পিএইচডিতে বাধা নেই মাওবাদী নেতা অর্ণবের, কাল কাউন্সেলিং, হুগলির সংশোধনাগার থেকে আনা হচ্ছে বর্ধমানে
বর্তমান | ১৪ জুলাই ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: সাজাপ্রাপ্ত মাওবাদী নেতা অর্ণব দামের পিএইচডি করতে আর বাধা থাকল না। সোমবার বিকেল ৩টে ৩০মিনিট থেকে ইতিহাস বিভাগের কাউন্সেলিং শুরু হচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ওইদিনই অর্ণব পিএইচডি বিভাগে ভর্তি হবেন। ওইদিন বেলা ৩টের মধ্যে পুলিসি নিরপত্তায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজির থাকবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক বলেন, রাজ্য সরকার অর্ণবের পিএইচডির পক্ষে সওয়াল করেছে। নিরাপত্তার দায়িত্ব তাদেরই। তাই ভর্তি নিয়ে আর কোনও জটিলতা থাকছে না। ইন্টারভিউয়ে অর্ণব প্রথম হয়েছেন। ওইদিন তিনি প্রথমেই সুযোগ পেতে পারেন।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গৌতম চন্দ্র শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, তাঁকে ছাত্র হিসেবেই দেখি। তবে ইন্টারনেটে নথি দেখে পিএইচডি করা যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁকে আসতে হবে। জেল কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করলে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তিনি আরও বলেন, ছাত্রদের বিষয়ে আমি যথেষ্টই আন্তরিক। সেই কারণেই পুরো ইতিহাস বিভাগের কাউন্সেলিং বন্ধ করেছিলাম। সদিচ্ছা না থাকলে তাঁকে বাদ দিয়েই ভর্তি করতাম। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রধান সৈয়দ তানভীর নাসরিন বলেন, ও ছাত্র হিসেবে অত্যন্ত মেধাবী। সমাজের মূল স্রোতে ফিরছেন। এটা বড় উদ্যোগ।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অর্ণবের ভর্তি নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই জটিলতা তৈরি হয়েছিল। কর্তৃপক্ষের একপক্ষের দাবি, তাঁর অতীত ইতিহাস হিংসাত্মক। তাঁকে ভর্তি করানোর ক্ষেত্রে নানা ঝুঁকি রয়েছে। ক্লাস চলাকালীন হামলা হলে তার দায় কে নেবে তা নিয়েও অনেকেই প্রশ্ন তোলেন। অন্য পক্ষ অবশ্য তাঁর অতীত ইতিহাস নিয়ে ভাবতে চাননি। তাঁদের দাবি, তিনি পিএইচডি করলে সমাজে নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি হবে। রাজ্য সরকার তাঁকে উচ্চশিক্ষার জন্য সহযোগিতা করেছে। সেকারণেই তিনি ইন্টারভিউ বোর্ড পর্যন্ত আসতে পেরেছেন। আর এক আধিকারিক বলেন, ওর সাজা কমছে না। শুধু পিএইচডি করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। কারাগার এখন সংশোধনাগার। অভিযুক্তদের বিভিন্নভাবে সংশোধনের চেষ্টা করা হয়। সেক্ষেত্রে অর্ণব পিএইচডি করে মূলস্রোতে ফিরলে অসুবিধা কোথায়? তাঁকে জেলেই থাকতে হবে। শুধু ক্লাস চলাকালীন তিনি পুলিসের নিরপত্তায় বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজির থাকবেন।
প্রশাসন সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, প্রাক্তন ওই মাওবাদী নেতা হুগলি সংশোধনাগারে বন্দি রয়েছেন। সেখান থেকেই তিনি পিএইচডির আবেদন করেন। পিএইচডি করার জন্য তাঁকে হুগলি থেকে বর্ধমান সংশোধনাগারে পাঠানো হচ্ছে। মাওবাদী নেতা এখন পড়াশোনায় আগ্রহ দেখালেও একসময় তিনি একে ৪৭ হাতে তিনি জঙ্গলমহল দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। অর্ণব প্রথম সারির মাওবাদী নেতা ছিলেন। মাওবাদীদের হাতে একসময় অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন। সেই পরিবারগুলির অবশ্য অর্ণবকে সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখতে নারাজ। অর্ণবকে কোনও বাড়তি সুযোগ দেওয়া হোক, তা চাইছেন না তাঁরা।