নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: যুবককে পিটিয়ে মারার পর বিহারে গাঢাকা দিয়েছিল বর্ধমানের তেলিপুকুরের ত্রাস শেখ ইনসান ওরফে গাব্বু। পুলিসের চোখে ধুলো দিতে সে বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করেছিল। তাতেও শেষ রক্ষা হল না। বর্ধমান পুলিসের একটি দল বিহারে গিয়ে তাকে বেগুসরাইয়ের জিরো মাইল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, রবি পাসোয়ান নামে তেলিপুকুরের এক যুবককে পিটিয়ে মারে গাব্বু। রবি মারা যাওয়ার খবর পাওয়ার পর সে বর্ধমান স্টেশনে ট্রেন ধরতে চলে যায়। মোবাইলের সূত্র ধরে পুলিসও বর্ধমান স্টেশনে পৌঁছে যায়। তাদের চোখে ধুলো দিয়ে সে বিহারগামী ট্রেনে উঠে যায়। সেখানে সে বিভিন্ন জায়গা ঘুরে আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল। পুলিস সেখান থেকেই তাকে গ্রেপ্তার করেছে। পূর্ব বর্ধমানের পুলিস সুপার আমনদীপ বলেন, ধৃত দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, গাব্বু কয়েক বছর ধরে সদরঘাট এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল। ছোট একটি চায়ের দোকান চালিয়ে সে আধুনিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল। স্থানীয়রা বলেন, সামনে চায়ের দোকান চালালেও তার আয়ের অন্যতম উৎস ছিল তোলাবাজি। বিভিন্ন দোকান থেকে সে তোলাবাজি করত। তার কুকুরের জন্যও বিনামূল্যে দোকান মালিকদের মাংস দিতে হতো। রোজ নিয়ম করে সে কোনও না কোনও দোকান থেকে ৫০০গ্রাম থেকে এক কেজি মাংস নিত। এছাড়া অনেক সময় পেট্রল পাম্পে তেল ভরেও সে টাকা দিত না। কেউ প্রতিবাদ করলেই সে মারধর করত। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, দাপট দেখানোর জন্য সে শহরের প্রভাবশালীদের সঙ্গে ছবি তুলে রাখত। শাসকদলের অনেক কর্মসূচিতেও সে হাজির থাকত। যদিও তৃণমূলের দাবি, ওই দৃষ্কৃতীর সঙ্গে শাসকদলের কোনও সম্পর্ক নেই। স্থানীয় বাসিন্দারা আরও বলেন, তার অত্যাচারে এলাকার বাসিন্দারা বেশ কয়েকবার একজোট হয়েছিলেন। কিন্তু তারপরও তার দাপট কমানো যায়নি। এলাকার অনেককে সে মারধর করেছে। অকারণে গণ্ডগোলে জড়িয়ে যেত।
রবি পাসোয়ানের সঙ্গে তার শত্রুতা ছিল না। ভ্যান চালিয়ে রবি সংসার চালাতেন। গত ২৮ জুন রাতে তিনি গাব্বুর কথা শোনেননি। সেকারণেই সে লাঠি, রড দিয়ে প্রকাশ্য রাস্তায় রবিকে পিটিয়ে মারে। মৃত যুবকের এক আত্মীয় বলেন, মার খাওয়ার পরও ও সবকিছু মুখ বুজে সহ্য করেছিল। গাব্বুর ভয়ে প্রথমে হাসপাতালে ভর্তি হতে চায়নি। যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে অবশেষে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়। সেখানে কয়েকদিন পরই তিনি মারা যান। গাব্বুর কড়া শাস্তির দাবি তুলেছেন এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, ওই দুষ্কৃতী জামিন পেয়ে গেলে আবার এলাকায় অত্যাচার শুরু করবে। সে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে। এক পুলিস আধিকারিক বলেন, তার বিরুদ্ধে খুন, তোলাবাজির অভিযোগ রয়েছে। সহজে শ্রীঘর থেকে সে মুক্তি পাওয়া অসম্ভব।