• পানা ও বাসরার আগ্রাসনে বিপন্ন কালচিনির সেন্ট্রাল ডুয়ার্স চা বাগান
    বর্তমান | ১৪ জুলাই ২০২৪
  • সংবাদদাতা, আলিপুরদুয়ার: পানা ও বাসরা নদীর আগ্রাসনে আলিপুরদুয়ার জেলার চা শিল্পের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে কালচিনির সেন্ট্রাল ডুয়ার্স বাগান। সঙ্গে দোসর হয়েছে কালীঝোরার ভাঙনও। গতবছর বর্ষা থেকেই সেন্ট্রাল ডুয়ার্স চা বাগানে পানা, বাসরা ও কালীঝোরার ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। গতবছর ভাঙনে বাগানের ৩০ একর জমি নদী ও ঝোরার গর্ভে তলিয়ে গিয়েছে। এবারের বর্ষাতে ইতিমধ্যেই আরও ১০ একর জমি নদীগর্ভে চলে গিয়েছে। 


    জেলার বৃহত্তম বাগানগুলির মধ্যে সেন্ট্রাল ডুয়ার্স অন্যতম। বাগানে শ্রমিক সংখ্যা ২১০০। নদী ও ঝোরার এই ভাঙনে একর প্রতি ছয় হাজার চা গাছও নষ্ট হয়েছে। এবছর বাগানের ১২টি শ্রমিক আবাসও বাসরার গর্ভে তলিয়ে গিয়েছে। ১২টি শ্রমিক পরিবারকে বাগান কর্তৃপক্ষ বাগানেরই অন্য লাইনে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে। বাসরা গিলে খাওয়ার উপক্রম করেছে বাগানের নিজস্ব পানীয় জলের রিজার্ভারটিকেও। যদিও সেচদপ্তর রিজার্ভারটিকে বাঁচাতে বাসরায় একটি ছোট বাঁধ দিয়েছে। কিন্তু ওই পর্যন্তই। ঝোরা ও দুই নদীতে বাঁধের জন্য বাগান কর্তৃপক্ষ জেলাপ্রশাসনের আধিকারিকদের পাশাপাশি সেচদপ্তরের কাছে একাধিকবার চিঠি দিয়েছে। অভিযোগ, কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এবছর বর্ষা শুরু হতেই ব্লক সদর কালচিনি থেকে সেন্ট্রাল ডুয়ার্স চা বাগানটি কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। কালচিনি থেকে ১৬ কিমি দূরে আছে বাগানটি। লাগাতার বৃষ্টি ও নদী ঝোরার তাণ্ডবে ওই চা বাগান যাওয়ার রাস্তাও ভেঙে গিয়েছে। 


    বাগান ম্যানেজার শান্তনু বসু বলেন, নদী ও ঝোরার ভাঙনে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। বাসরা, পানা ও ঝোরাতে বাঁধের জন্য জেলা প্রশাসন, জেলাপরিষদ ও সেচদপ্তরে একাধিকবার চিঠি দিয়েছি। কিন্তু কোনও কাজই হচ্ছে না। প্রশাসন আমাদের অসহায়তার কথা না বুঝলে সেন্ট্রাল ডুয়ার্স আগামীদিনে চা শিল্পের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে। সেন্ট্রাল ডুয়ার্স কোনও চা মালিক সংগঠনের সদস্য নয়। সদস্য না হলেও টি অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার (টাই) উত্তরবঙ্গের ম্যানেজার চিন্ময় ধর নিজেই বাগানটিকে নদীর তাণ্ডব থেকে বাঁচাতে জেলাপ্রশাসনের কাছে তদ্বির করেন। চিন্ময়বাবু বলেন, একটি সফল চা বাগান নদীগর্ভে হারিয়ে যেতে পারে না।  জেলাপ্রশাসন ও সেচদপ্তরের উচিত বাঁধ দিয়ে সেন্ট্রাল ডুয়ার্স বাগানটিকে রক্ষা করা। 


    জেলা পরিষদের সভাধিপতি স্নিগ্ধা শৈব বলেন, সেন্ট্রাল ডুয়ার্সের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। আমি নিজেই বিষয়টি জেলাশাসককে জানিয়েছি। দেখা যাক কী হয়। বাগানটির পাশে বাসরায় প্রায় ২৫০ মিটার ভাঙন হয়েছে। কালীঝোরাতেও ভাঙন হয়েছে প্রায় ২৫০ মিটারের মতো। সেচদপ্তরের আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার অমরেশকুমার সিং বলেন, সেন্ট্রাল ডুয়ার্সের পাশে বাসরা ও একটি ঝোরার ভাঙন খতিয়ে দেখা হচ্ছে।  নদীর ভাঙনে তলিয়ে যেতে বসেছে সেন্ট্রাল ডুয়ার্স চা বাগান।
  • Link to this news (বর্তমান)