• রামজ্যাক পাহাড় জয় ষাটোর্ধ্ব বসন্ত সিংহরায়ের
    বর্তমান | ১৫ জুলাই ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: বুড়ো হাড়ে ভেলকি একেই বলে। পরিসংখ্যানের নিরিখে কৃষ্ণনগরের বসন্ত সিংহরায়ের বয়স ষাট অতিক্রম করেছে। কিন্তু, তাতে কী? বয়সের ভারে চাপা পড়েনি পাহাড়ে চড়ার নেশা। বয়সকে কেবলমাত্র সংখ্যায় পরিণত করেছেন। হিমালয়ের সাদা বরফে ঢাকা পর্বত তাঁর হাতের তালুর মতো চেনা। তাই ৬৪ বছর বয়সেও করলেন অসাধ্য সাধন। প্রায় সাড়ে ছ’হাজার মিটার উঁচু হিমালয়ের রামজ্যাক পাহাড় জয় করলেন।  তাঁর সঙ্গেই ছিলেন রানাঘাটের শিক্ষিকা রুম্পা দাস। প্রথম মহিলা পর্বতারোহী হিসেবে তিনি ওই পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠেছেন। জানা গিয়েছে, এর আগে চারটি দল হিমালয়ের এই পাহাড়ের চূড়ায় উঠেছেন। কিন্তু, কোনও দলেই মহিলা ছিলেন না। 


    রামজ্যাক পাহাড় অভিযানে বসন্তবাবু ও রুম্পাদেবী ছাড়াও আরও সাতজন ছিলেন। তাঁদের মধ্যে তিনজন শেরপা। গত ১১ জুলাই ভোর বেলা হিমালয়ের রামজ্যাক পাহাড়ের চূড়ায় তাঁরা পৌঁছন। দলের ক্যাপ্টেন ছিলেন বসন্তবাবু। তিনি কৃষ্ণনগর শহরের ঘূর্ণির বাসিন্দা। ব্যাঙ্কে কাজ করতেন। এখন অবসর জীবনযাপন করছেন। কর্মজীবনে লাগাম পড়লেও পর্বতে চড়ার নেশায় কোনও ক্লান্তি আসেনি। সেক্ষেত্রে বসন্তবাবুকে কার্যত এভারগ্রিন বলাই চলে। বিগত ৩৪ বছর ধরে ভারত ও নেপালের অন্তর্গত হিমালয়ের বিভিন্ন পর্বতে ঘুরে বেড়িয়েছেন। যার মধ্যে ৩৫টি অভিযানে তিনিই নেতৃত্ব দিয়েছেন। বসন্তবাবু ২৫ বার বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পর্বত জয় করেছেন। সেই তালিকায় রয়েছে মাউন্ট এভারেস্ট, কাঞ্চনজঙ্ঘার মতো পর্বতশৃঙ্গও‌। ২০১০ সালে মাউন্ট এভারেস্ট, ২০১১ সালে কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়ায় পৌঁছেছিলেন। এছাড়াও কামেত(১৯৯৭), চৌখাম্বা (১৯৯৮), ইন্দ্রাসান (২০০৪), শিবলিঙ(২০০৫), থালাইসাগার(২০০৮), অন্নপূর্ণা-১(২০১২) সহ বহু পর্বত তিনি জয় করেছেন। তাই অবসরকালেও পাহাড়ের চূড়া থেকে আকাশকে আরও কাছ থেকে দেখার নেশাটা তিনি ছাড়তে পারেননি। 


    এবছর নদীয়ার কয়েকজন পর্বতারোহীকে নিয়ে রামজ্যাক পর্বত জয় করতে বেরিয়ে পড়েন। কৃষ্ণনগর ও রানাঘাটের বেশ কয়েকজন তাতে শামিল হন। গত ৪ জুলাই মানালির কাছে এক জায়গায় তাঁদের বেস ক্যাম্প হয়। ৬৩১৮ মিটার উঁচু এই পর্বতশৃঙ্গ জয় করতে তাঁদের সাতদিন সময় লাগে। ১১ জুলাই ভোরে তাঁরা শিখরে পৌঁছন। পরে নেমে আসেন। বসন্তবাবু বলেন, খুব সরু জায়গা দিয়ে রাতের অন্ধকারে আমাদের হাঁটতে হয়েছিল। পর্বতের চূড়ায় পৌঁছনোটা ছিল খুব কঠিন। আমাদের খুব সতর্ক হয়ে উঠতে হয়েছে। নামার সময়টা ছিল আরও কঠিন। কারণ যে কোনও মুহূর্তে পা পিছলে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। 


    রামজ্যাক জয়ী প্রথম মহিলা পর্বতারোহী হয়েছেন রানাঘাটের শিক্ষিকা রুম্পা দাস। কুপার্সের একটি স্কুলে তিনি শিক্ষকতা করেন। কিন্তু, পেশার মাঝে নেশাকে ছেড়ে থাকতে পারেননি। রুম্পাদেবী বলেন, ২০১৬ সাল থেকে আমি অভিযান করছি। এখনও পর্যন্ত ১২টা অভিযান হয়েছে। রামজ্যাক অভিযানে যুক্ত হতে পেরে খুব ভালো লাগছে।
  • Link to this news (বর্তমান)