নিজস্ব প্রতিনিধি, মালদহ: মালদহের নদনদীর জলস্তর ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গঙ্গা, ফুলহর, মহানন্দা বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে। ইংলিশবাজার ও পুরাতন মালদহ শহর সংলগ্ন এলাকায় মহানন্দা রীতিমতো ফুঁসছে। ইতিমধ্যে শহরের অসংরক্ষিত এলাকা জলের তলায় চলে গিয়েছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বন্যা হলে যাতে দুর্গতদের উদ্ধার করে আশ্রয় দেওয়া যায়, তার জন্য ইংলিশবাজারের নবনির্মিত ‘ফ্লাড সেন্টার’ চালুর উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের টাকায় ইংলিশবাজার পুরসভা ওই ফ্লাড সেন্টার তৈরি করেছে। ইংলিশবাজার বর্তমানে সেটির রং করার কাজ চলছে। দু-একদিনের মধ্যে তা শেষ হয়ে যাবে বলে আধিকারিকরা মনে করছেন। ওই ভবনে শতাধিক মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন। সেখানে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। ফলে বহু দুর্গত নিরাপদ আশ্রয় পাবেন।
এতদিন ধরে ইংলিশবাজার শহরে বন্যা পরিস্থিতির সময় অস্থায়ী ত্রাণ শিবির খোলা হতো। ফাঁকা জায়গায় ত্রিপল দিয়ে তাঁবু তৈরি করা হতো। সেখানে মাসাধিক কাল ধরে দুর্গতদের রাখা হতো। জরুরী ভিত্তিতে স্কুল, ক্লাবঘরেও ত্রাণ শিবির চালু করা হতো। তবে পঠনপাঠন ব্যাহত হওয়ার কারণে স্কুলে দীর্ঘদিন ধরে ত্রাণ শিবির খুলে রাখা যেত না। স্থায়ী ফ্লাড সেন্টার হলে সেই সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
এব্যাপারে মালদহের জেলাশাসক নীতিন সিঙ্ঘানিয়া বলেন, ফ্লাড সেন্টারটি নির্মাণ করতে ৬০ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে। প্রশাসন ওই টাকা পুরসভাকে দিয়েছিল। পুর কর্তৃপক্ষ প্রকল্প রূপায়ণ করে। বন্যা পরিস্থিতির আগেই যাতে সেটির উদ্বোধন করা যায় তা দেখা হবে। ইংলিশবাজার পুরসভার এক আধিকারিক বলেন, ফ্লাড সেন্টারের কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গেলেই সেটি চালু করে দেওয়া হবে।
সেচ দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার মানিকচক ঘাটে গঙ্গা ২৪.২১ মিটার উচ্চতায় বয়েছে। তেলজনা ঘাটে ফুলহর বয়েছে ২৭.১৫ মিটার উচ্চতায়। অন্যদিকে, ইংলিশবাজারে মহানন্দার জলস্তর ছিল ২০.১০ মিটার। গঙ্গা, ফুলহর এবং মহানন্দা নদীর জলস্তরের বিপদসীমা যথাক্রমে ২৪.৬৯, ২৭.৪৩ এবং ২১ মিটার। ফলে তিনটি নদীর জলই বিপদসীমার খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে। এখনও উত্তরবঙ্গ, বিহার ও ঝাড়খণ্ডে মাঝেমধ্যে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে জলস্তর আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে তিনটি নদীই বিপদসীমা ছাড়িয়ে যেতে পারে। এমনিতেই ইংলিশবাজার শহরে মহানন্দা কার্যত দু’কূল ছাপিয়ে বইতে শুরু করেছে। নদীর বাঁধের খুব কাছে জলস্তর চলে এসেছে। ফলে তীরবর্তী এলাকায় বসবাসকারী মানুষজন চিন্তায় রয়েছে। একই অবস্থা পুরাতন মালদহ শহরেরও। যদিও এখনও বন্যা পরিস্থিতি ঘোষণা করা হয়নি। প্রশাসন এবং পুরসভাগুলি পরিস্থিতির উপর ২৪ ঘণ্টা নজর রাখছে। প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, দু’দিন আগেই বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে জেলাশাসক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেছেন। সেখানে সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরের আধিকারিক, বাস্তুকাররা উপস্থিত ছিলেন। আমরা যে কোনও পরিস্থিতির জন্য তৈরি রয়েছি। পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুত রয়েছে।