• ঘুমন্ত ভাইকে কুপিয়ে খুন রক্তাক্ত মা, গ্রেপ্তার দাদা
    বর্তমান | ১৫ জুলাই ২০২৪
  • সংবাদদাতা, শান্তিনিকেতন: সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের জেরে ঘুমন্ত ভাইকে কুপিয়ে খুন করল দাদা। পরের টার্গেট ছিল বাবা। পাশের ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন তিনি। মা জেগে ওঠায় বাবার ঘাড়ে আর অস্ত্রের কোপ বসাতে পারেনি বড় ছেলে। বাধা দিতে গিয়ে গুরুতর জখম হন মা। তাঁর আর্তচিৎকারে পাড়া-প্রতিবেশীরা জ঩ড়ো হয়ে যান। পুলিসও চলে আসে। হাতেনাতে ধরা পড়ে যায় গুণধর ছেলে। রবিবার ভোররাতে ঘটনাটি ঘটেছে নানুর থানার থুপসরা পঞ্চায়েতের গোয়ালপাড়া গ্রামে। মৃতের নাম যাদব ঘোষ (৩৮)। অভিযুক্ত দাদার নাম মানব ঘোষ। খুনে ব্যবহৃত অস্ত্রটি উদ্ধার করেছে পুলিস। 


    স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরেই মানব-যাদবের সম্পত্তি জনিত বিবাদ চলছিল। দুই ভাইয়ের মধ্যে বেশ কয়েকবার হাতাহাতিও হয়েছে। মাস কয়েক ধরে মানব প্রবল আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। সে নেশা করতে শুরু করে। মদ্যপ অবস্থায় বাড়িতে এসে অশান্তি ও মারামারি করত। সম্প্রতি তার শরীরে টিউমার ধরা পড়ে। বেঙ্গালুরুতে চিকিৎসা করায়। তারপর থেকেই কিছুটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল মানব। আগে দুই ভাইয়ের যৌথ সংসার ছিল। বাবা-মাকে নিয়ে একসঙ্গে থাকতেন। সংসার খরচের সিংহভাগই বহন করতেন যাদব। পরে দুই ভাই আলাদা হয়ে যায়। তবে বাড়ি ছিল একটাই।  স্ত্রী-ছেলেমেয়ে নিয়ে থাকত মানব। যাদব বাবা-মায়ের সঙ্গেই থাকতন। 


    সংসারে অভাব-অনটনের কারণে বাবা-মা ও ভাইয়ের সঙ্গে অশান্তি হতো প্রায়ই। জানা গিয়েছে, শনিবার রাতেও তাদের মধ্যে বচসা হয়। পরে সবাই যে যার মতো খাওয়া-দাওয়া করে ঘুমোতে চলে যায়। ভোর রাতে বাবা ও ভাইকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় মানব। ধারালো অস্ত্র নিয়ে ভাইয়ের ঘরে ঢোকে। যাদব তখন ঘোর ঘুমে আচ্ছন্ন। তাঁর মাথায় ও ঘাড়ে সজোরে কোপ বসিয়ে দেয় দাদা। মুখ দিয়ে আওয়াজ করার সময়ই পাননি যাদব। 


    পাশের ঘরে ঘুমিয়ে বাবা-মা। রণমূর্তি ধারণ করে সেই ঘরে ঢুকে বাবা বৃন্দাবন ঘোষকে আঘাত করতে উদ্যত হয়। কিন্তু মায়ের ঘুম ভেঙে যায়। বড় ছেলেকে এভাবে দেখে তিনি আঁৎকে ওঠেন। তা সত্ত্বেও বাবাকে কোপ মারতে যায় মানব। মা অনিমা ঘোষ তাকে বাধা দেন। অস্ত্রের আঘাতে তিনি গুরুতর জখম হন। আর্তচিৎকার জুড়ে দেন অনিমা দেবী। পাড়া-প্রতিবেশীরা চলে আসেন। ততক্ষণে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় নানুর থানার পুলিসও। তারা মানবকে আটক করে। তড়িঘড়ি যাদব ও অনিমাদেবীকে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা যাদবকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। 


    বৃন্দাবনবাবু বলেন, ‘আমার বড় ছেলে বেশ কিছুদিন ধরেই অশান্তি করছিল। মাঝরাতে ওর মা হঠাৎ দেখতে পায়, ধারালো অস্ত্র নিয়ে আমাদের ঘরে ঢুকেছে। আমি তখন ঘুমিয়ে। ভয়ে ছোট ছেলে যাদবের নাম ধরে ডাকে আমার স্ত্রী। কোনও সাড়াশব্দ পায়নি। পরে দেখি আমার ছোট ছেলে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ওর মায়ের ঘুম না ভাঙলে আমাকেও মেরে ফেলত। আমাদের সব শেষ হয়ে গেল।’
  • Link to this news (বর্তমান)