শ্রীকান্ত ঠাকুর: দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন এক পোড়ো বাড়ি। ভিতরে ঢুকলে দেখা যাবে, উঠোনজুড়ে পা-ডোবা জল, কোথাও-বা তা হাঁটুর কাছাকাছিও পৌঁছে গিয়েছে। এই জমা জল পেরিয়েই যেতে হচ্ছে ক্লাস রুম থেকে অফিস রুম। এ ছবি দক্ষিণ দিনাজপুর ইউনিভার্সিটির।
এমনই অস্বাস্থ্যকর স্যাঁতসেঁতে ঘরে চলছে দক্ষিণ দিনাজপুর ইউনিভার্সিটির নিত্যনৈমিত্তিক পঠন-পাঠন। এই পরিবেশ যে মোটেই পঠনপাঠনের উপযুক্ত নয়, তা স্বীকার করে নিচ্ছেন উপাচার্য নিজেই। তবুও ভবঘুরে তকমা জুটে যাওয়া দক্ষিণ দিনাজপুর ইউনিভার্সিটিকে স্থায়ী ঠিকানা দেওয়ার জন্য বালুরঘাট বিএড কলেজের পরিত্যক্ত হস্টেলে, এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই এখন ইউনিভার্সিটির পঠন-পাঠন থেকে শুরু করে যাবতীয় অফিসিয়াল কাজকর্ম হচ্ছে।
এখনও পর্যন্ত স্থায়ী কোনও ঠিকানা তৈরি হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের। কখনও ভাড়া বাড়িতে, কখনও কলেজের কোনও ঘরে ক্লাস হয়েছে। পরে কোনও এক অজানা কারণে সেই কলেজ থেকেও সরে যেতে হয়েছে। শেষে বালুরঘাট বিএড কলেজের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে এর পরিত্যক্ত হস্টেলে এসে আশ্রয় নিয়েছে সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয়। অবশ্য বালুরঘাট পুরসভা তাদের এক ভবনে ইউনিভার্সিটিকে স্থান দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল। সেই মতো চুক্তিও হয়। কিন্তু ঠিক সময়ে ঘর হ্যান্ডওভার করতে না পারায় সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থানান্তর হয়নি। এর পরে বাধ্য হয়েই বিশ্ববিদ্যালয়কে চলে আসতে হয় এই হস্টেলে। অন্য দিকে, পুরসভার দাবি, তারা তাদের প্রস্তাবিত ঘর তৈরি করে রেখেছে এবং যেদিন ইচ্ছা ইউনিভার্সিটি সেই ঘরে চলে আসতে পারে। তবে উপাচার্য বলেন, বারবার স্থান পরিবর্তনে ইউনিভার্সিটির ভাবমূর্তি যেমন ক্ষুন্ন হচ্ছে, তেমনই খরচও হচ্ছে। এর একমাত্র সমাধান কোনও স্থায়ী ঠিকানা।
২০২০ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণামতো পথচলা শুরু দক্ষিণ দিনাজপুর ইউনিভার্সিটির। ২০২১ সালের অক্টোবর মাস থেকে ক্লাস চালু হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞান অঙ্ক এবং ইংরেজির কোর্স চালু করে দক্ষিণ দিনাজপুর ইউনিভার্সিটি। প্রথম থেকেই নতুন এই ইউনিভার্সিটির কোনও স্থায়ী ভবন নেই। বর্তমানে দ্বিতীয় ও চতুর্থ সেমেস্টারের ক্লাস চলছে, মোট ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৯৪। সব থেকে বেশি ছাত্রছাত্রী রয়েছেন ইংরেজি বিভাগে। সেখানে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা দুটি সেমেস্টারে ৫৬। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে রয়েছেন ২৯ জন ছাত্রছাত্রী, অঙ্কে ৯ জন। কখনো ভাড়া বাড়িতে, অফিস, বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের ঘরে ক্লাস করা হলেও তা খুব একটা সুবিধাজনক হয়নি।
পুরসভার চেয়ারম্যান অশোক মিত্র বলেছেন, আমরা আমাদের বিল্ডিংয়ের কাজ শেষ করেছি। ৬টি ঘর রেডি। মাসে আমরা সামান্য টাকা ভাড়া চেয়েছি যা আগের ভাড়াবাড়ির ভাড়া থেকে অনেক কম। আমরা চিঠি দিয়েছি। সামনের মিটিংয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।