সর্বত্রই জব্দ হলো জামানত! কংগ্রেস, বাম ক্রমে নিশ্চিহ্ন?
এই সময় | ১৪ জুলাই ২০২৪
এই সময়: তৃণমূল বনাম বিজেপির সরাসরি যুদ্ধে বাম-কংগ্রেস ক্রমেই লড়াইয়ের ময়দান থেকে উবে যাচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন তুলে দিল চার বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ফলাফল। চার আসনের মধ্যে মানিকতলা, রানাঘাট দক্ষিণ ও রায়গঞ্জে কংগ্রেস-সিপিএমের জোট হয়েছিল। বাগদায় ফরোয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী থাকায় সেখানে বাম ও কংগ্রেস পৃথক প্রার্থী দেয়।কিন্তু শনিবার চার কেন্দ্রের ফলাফল বলে দিচ্ছে বাম ও কংগ্রেস কোনও কেন্দ্রেই লড়াইয়ের জায়গায় নেই। সব জায়গায় বাম-কংগ্রেস প্রার্থীদের জামানত গিয়েছে। বাগদা বিধানসভায় কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোট মাত্র ০.৬৬ শতাংশ। দেশের শতাব্দী প্রাচীন দল এক শতাংশও ভোট পায়নি মতুয়া বলয়ের এই বিধানসভায়। যদিও রায়গঞ্জে কংগ্রেস প্রার্থী মোহিত সেনগুপ্ত ১৫.৫০ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।
বাম-কংগ্রেস প্রার্থীদের মধ্যেই প্রবীণ মোহিত-ই সর্বাধিক ভোট পেয়েছেন। কিন্তু তিনিও জোটের পক্ষে চাকা ঘোরাতে পারেননি। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও রায়গঞ্জে প্রচারে গিয়ে হাত চিহ্নকে চাঙ্গা করতে পারেননি। যদিও মোহিতের বক্তব্য, 'তৃণমূলের এই জয়, বিক্রি হয়ে যাওয়া, শাসকের দলদাসে পরিণত হওয়া জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের জয়। এই জয় মানুষের ভোট দেবার অধিকারকে হরণ করে বুথ দখলের জয়, ছাপ্পার জয়।'
যদিও রায়গঞ্জে ছাপ্পার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন জয়ী জোড়াফুল প্রার্থী কৃষ্ণ কল্যাণী। লোকসভা নির্বাচনের ট্রেন্ড বজায় রেখে সিপিএম মানিকতলা, রানাঘাট দক্ষিণে নবীন মুখকে প্রার্থী করেছিল। সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এই দুই প্রার্থীর হয়ে প্রচারও করেছেন। যদিও মানিকতলায় সিপিএমের প্রাপ্ত ভোট মাত্র ৮ শতাংশ।
অন্যদিকে, রানাঘাট দক্ষিণে প্রাপ্ত ভোট প্রায় সাড়ে ছয় শতাংশ। অথচ ২০১৬ সালে রানাঘাট দক্ষিণ বিধানসভায় সিপিএম প্রার্থী রমা বিশ্বাস জয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু ২০২১ সালে বামেদের ভোট একেবারে ৬ শতাংশে নেমে যায়। উপনির্বাচনেও সেই ছয় শতাংশের গন্ডিতে আটকে রয়েছে সিপিএম। বাম শরিক ফরোয়ার্ড ব্লকের অবস্থা আরও খারাপ। বাগদায় ফরোয়ার্ড ব্লক পেয়েছে মাত্র ৪ শতাংশ ভোট।
বামেরা যে দুই ফুলের বাইনারি কিছুতেই ভাঙতে পারছে না, তা অস্বীকার করছেন না সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, 'রাতারাতি এই বাইনারি তৈরি হয়নি। তাই সময় লাগবে এটা ভাঙতে। জাতীয় স্তরে বিজেপি ক্রমেই পিছু হঠছে, এখানেও তৃণমূল ও বিজেপি পিছু হঠবে।'
উপনির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হতেই সামাজিক মাধ্যমে একাধিক বাম মনোভাবাপন্ন পেজে এই রেজাল্ট নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। একদলের যুক্তি, কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে কী লাভ হচ্ছে? বামফ্রন্টগত ভাবেই লড়াই প্রয়োজন। অন্য একদলের বক্তব্য, সিপিএমের মধ্যে সংগঠক হওয়ার বদলে নেতা হওয়ার প্রবণতা বেড়ে গিয়েছে। কিছু উৎসাহী আবার নেতৃত্বের পদত্যাগও দাবি করেছেন।