সুমন রায়, রায়গঞ্জ: কথা দিয়েছেন। অক্ষরে অক্ষরে তা পালন করবেন বলে স্পষ্ট করে দিলেন কৃষ্ণ কল্যাণী। বিধানসভা উপনির্বাচনের জয়ের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তৃণমূল প্রার্থী জানিয়ে দিলেন, বিধায়ক হিসেবে শপথ নেওয়ার পর প্রথম কোন তিনটি কাজ তিনি করবেন।
রায়গঞ্জ-বারসই যোগাযোগ ব্যবস্থা, রায়গঞ্জ শহরের নিকাশি এবং যানজট সমস্যার সমাধানকেই তালিকায় প্রথম তিনে রেখেছেন কৃষ্ণ। সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল রায়গঞ্জ-বারসই রাস্তা। সেইমতো ৯০ শতাংশ কাজও হয়ে গিয়েছে। দ্রুত এই রাস্তার বাকি কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন কৃষ্ণ।
এছাড়া রায়গঞ্জের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল জল নিকাশি। একটু বৃষ্টি হলেই শহরের বিস্তীর্ণ এলাকায় জল জমে যায়। এবার মাস্টার প্ল্যান তৈরি করে নিকাশি ব্যবস্থা ঠিক করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
কৃষ্ণের তালিকায় তিন নম্বরে রয়েছে যানজট সমস্যা মিটিয়ে সাধারণ মানুষকে সহজে যাতায়াতের সুবিধা করে দেওয়া। সেক্ষেত্রে আন্ডারপাস কিংবা ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে রেল ক্রসিংয়ে। যদি কেন্দ্র সাহায্যের হাত বাড়িয়ে না দেয়, তবে রায়গঞ্জ পুর বাসস্ট্যান্ডকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হবে বলে তিনি জানান।
এছাড়া ফুটপাত দখলমুক্ত হওয়ার আগে হকারদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কৃষ্ণ। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে জায়গা চিহ্নিতকরণ করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। তারপর হকারদের সরিয়ে সরকারি জায়গা দখলমুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি, মহিলা ও ল’ কলেজ নির্মাণের কথাও এদিন জানিয়েছেন কৃষ্ণ।
কিন্তু এত কাজ ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে করে উঠতে পারবেন? কৃষ্ণের বক্তব্য, মাঝে ভোটের জন্য তিন মাস সময় চলে গিয়েছে। বাকি সময় বিধায়ক হিসেবেই ছিলাম এবং ২০২৬ সাল পর্যন্ত থাকব। কাজের ক্ষেত্রে সময় কোনও বাধা নয়। আমার উপর ভরসা রাখার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। সব প্রতিশ্রুতি পূরণ করব।
শাসকদলের নবনির্বাচিত বিধায়কের প্রথম তিন কাজের লক্ষ্যকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন রায়গঞ্জের বাসিন্দারা। শহরের শুভজিৎ সরকার বলেন, এই কাজগুলি করলে রায়গঞ্জের বাসিন্দারা অনেক উপকৃত হবেন। বিশেষ করে যানজট ও ড্রেনের সমস্যার দ্রুত সমাধানের প্রয়োজন। আশাকরি নতুন বিধায়ক জোরকদমে সেই কাজ শুরু করবেন।
অন্য এক বাসিন্দা মিতালি রায়ের কথায়, নতুন বিধায়কের কাছ থেকে অনেক প্রত্যাশা। তবে উনি যেসব কাজ দ্রুত করার কথা বলেছেন, সেগুলি হলে ৭০ শতাংশ সমস্যাই মিটে যাবে। নিকাশি ও যাতায়াত নিয়ে আর দুশ্চিন্তা করতে হবে না শহরবাসীকে।
উপ নির্বাচনে কৃষ্ণের হাত ধরে রায়গঞ্জের মাটিতে প্রথমবার ঘাসফুল ফুটেছে। লোকসভায় রায়গঞ্জ কেন্দ্র হাতছাড়া হলেও বিধানসভা উপ নির্বাচনে বিজেপির কাছ থেকে রায়গঞ্জ ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল। কৃষ্ণ ২০২১ সালে বিজেপির বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হলেও পরবর্তীতে তৃণমূল যোগ দেন। লোকসভায় তৃণমূলের প্রার্থী হওয়ায় বিজেপির বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিতে হয়। লোকসভা ভোটে পরাজিত হওয়ার পাশাপাশি রায়গঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে ৪৬ হাজার ৭৩৯ ভোটে পিছিয়ে ছিলেন কৃষ্ণ। ঠিক দুই মাসের মধ্যেই সেই ফলাফল একেবারে পাল্টে দিয়েছেন তিনি। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মানস ঘোষকে ৫০ হাজার ৭৭ ভোটে পরাজিত করেছেন। এখন লক্ষ্য একটাই, বিধানসভা কেন্দ্রের মানুষের অভাব, অভিযোগ মেটানো।