চঞ্চল প্রধান,হলদিয়া: জলপথে পণ্য পরিবহণের সুযোগ আরও বেশি কাজে লাগাতে উদ্যোগী ভারত-বাংলাদেশ। টানা চার দিন দুদেশের জাহাজ মন্ত্রকের উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় নিজেদের পরিকাঠামো এবং প্রযুক্তিগত সুযোগ-সুবিধার কথা উঠে এসেছে। সময় বাঁচানো, তার থেকে বড় বিষয় খরচ বাঁচানোর প্রশ্নে ভারত বাংলাদেশ জলপথ ব্যবহার দুদেশের বাণিজ্যিক সাফল্য ঘটাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এতদিন শ্রীলঙ্কার কলম্বো হয়ে ভারতে ঢুকতো বাংলাদেশের জাহাজ। দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে পণ্য পরিবহনের সময় খরচ হত যথেষ্ট। ঘুরপথে এমন ব্যবসা বন্ধ করে বাংলাদেশ সরাসরি ভারতে পণ্য পরিবহণের নতুন জলপথ ব্যবহারে উদ্যোগী হয়েছে। সেই উদ্দেশ্যে ৯ থেকে ১২ জুলাই টানা চার দিন বাংলাদেশের জাহাজ মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব এসএম মুস্তাফা কামাল-সহ ১৩ সদস্যের দল কলকাতা এবং হলদিয়া বন্দরের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করলেন। কলকাতার শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় পোর্ট ট্রাস্টের চেয়ারম্যান রথেন্দ্র রামন, ডেপুটি চেয়ারম্যান সম্রাট রাহি, হলদিয়া কমপ্লেক্সের ডেপুটি চেয়ারম্যান অমল কুমার মেহেরা, জেনারেল ম্যানেজার প্রবীণ কুমার দাস উচ্চপদস্থ কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। কলকাতা এবং হলদিয়া বন্দরে মূলত পণ্য পরিবহণের পরিকাঠামোগত সুবিধার বিষয়টি প্রতিনিধিদের সামনে তুলে ধরা হয়। সুবিধা রয়েছে পিপিপি মডেলে পণ্য পরিবহণের।
কন্টেইনার বোঝাই পণ্য পরিবহণ, দ্রুত আমদানি রপ্তানির বিষয়টিতেও বাংলাদেশ প্রতিনিধিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। কলকাতা কিংবা হলদিয়া বন্দর থেকে জাহাজ এবং বার্জের মাধ্যমে সরাসরি বাংলাদেশের মঙ্গলা,নারায়ণগঞ্জ, আশুগঞ্জ, চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য আমদানি-রপ্তানি খুব সহজে করা সম্ভব। এতদিন বাংলাদেশে ফ্লাই অ্যাশ, সুতো, চাল হলদিয়া থেকে সরবরাহ করা হয়েছে। এবার সেই জায়গায় কন্টেইনার বোঝাই অন্যান্য পণ্য সরবরাহ করার সম্ভব হবে । পাশাপাশি বাংলাদেশের বিভিন্ন বন্দর থেকেও হলদিয়া ও কলকাতা বন্দরে পণ্য আনার সুবিধা হবে। চার দিনের আলোচনায় দুদেশের প্রতিনিধিরা নাইট নেভিগেশনের বিষয়টিতেও একমত হয়েছেন। হলদিয়া বন্দরের ডেপুটি চেয়ারম্যান অমল কুমার মেহেরা জানিয়েছেন,”হলদিয়া বন্দরে পরিবহনের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধার বিষয়টি বাংলাদেশ জাহাজ মন্ত্রকের প্রতিনিধিদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। ওরাও যথেষ্ট আগ্রহ দেখিয়েছেন। আমরা আশাবাদী ভবিষ্যতে হলদিয়া বন্দর মারফত বাংলাদেশ সরকার তাদের ব্যবসার প্রসার ঘটাবে। প্রচুর পণ্য পরিবাহিত হবে।”
বন্দরের জেনারেল ম্যানেজার প্রবীণ কুমার দাস জানিয়েছেন, “ভারত-বাংলাদেশ দুদেশের প্রতিনিধিদের আলোচনায় পণ্য পরিবহণে নতুন দিগন্ত খুলে যাবে বলে মনে করছি । খরচ বাঁচিয়ে কম সময়ের মধ্যে হলদিয়া থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন বন্দরে পণ্য পরিবহণ করা সুবিধা হবে। এমন সম্ভাবনা জোরালো হয়েছে।”এক মাস আগেই হলদিয়া বন্দর থেকে চিন পর্যন্ত সরাসরি পণ্য পরিবহণের রাস্তা খুলে দেওয়া হয়েছে। এবার সেই আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশ ভারতের হলদিয়া এবং কলকাতা বন্দরকে বাণিজ্যিক প্রসারে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। বস্ত্র ব্যবসার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের সুনাম রয়েছে। সেই সমস্ত নামিদামি ব্রান্ডের পোশাক-সহ বাংলাদেশের অন্যান্য পণ্য ভারতের বাজারে পাওয়া সহজ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।