• মদ কারখানার বর্জ্যে খড়ি নদী দূষিত হওয়ার অভিযোগ
    বর্তমান | ১৫ জুলাই ২০২৪
  • সংবাদদাতা, মানকর: দূষিত হচ্ছে খড়ি নদী। দূষণের প্রতিবাদে সরব নদীর তীরবর্তী গলসি-১ ও ২ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, বেশ কয়েক বছর আগে তৈরি হওয়া পানাগড় শিল্পতালুকের কোটার মদ কারখানার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নদীতে। প্রতিবাদ করলেও মেলেনি প্রতিকার। খড়ি নদীর অস্তিত্ব বিপন্ন হচ্ছে। গলসি-১ ব্লকের বিডিও জয়প্রকাশ মণ্ডল বলেন, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। 


    মানকর পঞ্চায়েতের মাড়ো গ্রামের একটি জলাশয় থেকে খড়ি নদীর উৎপত্তি। মাড়ো গ্রামের গোয়ালাপাড়া হয়ে এই নদী বুদবুদের সাধুনগর, বুদবুদ বাইপাস হয়ে গলসি, আউশগ্রামে গিয়েছে। নাদনঘাটে গিয়ে নদীটি ভাগীরথীতে মিশেছে। অভিযোগ, গলসি এলাকায় নদী ক্রমশ মজে যাচ্ছে। নদীর জল ব্যাপকভাবে দূষিত হয়েছে। জলের স্বাভাবিক রং বদলে গিয়ে গাঢ় কালো হয়ে গিয়েছে। একই সঙ্গে নাব্যতা কমে যাওয়ায় বর্ষায় নদীর জল উপচে আশপাশের কৃষিজমি জলমগ্ন হয়ে যায়। 


    পারাজের বাসিন্দা শেখ সায়ন বলেন, দীর্ঘ প্রায় আট বছরেরও বেশি সময় ধরে নদীর জল দূষিত হচ্ছে। একসময়ে নদীর জল সেচের কাজে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু দূষণের জেরে নদীর অবস্থা খুবই খারাপ। সচেতন না হলে কয়েক বছর পর নদীটির আর কোনও অস্তিত্ব থাকবে না। স্থানীয়রা জানান, নদীর জল ব্যবহার করলে নানা ধরনের চর্মরোগ হচ্ছে। নদীর জল গবাদি পশুও পান করতে চায় না। একসময় এই নদীতে মাছ ধরে অনেক মানুষ জীবিকা নির্বাহও করতেন। এখন দূষণের জেরে নদীতে মাছ নেই বললেই চলে। দূষণে মাছ মরে যাচ্ছে। গলসির বাহিরঘন্ন্যা গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, আগে আমরা নদীর জলে স্নান করতাম। কিন্তু এখন দূষিত হওয়ায় স্নান ও সাঁতার কাটা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। জল থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে।  


    মাড়োর বাসিন্দাদের একাংশ জানান, একসময় আউশগ্রাম-২ ব্লকের কোটা, বলরামপুর সহ নানা জায়গার জল মাড়ো গ্রামে খড়ি নদীর উৎপত্তিস্থলে জমত। ফলে সারা বছরই নদীতে কমবেশি জল থাকত। কিন্তু পরবর্তীকালে সেচখাল তৈরি হওয়ায় বিভিন্ন গ্রামের জল সেচখালে পড়তে থাকে। ফলে খড়ি নদীর উৎপত্তিস্থলে জলের পরিমাণ কমতে থাকে। নদীটি বাঁচাতে হলে অবিলম্বে সংস্কার করা দরকার। স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, এলাকার মদ কারখানার বর্জ্য নিয়মিত নদীর জলে পড়ছে। তার ফলে জল দূষিত হয়ে দুর্গন্ধ বেরচ্ছে। বুদবুদ থেকে মানকর যাওয়ার রাস্তায় আন্ডারপাস পেরনোর পর নদীর জলে ব্যাপক দুর্গন্ধ টের পাওয়া যায়। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের পক্ষে রামপ্রণয় গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, যে কোনও নদী জল সম্পদের উৎস। খড়ি নদীর দূষণ, নাব্যতা বৃদ্ধি, শিল্পতালুকের দূষিত জল নদীতে না ফেলা ইত্যাদি দাবি নিয়ে ইতিমধ্যেই ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে। সিপিএম নেতা হারাধন ঘোষ বলেন, প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রশাসনের নজর দেওয়া উচিত। বিজেপি নেতা রাজু পাত্র অভিযোগ করে বলেন, খড়ি নদীর জলে একসময় রবি চাষ হতো। মদ কারখানার বর্জ্যে জল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সরকার মদ কারখানায় আগ্রহী, চাষবাসে নয়। প্রশাসনও নীরব। কারখানা কর্তৃপক্ষের তরফে ভাস্কর রায় বলেন, কারখানার কোনও জল বাইরে যাচ্ছে না। অত্যাধুনিক যন্ত্র লাগানো হয়েছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ থেকেও আধিকারিকরা এসে দেখে গিয়েছেন। গলসি-১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি অনুপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, খড়ি নদীর উৎপত্তিস্থল মাঝেমধ্যেই সংস্কার করা হয়। নদীটির সংস্কারের বিষয়ে পদক্ষেপ করা হবে।
  • Link to this news (বর্তমান)