নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি ও সংবাদদাতা, রাজগঞ্জ: জলস্তর একটু নামতেই তিস্তার বাঁধে ধস। এবার মান্তাদারী পঞ্চায়েতের টাকিমারি বীরেন বস্তিতে ১৫০ মিটার বাঁধ তিস্তায় ধসে গিয়েছে। এর জেরে শুধু বীরেন বস্তি নয়, মান্তাদারী পঞ্চায়েতের টাকিমারি ও বোদাগঞ্জ এলাকায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে। এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কার করতে জোরকদমে কাজও শুরু করে দিয়েছে সেচদপ্তর। রবিবারও সেচদপ্তরের আধিকারিকরা সরেজমিনে উপস্থিত হয়ে গোটা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন।
স্থানীয় সূত্রে খবর, বর্ষার প্রথম থেকেই এবার তিস্তা ফুলেফেঁপে রয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহে পাহাড় ও সমতলের বৃষ্টিপাতের জেরে তিস্তার জলস্তর বেশ কয়েক মিটার বেড়ে গিয়েছিল। বৃষ্টি কমতেই ধীরে ধীরে কমছে জলস্তর। আর তারপরই বিক্ষিপ্তভাবে বাঁধ ধসে যেতে শুরু করেছে। সেচদপ্তর জানিয়েছে, তারা বালির বস্তা, বাঁশ দিয়ে ধস প্রতিরোধের কাজ শুরু করে দিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই রয়েছে।
টাকিমারি বীরেন বস্তির বাসিন্দা দুলাল অধিকারী, সন্তোষকুমার দাস, ঝুটন দাসরা বলেন, গোটা বর্ষাতেই আমরা নদীর ভয়াল রূপ নিয়ে আতঙ্কে থাকি। লাগাতার বৃষ্টির ফলে এলাকায় আমরা ঠিকমতো চাষাবাদ করতে পারছি না। ঝিঙে, লঙ্কা, পটল, টম্যাটো, পিঁয়াজ সহ প্রচুর মরশুমি সব্জি নষ্ট হয়েছে। মান্তাদারী পঞ্চায়েতের প্রধান অর্চনা রায় বলেন, এলাকার মানুষকে আগেই সতর্ক করা হয়েছিল। সেখানে সেচদপ্তর ধসে যাওয়া বাঁধ জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার করছে।
সেচদপ্তর সূত্রে খবর, সেভক থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত ৮ থেকে ১০টি জায়গায় বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব জায়গাতেই সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। এর আগে গজলডোবা সংলগ্ন ১৮নং মিলনপল্লিতে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সেখানে সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে। এরপর টাকিমারি এলাকায় বাঁধ ধসে গিয়েছে। সেচদপ্তরের উত্তর-পূর্ব বিভাগের চিফ ইঞ্জিনিয়ার কৃষ্ণেন্দু ভৌমিক বলেন, যেকোনও নদীর চরিত্র হল, জলস্তর কমতে শুরু করলেই নদীর দু’পাড়ের বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ নদীর জলস্তর কমতে শুরু করলেই দু’পাড়ের নীচের অংশের মাটি ধুয়ে যায়। টাকিমারি বীরেন বস্তিতে বাঁধের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। স্রোতের ধাক্কায় বাঁধের নীচের অংশ ধুয়ে চলে গিয়েছে। শুধু এখানে নয় গজলডোবা থেকে বাংলাদেশগামী প্রবাহ পথে তিস্তার দু’পাড়ে অন্তত ১০টি জায়গায় বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাকালিতে তিস্তার সাতটি স্পার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চ্যাংমারিতেও বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গত বছর ৪ অক্টোবর সিকিমে লেক ফেটে ভেসে আসা পলিতে তিস্তাবক্ষ এক থেকে দেড় মিটার উঁচু হয়েয়েছে। ফলে বিস্তীর্ণ এই প্রবাহপথে নদীবক্ষ উঁচু হয়ে গিয়েছে। এজন্য এবার বর্ষার অনেক আগে থেকেই নদীবক্ষ নিয়ে একাধিক পরিকল্পনা নিতে শুরু করে সেচদপ্তর। যুক্তি ছিল তিস্তার গজলডোবা থেকে বাংলাদেশগামী প্রবাহপথের বিস্তীর্ণ অংশে নদীর চ্যানেল পরিবর্তন হয়েছে। তাতে এবার নতুন নতুন এলাকায় তিস্তার দাপট বেড়েছে।