নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: কাজে গতি না আনায় নন্দীগ্রাম-দেশপ্রাণ রেল লাইনের কাজে বরাত পাওয়া সংস্থাকে ছাঁটাই করে দিল। গত ২১জুন ঠিকাদার সংস্থাকে ছাঁটাই নোটিস দেওয়া হয়। তারপরই প্রজেক্ট এরিয়া থেকে বালি, স্টোন চিপস, রড প্রভৃতি বিক্রি করে দিচ্ছে ওই সংস্থা। টাটা, খড়্গপুরের গিরিময়দান সহ বিভিন্ন জায়গায় রেলের ব্রিজ বানানো ওই সংস্থা বেশ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। দেশপ্রাণ থেকে নন্দীগ্রাম-২ব্লকের রঙ্কিনীপুর পর্যন্ত সাড়ে ৯কিলোমিটার রেললাইন ও দু’টি ব্রিজের কাজের বরাত পেয়েছিল ওই সংস্থা। জমিজটের জন্য লাইন পাতার কাজে বারবার সমস্যার মুখে পড়েছিল ওই সংস্থা। রেলের তরফে অবশ্য ওই সমস্যার দিকে বিশেষ নজর না দিয়ে কাজের অগ্রগতি আনতে নোটিস দেওয়া হয়েছিল। শেষমেশ ওই ঠিকাদার সংস্থাকে নন্দীগ্রাম প্রজেক্ট থেকে ছাঁটাই করে দিল রেল।
ঠিকাদার সংস্থার কর্ণধার রোহিত মাহাত বলেন, জমি নিয়ে সমস্যা থাকায় প্রতিমুহূর্তে কাজে সমস্যা হয়েছে। আমরা রেলের অনেক বড় কাজ করেছি। দেশপ্রাণ থেকে রঙ্কিনীপুর পর্যন্ত দু’টি ব্রিজের কাজ হয়েছে। ৫০হাজার কিউবিক মিটার মাটির কাজ হয়েছে। কাজে গতি আনার জন্য রেল বারবার নোটিস দিত। কিন্তু, জমি সমস্যা থাকায় কাজে গতি আনা যাচ্ছিল না। শেষমেশ ২১জুন আমাদের কাজ থেকে বাতিলের নোটিস ধরিয়েছে রেল। এটা আমাদের কাছে দুর্ভাগ্যজনক।
গত এক সপ্তাহ ধরে নন্দীগ্রাম-২ব্লকের বড়াচিরা রেলব্রিজের সামনে ওই ঠিকাদার সংস্থার মজুত রাখা রড, বালি, পাথর প্রভৃতি বিক্রি চলছে। বাজার দরের তুলনায় কম দামে নির্মাণসামগ্রী পেয়ে অনেকেই কিনতে ভিড় করছেন। আচমকা রেলের প্রজেক্ট এরিয়ায় নির্মাণ সামগ্রী অন্যদের নিয়ে যেতে দেখে অনেকেই অবাক হচ্ছেন। তাঁদের কারও কারও প্রশ্ন, তাহলে কী রেলের প্রজেক্ট বাতিল হল? জানা গিয়েছে, রেলের কাজে সন্তোষজনক না হয়ে কর্তৃপক্ষ ঠিকাদার সংস্থাকেই ওই কাজ থেকে বাতিল করে দিয়েছে। বাকি কাজের জন্য নতুন করে টেন্ডার হবে। নতুন বরাত পাওয়া সংস্থা আবার কাজ শুরু করবে।
নন্দীগ্রাম থেকে বাজকুল পর্যন্ত মোট ১৮কিলোমিটার রেললাইন হওয়ার কথা। নন্দীগ্রামের বটতলা থেকে রঙ্কিনীপুর এবং রঙ্কিনীপুর থেকে দেশপ্রাণ পর্যন্ত দু’টি পৃথক টেন্ডার হয়। দু’টি সংস্থা ওই লাইনের কাজে ওয়ার্ক অর্ডার পায়। রঙ্কিনীপুর থেকে দেশপ্রাণ পর্যন্ত কাজের বরাত পাওয়া সংস্থাকে ছাঁটাই করে দেওয়া হয়েছে। বটতলা থেকে রঙ্কিনীপুর পর্যন্ত বরাত পাওয়া সংস্থাকেও কাজে গতি আনার জন্য নোটিস ধরানো হয়েছে। গতি না আনলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে রেল। ওই লাইনের জন্য ১০৩৭টি প্লটে মোট ১৯৪একর ৩৪শতক জমি অধিগ্রহণ করা দরকার। কিন্তু, জমি অধিগ্রহণের সময় রেলে চাকরির পলিসি থাকায় জটিলতা বেড়েছে। বেশ কয়েকজন জমিদাতা চাকরি পেয়েছেন। আবার না পাওয়ার তালিকায় অনেকেই আছেন। এনিয়ে অনেকে কাজে বাধা দিচ্ছেন। যে কারণে বারবার কাজ ব্যাহত হয়েছে।
ওই রেল লাইনের জন্য ২০৬কোটি টাকা মঞ্জুর হয়েছিল। মোট ১৮কিলোমিটার রেল লাইন পাতার কাজ হবে। জমিজটের মধ্যেই নির্মাণ সংস্থাকে বাতিল করল রেল। এই জট কাটিয়ে কবে নন্দীগ্রাম-দেশপ্রাণ রেললাইন বাস্তবের রূপ পায়, সেদিকে তাকিয়ে নন্দীগ্রামবাসী।