সংবাদদাতা, হলদিয়া: হলদিয়ার ব্রজলালচক মোড়ে জাতীয় সড়ক থেকে জবরদখল সরানোর ঘটনায় এবার মামলাকারীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বাসুদেব দাস নামে জনৈক ব্যক্তি কলকাতা হাইকোর্টে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি একটি জনস্বার্থ মামলা করেন। ওই মামলার প্রেক্ষিতে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ১১৬ নম্বর জাতীয় সড়কের ব্রজলালচক চৌমাথা ক্রশিং এলাকায় রাস্তার উপরে থাকা দখলদার সরানোর নির্দেশ দেয় হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। তিন সপ্তাহের মধ্যে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার জন্য জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়। তারপর ৩০ এপ্রিল ২৩৯টি দোকানকে নোটিস দেয় জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। এরপর জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ ৮-২৪ মে পর্যন্ত ৬ দিন ধরে শুনানি করে জবরদখলকারীদের বক্তব্য শোনার চেষ্টা করে। ওই এলাকায় রাস্তার উপর জবরদখলের কারণেই একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে বলে প্রতিকার চেয়ে জনস্বার্থ মামলা হয়। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ দিন পনেরো আগে ফের নোটিস দিয়ে সতর্ক করার পর জবরদখলকারীরা দোকানপাট সরানোর কাজ শুরু করেন। কিন্তু কিছু দখলকারী দোকান সরানো নিয়ে গড়িমসি করতেই ফের তৃতীয় দফায় চার পাতার নোটিস জারি করেছে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ।
এনএইএআই কলকাতার প্রজেক্ট ডিরেক্টর সাহি রাম-এর স্বাক্ষর করা ওই নোটিস প্রত্যেক দখলদারের নামে পাঠানো হয়েছে। আগামী ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে জবরদখল সরানোর কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক দোকানদারের হাতে দেওয়া হয়েছে ওই নোটিস। সেই নোটিসে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ জনস্বার্থ মামলাকারী ‘বাসুদেব দাস’ নাম উল্লেখ করতেই তা সবার নজরে আসে। অভিযোগ, ওই নোটিস পাওয়ার পর থেকেই বাসুদেব দাসকে মোবাইলে রাতদিন হুমকি দেওয়া শুরু হয়েছে। তিনি বাজারে পর্যন্ত যেতে ভয় পাচ্ছেন। এমনকী মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ। ওই ঘটনায় জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের সদর্থক ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের নেটিসের পর মোড়ের মাথায় ২৫-৩০টি দোকান নিজেরাই রাস্তার উপর থেকে সরে গিয়েছে। একইসঙ্গে ফুটপাতের দখলও সরানো হয়েছে। তবে বাকি যে দোকানগুলিকে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ নোটিস দিয়েছিল, তাদের সরানো হবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। তবে হলদিয়ার প্রশাসন ও পুলিস জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ।
হলদিয়ার মহকুমা শাসক সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায় বলেন, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের কার্যকলাপ স্পষ্ট নয়। ওদের কোনও অফিসারকে ঠিকমতো ফোনে পাওয়া যায় না। হলদিয়ার যেকোনও ধরনের ডেভেলপমেন্টের কাজে ওরা বাগড়া দেয়, সহজে অনুমোদন দেয় না। ব্রজলালচকে দখলদার সরানো নিয়ে ওরা কোনও ধরনের সাহায্য চায়নি। একই বক্তব্য পুলিস প্রশাসনেরও। ব্রজলালচক বাজার কমিটির কর্মকর্তা অলোকরঞ্জন দাস বলেন, অস্থায়ী দোকানদার ও ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন নিয়েও প্রশাসনকে ভাবতে আবেদন করছি। এখানে পঞ্চায়েত ও পুর এলাকার হাজার হাজার মানুষ বাজারহাট করেন। সেজন্য হলদিয়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, পুরসভা, মহকুমা প্রশাসন, ব্লক প্রশাসন ও পঞ্চায়েত সমিতি যৌথভাবে বাজার কমিটিকে নিয়ে বসে পুনর্বাসন নিয়ে দ্রুত আলোচনা করুন। তাছাড়া মোড়ের মাথায় দীর্ঘদিন ধরে এইচডিএর স্ট্রিট লাইটগুলি খারাপ হয়ে পড়ে থাকায় অসামাজিক কাজ বাড়ছে। এখানে হাইমাস্ট লাইট লাগানোর আবেদন জানাচ্ছি।