• মধুপর্ণার হাত ধরে ১৩ বছর পর জয় তৃণমূলের, বাগদার ‘ঘরের মেয়ে’ হয়ে থাকতে চাই, জয়ের পর আশ্বাস ‘সর্বকনিষ্ঠ’ বিধায়কের
    বর্তমান | ১৪ জুলাই ২০২৪
  • শ্যামলেন্দু গোস্বামী, বারাসত: ইতিহাস গড়ল বাগদা! সেখান থেকে বিধানসভায় গেলেন সর্বকনিষ্ঠ বিধায়ক মধুপর্ণা ঠাকুরকে, যাঁর বয়স সাকুল্যে ২৫ বছর ১ মাস ১৩ দিন! গুরুদায়িত্ব পেয়েই বাগদার ‘ঘরের মেয়ে’ হয়ে উঠতে কর্ম-পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন মধুপর্ণা। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাগদায় তিনি বিধায়ক কার্যালয় খুলবেন। সেখান থেকে পরিচালিত হবে মতুয়াগড় এবং ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বাগদার উন্নয়ন। বাগদার উপ নির্বাচন এবার গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল বিভিন্ন কারণে। সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে এই বিধানসভায় এগিয়ে থেকেই বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রে জয় পায় বিজেপি। সেই জায়গায় মাত্র একমাসের মধ্যে বাগদায় তৃণমূলের জয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। সেই সঙ্গে তাদের দাবি, মতুয়া সমাজের একটা বড় অংশ যে এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা তৃণমূলেই ভরসা পাচ্ছে, তা এই ফলাফলে স্পষ্ট হয়ে গেল। এদিন সন্ধ্যায় প্রায় তিন মাস বন্ধ থাকা বড়মার ঘরে তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকলেন রাজ্যসভার সাংসদ মমতা ঠাকুর ও সদ্য নির্বাচিত বিধায়ক মধুপর্ণা ঠাকুর।  


    বাম জমানায় এই বিধানসভা ছিল ফরওয়ার্ড ব্লকের দখলে। ২০১১ সালে ‘পরিবর্তনের ভোটে’ ২২ হাজার ৮৭৩ ভোটে এই কেন্দ্রে জয়ী হন তৃণমূলের উপেন বিশ্বাস। কিন্তু ২০১৬ সালে ১২ হাজার ২৩৬ ভোটে এখান থেকে জেতেন বাম-কং জোটপ্রার্থী দুলাল বর। ২০২১ সালেও তৃণমূল এই কেন্দ্র পুনরুদ্ধার করতে পারেনি। বিজেপির টিকিটে জেতেন বিশ্বজিৎ দাস। তিনি পরে তৃণমূলে যোগ দেন। ২০১৯ ও ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনেও এখানকার সিংহভাগ ভোটারের সমর্থন বিজেপির দিকেই ছিল। এবার বাগদা পুনরুদ্ধার করতে মতুয়াদের ঠাকুরবাড়ির প্রতিনিধি মধুপর্ণা ঠাকুরকে প্রার্থী করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বড়মা বীণাপাণি দেবীর বড় ছেলে কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর। তাঁর এবং তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ মমতা ঠাকুরের মেয়ে মধুপর্ণা সেভাবে সক্রিয় রাজনীতিতে ছিলেন না। কয়েকমাস আগে বড়মার ঘরে বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের দলবল তালা ঝোলালে প্রতিবাদে অনশনে বসেন মধুপর্ণা। তাঁকেই প্রার্থী করে ১৩ বছর আগে হাতছাড়া হওয়া বাগদা ফিরে পেল তৃণমূল। রাজনৈতিক মহলের অভিজ্ঞরা জানাচ্ছেন, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশংকর রায়ের সময় সর্বকনিষ্ঠ বিধায়ক ছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়।  ২৬ বছর বয়সে ওড়িশায় বিজেপির বিধায়ক হয়েছেন উপাসনা মহাপাত্র। বলা বাহুল্য, মধুপর্ণা তাঁদের থেকেও কম বয়সে বিধানসভায় যাওয়ার সুযোগ পেলেন। শুধু বাংলা নয়, গোটা দেশেই তিনি সবচেয়ে কমবয়সি বিধায়ক বলে দাবি তৃণমূলের। মধুপর্ণা এদিন বলেন, ‘আমি বাগদার ঘরের মেয়ে হয়ে উঠতে চাই। এটাই আমার মূল লক্ষ্য। এলাকার মানুষের কথা মেনেই উন্নয়ন করব। বিজেপি যে উন্নয়ন-বিরোধী, তা আবার প্রমাণ করল মানুষ।’ বিজেপি নেতারা বাগদায় ভোটপ্রচারে এসে নাগরিকত্ব নিয়ে গালভরা নানা ভাষণ দিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু লোকসভায় তারা বনগাঁ ধরে রাখতে পারলেও বাগদার ফলাফল বুঝিয়ে দিল, মতুয়া ও নমঃশূদ্রদের মধ্যে তৃণমূলের জনপ্রিয়তা ও সমর্থন ক্রমবর্ধমান। বিজেপি প্রার্থী বিনয় বিশ্বাসের অবশ্য দাবি, ‘এই জয় তৃণমূলের ছাপ্পার ফল। মানুষের ভোটে তৃণমূল জেতেনি।’
  • Link to this news (বর্তমান)