মাড়গ্রামে ইঁদুর ধরার নামে বাড়িতে ঢুকে চুরি, ধৃত বানজারা গ্যাংয়ের ৬
বর্তমান | ১৫ জুলাই ২০২৪
সংবাদদাতা, রামপুরহাট: ইঁদুর ধরার নামে ‘এন্ট্রি’ একেবারে বাড়ির ভিতরে। তারই মাঝে সুযোগ বুঝে হাপিস টাকা ও গয়না। মাড়গ্রামের ছোট চৌকি গ্রামে এভাবে হানা দেয় বানাজারা গ্যাং। যদিও শেষরক্ষা হল না। চুরির অভিযোগে বানজারা ম্যাংয়ের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করল পুলিস। ধৃত একজন বাদে সকলেই ঝাড়খণ্ডের জামতাড়া ও পাকুর থানা এলাকার বাসিন্দা। এই গ্যাংয়ে মহিলা সদস্যও রয়েছে। ধৃতদের জেরা করে গ্যাংয়ের বাকি সদস্যদের হদিশ পাওয়ার পাশাপাশি চুরি যাওয়া টাকা ও গয়না উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলে পুলিস জানিয়েছে।
শনিবার বিকেলে ছোট চৌকি গ্রামের পেশায় গৃহশিক্ষক মহম্মদ ইমালুল হকের বাড়ি তালা বন্ধ ছিল। তিনি টিউশনি পড়াতে গিয়েছিলেন। স্ত্রী বাড়ির বাইরের এক কোণে চাবি রেখে সেই সময় পাশের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সন্ধ্যায় গৃহশিক্ষক এসে দেখেন, ঘরের ভিতরের আলমারিতে থাকা ৭০ হাজার টাকা ও পাঁচ ভরি সোনার গয়না গায়েব। এনিয়ে হইচই পড়ে যায়। তখনই এক প্রতিবেশী তাঁকে জানান, মলিন জামাকাপড় পরে থাকা কয়েকজন ইঁদুর ধরতে তাঁর বাড়ির চত্বরে বাগানে ঢুকেছিল। এরপরই তিনি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিস তদন্তে নেমে রাতে প্রতাপপুরের কাছ থেকে একজনকে ধরে। সেই সময় সে টোটোয় চেপে যাচ্ছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা ওই যুবককে চিহ্নিতও করে। তার নাম পরেশ বেদ। বাড়ি হুগলির পাণ্ডুয়ায়। তার কাছ থেকে চুরি যাওয়া ১০ হাজার টাকা উদ্ধার হয়েছে। রবিবার ভোররাতে কালীদহ গ্রামের কাছ থেকে আরও পাঁচজন বানজারাকে ধরে পুলিস। ধৃতদের নাম চণ্ডাল পাশি, সোমেশ কুর্মি, লখু কুর্মি, পেয়ারা কুর্মি ও পাড়ে কুর্মি। প্রথমজনের বাড়ি ঝাড়খণ্ডের জামতাড়ায়। বাকিরা পাকুর থানা এলাকার বাসিন্দা। পুলিস জানিয়েছে, ধৃত সকলের বয়স ৩০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। তারা হিন্দি ও বাংলা মিশিয়ে কথা বলছিল। এই গ্যাং-এ মহিলা সদস্যও রয়েছে।
পুলিস জানিয়েছে, বানজারা গ্যাংয়ের অপারেশনের নির্দিষ্ট ধরন রয়েছে। কখনও শিশু কোলে নিয়ে বা গর্ভবতী মহিলারা বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভিক্ষা করার অছিলায় চুরি করে। মূলত গর্ভবতী মহিলা ও শিশুদের অথবা কিশোর কিশোরীদের দিয়ে চালানো হয় হাত সাফাইয়ের কাজ। তবে দলের রাশ থাকে মূলত পুরুষ সদস্যদের হাতেই। বিভিন্ন স্টেশন চত্বরে অস্থায়ী ছাউনি বানিয়ে ঘাঁটি গাড়ে তারা। কিছুদিন আলাদা আলাদা দলে ভাগ হয়ে অপারেশেন চালিয়ে আবার ঠিকানা বদল। কোনও একটি জায়গায় টানা বেশিদিন থাকে না তারা।
প্রসঙ্গত, গ্রাম থেকে শহরে বানাজারা দলের আনাগোনা বেড়েছে। তেমনই ঘটছে চুরির ঘটনা। কখনও ভিক্ষাবৃত্তি, কখনও ইঁদুর, পাখি ধরার আড়ালে চুরি করে চম্পট দিচ্ছে তারা। কখনও চোর, কখনও ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিরও শিকার হচ্ছে তারা। গত ২৪ জুন সন্ধ্যায় রামপুরহাটের কাষ্ঠগড়া গ্রামে এমনই চার মহিলা ও এক পুরুষকে ঘেরাফেরা করতে দেখেন স্থানীয়রা। পরিচয় জানতে চাইলে তারা দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। যদিও পিছু ধাওয়া করে এক মহিলাকে ধরে উত্তমমধ্যম দিয়ে পুলিসের হাতে তুলে দেয় জনতা। তার আগে রামপুরহাটের সানঘাটা পাড়ায় তালা বন্ধ একটি বাড়িতে ঢুকে চুরির চেষ্টা চালায় বানজারার দল। যদিও প্রতিবেশীরা দেখে চিৎকার জুড়তেই তারা পালিয়ে যায়।