বোলপুর: শান্তিনিকেতনের কোপাই নদী সংলগ্ন বেসরকারি আবাসনের বিরুদ্ধে জমিহারাদের যে আন্দোলন চলছিল, সেখানে বড়সড় পদক্ষেপ নিল জেলা প্রশাসন। সংশ্লিষ্ট আবাসন ও তৎসংলগ্ন ১১.৪১ একর জমি সরকারি খাতে নথিভুক্ত করেছে প্রশাসন। সেই জমি রেকর্ডের পর পাট্টা দিয়ে প্রকৃত জমিহারাদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে বলে ‘বর্তমান’-কে জানালেন জেলাশাসক বিধান রায়। ‌প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে অত্যন্ত খুশি আন্দোলনকারীরা। এপ্রসঙ্গে ওই আবাসনের প্রজেক্ট ম্যানেজার বলেন, আইন মেনে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। 


    সরকারি পাট্টা ও বর্গাকৃত জমি দখলের অভিযোগ ঘিরে বেশ কিছুদিন ধরেই উত্তাল শান্তিনিকেতনের কোপাই নদী সংলগ্ন একটি বেসরকারি আবাসনস্থল। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই আবাসন প্রকল্পটি পাড়ুই থানার সাত্তোর গ্রাম পঞ্চায়েতের কসবা এলাকায় রয়েছে। ওই আবাসন প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজটি ৫২ বিঘা জমিজুড়ে রয়েছে। সেখানে রয়েছে প্রায় ২০০টি বিলাসবহুল কটেজ। যার অধিকাংশই বিক্রি হয়ে গিয়েছে। তাই মুনাফার কথা মাথায় রেখে ওই আবাসনের পাশেই ২২ বিঘা জমির উপর নতুন করে দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্মাণ কাজ শুরু সংস্থাটি। আর তাতেই বিতর্কের সূত্রপাত হয়। স্থানীয় আদিবাসীদের দাবি ওই ২২ বিঘা জমি এলাকার প্রভাবশালীদের মদতে জোর করে লিখিয়ে নেওয়া হয়েছে। অভিযোগ, প্রভাবশালীরা কার্যত প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে পাট্টা পাওয়া সরকারি ওই জমি বেদখল করে। পরবর্তীতে ওই আদিবাসীরা বীরভূমের জেলাশাসক ও জেলা পরিষদের সভাধিপতির কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এরপরেই প্রশাসন ওই বেসরকারি সংস্থাকে নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়ে ঘটনা তদন্ত শুরু করে। সম্প্রতি এডিএম(এলআর) অসীম পালের নেতৃত্বে ভূমি সংস্কার দপ্তরের আধিকারিকরা বিষয়টির তদন্ত শুরু করে একটি রিপোর্ট তৈরি করেন। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে ওই জমি ‘ভেস্ট ল্যান্ড’ ঘোষণা করে সরকারি খাতে রেকর্ড করার নির্দেশ দেন জেলাশাসক।


    জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৭৮ সালে তৎকালীন বাম সরকার ভূমি সংস্কার আইন বলে ওই এলাকার জমি সরকারি ভেস্ট ল্যান্ড বলে চিহ্নিত করে। এর প্রেক্ষিতে মামলাও হয়। তবে সেই মামলা ১৯৯১-৯২ সাল নাগাদ নিষ্পত্তি হলে তা সরকারি জমি হিসেবে নথিভুক্ত হয়। কিন্তু, তাৎপর্যপূর্ণভাবে সংশ্লিষ্ট জমির ‘রেকর্ড আপডেট’ করা হয়নি। তার মধ্যেই স্থানীয় আদিবাসী কৃষকদের পাট্টা দেওয়া হয়। তবে রেকর্ড আপডেট না হওয়ার ফলে পাট্টাদারদের নাম নথিভুক্ত হয়নি। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ওই বেসরকারি আবাসন সংস্থা বিস্তীর্ণ জমি স্বল্প মূল্যে কিনে নেয় বলে অভিযোগ। কিন্তু তদন্তের পর সেই রেকর্ড আপডেট করে বর্তমান জেলা প্রশাসন। এরপর  শনিবার ওই সময়ে যারা পাট্টা পেয়েছিলেন, অর্থাৎ ৩৫ জন জমিহারাকে সংশ্লিষ্ট ১১.৪১ একর জমি ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। এমনকী তারা যে পাট্টাদার সেই বিষয়টিও রেকর্ডে উল্লেখ করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক বিধান রায়। তিনি বলেন, ‘খুব শীঘ্রই জমিহারাদের হাতে সরকারি কাগজপত্র তুলে দেওয়া হবে। পাশাপাশি আবাসনের বর্তমান অবস্থা প্রসঙ্গে রাজ্য সরকারকে জানানো হবে। সেখান থেকে যা নির্দেশ দেওয়া হবে সেই মোতাবেক আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।’ 
  • Link to this news (বর্তমান)