সুদীপ্ত কুণ্ডু, রানাঘাট: প্রচারপর্বে যেন ভাবলেশহীন ভূমিকাতেই দেখা গিয়েছিল জেলা নেতৃত্বকে। রাজ্যের নেতারা জনসভার মঞ্চে ঝাঁঝ বাড়ানোর চেষ্টা করলেও নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিলেন রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্র জয়ের কারিগর জগন্নাথ সরকারকে। নেতৃত্বহীনতার কারণেই মাত্র ৩৯ দিনের ব্যবধানে প্রায় ৫০ হাজার ভোট হারাতে হয়েছে বিজেপিকে। রানাঘাট দক্ষিণ বিধানসভার উপনির্বাচনে পরাজয়ের পর অভিভাবকহীন হয়ে পড়াকেই দূষছেন পদ্মশিবিরের একাংশের কর্মীরা।
চলতি বছরের লোকসভা নির্বাচনে রানাঘাট কেন্দ্রে প্রায় ১ লক্ষ ৯৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয় বিজেপি। এই লোকসভা কেন্দ্রের রানাঘাট দক্ষিণ বিধানসভা থেকে ১ লক্ষ ২৩ হাজার ৫৬৮ ভোট পেয়েছিলেন জগন্নাথ সরকার। সেবারে তৃণমূলের মুকুটমণি অধিকারী পেয়েছিলেন ৮৬ হাজার ৬৩২ ভোট। অর্থাৎ, প্রায় ৩৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে এই বিধানসভায় এগিয়েছিল বিজেপি। তাই উপনির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার সময় থেকেই ব্যবধানের অঙ্ক ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে বলে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিল পদ্মশিবির। কিন্তু বাস্তবে হল কই? রানাঘাট দক্ষিণের উপনির্বাচনে ফলাফল ঘোষণা হতেই দেখা গেল বিজেপি প্রার্থী মনোজ কুমার বিশ্বাস ৭৪ হাজার ৪৮৫টি ভোট নিজের ঝুলিতে ভরতে পেরেছেন। দুই নির্বাচনের মধ্যে মাত্র ৩৯ দিনের ফারাক ছিল। এই স্বল্প সময়েই ৪৯ হাজার ৮৩টি ভোট হারিয়েছে বিজেপি। এই ভোট যে স্বাভাবিকভাবেই তৃণমূলমুখী হয়েছে, সেটা পদ্মশিবিরের অন্দরে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। ভোট হারানোর কারণ হিসেবে দলীয় নেতৃত্বের উদাসীনতাকেই দায়ী করেছেন বিজেপির নিচুতলার কর্মীরা।
পদ্মশিবিরের বুথস্তরের কর্মীদের একাংশের দাবি, প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে দলের ভেতরেই অনেকের মধ্যে সংশয় ছিল। রানাঘাট দক্ষিণের প্রার্থী হিসেবে কৃষ্ণনগরের মনোজকে অনেকেই প্রথম থেকে মেনে নিতে পারেননি। কিন্তু সমন্বয় তৈরি করার বদলে কার্যত হুইপ জারি করে বিদ্রোহী কর্মীদের মাঠে নামাতে বাধ্য করা হয়। তাঁরা প্রচারের ময়দানে নামলেও বিজেপি নেতৃত্ব সেভাবে উৎসাহ দেখায়নি। শনিবার উপনির্বাচনে পরাজয়ের পর দলীয় কর্মীদের অনেকেই বলেন, দলের সাংসদ জগন্নাথ সরকারকে সেভাবে প্রার্থীর সঙ্গে প্রচারে সামিল হতে দেখিনি। ভোটের আগের রাতে কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে ঢুকে তৃণমূল দেদার হুমকি, মারধর, সন্ত্রাস চালালেও ভোটের দিন আমাদের নেতৃত্ব পাশে ছিল না। ঢাল-তরোয়ালহীন নিধিরাম সর্দার হয়ে তাই একপ্রকার ময়দান ছেড়ে দিতে হয়েছিল কর্মীদের।
যদিও একথা মানতে নারাজ বিজেপি প্রার্থী মনোজ কুমার বিশ্বাস। তিনি বলেন, আমার নমিনেশনের দিন সাংসদ নিজে উপস্থিত ছিলেন। দলীয় নেতৃত্ব সবসময় পাশে থেকেছেন। তৃণমূল যে ধরনের সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে, আমরা তা করি না। ওদের ভোট লুটের কারণেই এমন ফলাফল হয়েছে। রাজনৈতিক মহল বলছে, লোকসভায় বিজেপির ভোট যে এবার তৃণমূলেই গিয়েছে, তা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট।
আরএসএসের অন্যতম প্রিয় পাত্র রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকার এবং সংঘ ঘনিষ্ঠ প্রার্থী মনোজ বিশ্বাসের মধ্যে শুরু থেকেই দ্বন্দ্বের চোরাস্রোত কাজ করছিল। জগন্নাথ শিবির যে প্রার্থীর হয়ে ঘাম ঝরায়নি, সেটাও প্রচারের ময়দানে অনেক ক্ষেত্রে সামনে চলে আসছিল। আর সহজেই তার ফায়দা নিতে পেরেছে তৃণমূল।