• জনস্বার্থ মামলার পর রস্টার বদলে আলোচনা হাইকোর্টে
    এই সময় | ১৪ জুলাই ২০২৪
  • এই সময়: কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতিদের রোস্টার আংশিক বদল হয়েছে শুক্রবারই। পুলিশের বিরুদ্ধে অতি সক্রিয়তা বা নিষ্ক্রিয়তা সংক্রান্ত মামলাগুলির এতদিন শুনানি হচ্ছিল বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে। নতুন রোস্টারে এই ধরনের মামলাগুলিকে দুটি ভাগে ভাগ করে শুনানির কথা বলা হয়েছে।এরমধ্যে ২০১৮ থেকে ২০২১-এর দায়ের হওয়া মামলাগুলির শুনানি করবেন বিচারপতি সিনহা। তার পরের মামলা শুনবেন বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ। হাইকোর্ট সূত্রে বলা হয়েছে, পুলিশের অতি সক্রিয়তা বা নিষ্ক্রিয়তা সংক্রান্ত মামলার চাপ বেড়ে যাওয়ায় এই এজলাস বদলের সিদ্ধান্ত।

    আবার আইনজ্ঞদের একাংশ এই বদলের আগে একটি প্রেক্ষিত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন। তাঁদের বক্তব্য, বিচারপতি সিনহার এজলাসে পুলিশের অতি সক্রিয়তা বা নিষ্ক্রিয়তা সংক্রান্ত মামলার শুনানির রোস্টার তৈরি হয়েছিল ২৫ মে। হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের দায়ের করা বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী বিচারপতিদের নতুন রোস্টার কার্যকর হয় গত ১০ জুন থেকে।

    ওই রোস্টার সামনে আসার পরেই কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। সেখানে বিচারপতি সিনহার স্বামী, আইনজীবী প্রতাপ চন্দ্র দে-র বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া একটি অভিযোগের প্রসঙ্গ তুলে পুলিশ সংক্রান্ত মামলাগুলির শুনানি যেন নিরপেক্ষ ভাবে হয়, তা নিশ্চিত করার আর্জি জানানো হয়। হাইকোর্ট সূত্রের খবর, প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে সেই মামলাটির শুনানি হওয়ার কথা ছিল আগামী সপ্তাহেই।

    তার আগে বিচারপতিদের রোস্টার বদলের এই পদক্ষেপকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন আইনজ্ঞদের একাংশ। বিধাননগর কমিশনারেট এলাকায় একটি সম্পত্তি সংক্রান্ত মামলায় আইনজীবী প্রতাপচন্দ্র দের বিরুদ্ধে একটি পক্ষের হয়ে তদন্তে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ ওঠে। সেক্ষেত্রে বিচারপতির অফিসকেও ব্যবহারের অভিযোগ তোলা হয়।

    এনিয়ে মামলা দায়ের হয় সুপ্রিম কোর্টে। রাজ্য সিআইডি শীর্ষ আদালতের নির্দেশে এই অভিযোগের তদন্ত করে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে আইনজীবী প্রতাপচন্দ্রকে। এই ঘটনার পরম্পরা তুলে ধরে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলায় আবেদন করা হয়েছে, যেখানে বিচারপতির স্বামীর বিরুদ্ধে পুলিশের তদন্তে প্রভাব খাটানোর মতো গুরুতর অভিযোগ তোলা হয়েছে, সেক্ষেত্রে যাতে হাইকোর্টে পুলিশি অতি সক্রিয়তা বা নিষ্ক্রিয়তা সংক্রান্ত মামলাগুলির নিরপেক্ষ শুনানি হয়, তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

    আবেদনে এও বলা হয়েছে, যদি বিচারপতি সিনহার এজলাস থেকে পুলিশি অতি সক্রিয়তা বা নিষ্ক্রিয়তা সংক্রান্ত মামলাগুলি না সরানো হয়, তাহলে যে কোনও বিচারপ্রার্থীর মনে হতে পারে যে, এই এজলাসে মামলাগুলি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ ভাবে শোনা হচ্ছে না। যে কোনও বিচারক বা বিচারপতির এই ধরনের বিতর্কের উর্ধ্বে থাকা উচিত।

    মামলাকারীর আরও বক্তব্য, এটা কোনও দূরবর্তী সম্ভাবনা নয়, বরং তিনি যে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, তা বাস্তব তথ্যের উপর ভিত্তি করে। এই পরিস্থিতিতে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের বিজ্ঞপ্তির বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া জনস্বার্থ মামলার শুনানির আগে ফের বিচারপতিদের রোস্টার বদলের সঙ্গে কোনও যোগসূত্র রয়েছে কী না, সেই জল্পনা চলছে আইনজ্ঞ মহলে।

    যদিও হাইকোর্ট প্রশাসনের একটি সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, একজন বিচারপতি অবসর গ্রহণের পরে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতির দায়িত্ব সামলাবেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। যিনি এতদিন প্রাথমিক শিক্ষা সংক্রান্ত মামলাগুলির শুনানি করতেন। তিনি ডিভিশন বেঞ্চে যাওয়ায় ওই মামলাগুলি বিচারপতি সিনহার এজলাসে পাঠানো হচ্ছে।

    এই পরিস্থিতিতে পুলিশের অতি সক্রিয়তা বা নিষ্ক্রিয়তা সংক্রান্ত মামলার চাপ বেড়ে যাওয়ায় এগুলিকে দুটি ভাগে ভাগ করে দুটি পৃথক এজলাসে পাঠানো হয়েছে।
  • Link to this news (এই সময়)