নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ‘মমতা ঝড়’ অব্যাহত বাংলায়! এবার চার বিধানসভা কেন্দ্রের উপ নির্বাচনেও। যে ব্যবধানে জিতে আসনগুলি গেরুয়া শিবিরের কাছ থেকে কেড়ে এনেছে তৃণমূল, তাকে ‘টর্নেডো’ বলতেও পিছপা হচ্ছে না রাজনৈতিক শিবির। মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষের সামনে নাগরিকত্বের ‘গাজর ঝুলিয়ে’ ঔদ্ধত্য আর অহংয়ের ‘গড়’ বানিয়েছিল বিজেপি। তাতে ফাটল ধরিয়েছে রাজ্যের শাসকদল। ছিনিয়ে এনেছে বাগদা এবং রানাঘাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্র। জয়ী হয়েছেন মধুপর্ণা ঠাকুর ও মুকুটমণি অধিকারী। একইভাবে কৃষ্ণ কল্যাণীর হাত ধরে প্রথমবার ‘জোড়াফুল’ ফুটেছে উত্তরবঙ্গের রায়গঞ্জ আসনে। বড়সড় ব্যবধানে জিতেছেন মমতার প্রার্থী। দলের খাসতালুক বলে পরিচিত মানিকতলা কেন্দ্রে সদ্যসমাপ্ত লোকসভা ভোটের ব্যবধান নিয়ে বিস্তর সংশয় তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সব আশঙ্কা উড়ে গিয়েছে উপ নির্বাচনে। জয়ের মার্জিনে রেকর্ড গড়েছেন তৃণমূল প্রার্থী সুপ্তি পান্ডে। পরাজয়ের ‘হ্যাটট্রিক’ বিজেপির কল্যাণ চৌবের। দলের এই জয়ে উচ্ছ্বসিত তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘বঞ্চনা আর বৈষম্যের ধারাবাহিক জবাব দিচ্ছেন বাংলার মানুষ। বাংলা বিদ্বেষীদের বিরুদ্ধে মানুষ এবারও গর্জে উঠলেন, প্রত্যাখ্যান করলেন তাদের। মা-মাটি-মানুষকে ধন্যবাদ। ধন্যবাদ মতুয়া ভাই-বোনদেরও। বিজেপির মিথ্যা প্রতিশ্রুতির উপযুক্ত জবাব দিয়েছেন তাঁরা। এই জয় মানুষের জন্য উন্নয়নের কাজকে আরও গতি দেবে।’
গত লোকসভা নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়ের ‘ক্ষত’ গেরুয়া শিবিরে এখনও দগদগে। পদ্মপার্টির দখলে থাকা তিন আসনে বিজয় কেতন উড়িয়ে, সেই ক্ষত ‘দুরারোগ্য’ করে দিয়েছে তৃণমূল। শুধু তা-ই নয়, উপ নির্বাচন পর্বে গোটা দেশেই পর্যদুস্ত নরেন্দ্র মোদির দল। যদিও বাংলার সাধারণ মানুষের এই রায়কে ‘প্রহসন’ বলেই দাবি বঙ্গ বিজেপির। অন্যদিকে ৪-০ ফলাফলের পরও রাজভবনের ভূমিকা নিয়ে ‘আশঙ্কা’য় রয়েছে রাজ্যের শাসকদল। বরানগর ও ভগবানগোলার মতো এবারেও শপথগ্রহণের আগে যেন নতুন কোনও ‘প্রতিবন্ধকতা’ তৈরি না করা হয়!
উপ নির্বাচনে ‘ল্যান্ডস্লাইড ভিকট্রি’র পর রাজ্য বিধানসভায় তৃণমূলের প্রতীকে নির্বাচিত সদস্যের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২১৫। বিরোধী দলনেতার ‘লস্কর’ সংখ্যা কমে এখন ৬৬। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, যত বাংলাকে আর্থিক প্রতিবন্ধকতায় ফেলে, এজেন্সি নামিয়ে ‘বাজিমাত’ করার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে পদ্মপার্টি, ততই তাদের পায়ের নীচে মাটি সরে যাচ্ছে। ‘অধীর চৌধুরী’র কংগ্রেস আর ‘মহম্মদ সেলিমে’ র সিপিএম উপ নির্বাচনে জোট বেঁধে লড়াই করলেও, চারটি আসনের একটিতেও ‘জামানত’ বাঁচাতে পারেনি। তবে পরিষদীয় রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েও ফেসবুক-এক্স দুনিয়ায় ভেসে থাকার মরিয়া চেষ্টা এদিনও চালিয়েছিল বাম-কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকরা।
বাগদা, রানাঘাট দক্ষিণ এবং রায়গঞ্জ— মাত্র দেড়মাস আগের লোকসভা ভোটের নিরিখেও বিজেপির দখলে থাকা এই তিন আসনে বিরাট ব্যবধানে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। কোথাও প্রায় ২২ হাজার, কোথাও প্রায় ৩৭ হাজার আবার কোথাও ৪৭ হাজার ভোটে। কার্যত শূন্য থেকে শুরু হয়েছিল উপ নির্বাচনের প্রচার। সঠিক নেতৃত্বের কাঁধে নির্বাচনের ভার, দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা, প্রার্থী বাছাইয়ের মতো সঠিক পদক্ষেপগুলিই তৃণমূলকে ‘বহু কাঙ্খিত’ জয় এনে দিয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবির। অবশ্যই তাতে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছে, লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির বিপর্যয়ের কাহিনি!