পাঁচ বছরে ৩০ গুলি কাণ্ড, অভিযুক্তদের তত্ত্বতালাশ লালবাজারের
বর্তমান | ১৫ জুলাই ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: পাঁচ বছরে শহরে গুলি চলেছে তিরিশের বেশি। প্রতিটি ঘটনায় ধরা পড়েছে অপরাধীরা। তাদের মধ্যে কতজন ছাড়া পেয়ে এলাকায় রয়েছে, তা জানতে তত্ত্বতালাশ শুরু করল লালবাজার। যাতে তাদের গতিবিধির উপর নজরদারি করা যায়। পাশাপাশি তারা অস্ত্র কেনাবেচায় জড়িয়েছে কি না সেই সম্পর্কে খোঁজখবর শুরু হয়েছে।
সাম্প্রতিক কালে বারবার গুলি চালানোর ঘটনা বিপাকে ফেলেছে লালবাজারের কর্তাদের। গত দু’মাসে কসবা, মির্জা গালিব স্ট্রিট, লেক অ্যাভিনিউ ও লেক গার্ডেন্সে গুলি চলার ঘটনা ঘটেছে। ঠাকুর ভাসানকে কেন্দ্র করে একবছর আগে শেক্সপিয়র সরণি এলাকায় প্রকাশ্য রাস্তায় গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে কড়েয়ার একদল যুবকের বিরুদ্ধে। বছর দুই আগে বেহালা ও হরিদেবপুরে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছিল। তারও আগে বাঁশদ্রোণীতে এক প্রোমোটারের অফিসে এসে গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। গোয়েন্দা বিভাগের সূত্র বলছে, বিগত পাঁচ বছরে তিরিশের বেশি গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছে খাস কলকাতা ও সংলগ্ন অঞ্চলে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই নাম জড়িয়েছে স্থানীয় দুষ্কৃতীদের। কোথাও সিন্ডিকেটের লড়াই আবার কোথাও এলাকার দখলদারিকে কেন্দ্র করে গুলি চলছে। ব্যবহার হচ্ছে সাধারণ দেশি বন্দুক। কোনও কোনও জায়গায় নাইন এমএম পিস্তল থেকেও গুলি চালিয়েছে বন্দুকবাজরা। সমস্ত ঘটনাতেই অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেছে লালবাজার বা স্থানীয় থানা। উদ্ধার হয়েছে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র। লালবাজার সূত্রে খবর, গুলি চালানোর ঘটনায় অভিযুক্ত অনেকেই ধরা পড়ে আদালত থেকে জামিন পেয়ে গিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে বেশকিছু কুখ্যাত দুষ্কৃতীও। তবে জামিনে থাকা অভিযুক্তদের বিষয়ে বহু ক্ষেত্রেই খোঁজখবর রাখে না স্থানীয় থানা বা গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিকরা। এই সুযোগে অপরাধীরা গোপনে তাদের কাজকর্ম চালিয়ে যায়। আগ্নেয়াস্ত্র কেনাবেচার ব্যবসা রমরমিয়ে শুরু করে দেয়। যোগাযোগ গড়ে তোলে ভিন রাজ্যে অস্ত্র কারবারে জড়িতদের সঙ্গে। জামিনে থাকা অভিযুক্তদের হাত ঘুরে অস্ত্র আসতে থাকে। যা পৌঁছয় সিন্ডিকেট চক্রের লোকজনের কাছেও। নতুন কোনও ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় কারা কারা বন্দুকের ব্যবসা করে বা আগে গুলি চালিয়ে জামিনে ছাড়া পেয়েছে এমন অভিযুক্তদের খোঁজ শুরু হয়। লালবাজারের কর্তারা চাইছেন, এবার একটা তথ্যপঞ্জি তৈরি করতে। যাতে এক লহমায় দেখে নেওয়া যাবে কোথায় কবে গুলি চলেছে এবং যারা ধরে পড়েছে তারা জেলে, নাকি জামিনে আছে। পাশাপাশি তাঁরা তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে দেখতে চাইছেন কোন এলাকায় বারবার গুলি চলছে এবং কারা চালাচ্ছে। সেখান থেকে আধিকারিকরা খুঁজে দেখবেন, লড়াই দুষ্কৃতী দলের মধ্যে, নাকি সিন্ডিকেট ও অন্য বিষয় রয়েছে গুলি চলার পিছনে। সেইমতো এলাকা ধরে ম্যাপিং করা হবে। যাতে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। পাশাপাশি গুলি চলার নেপথ্যে যে সব কারণ উঠে এসেছে সেই বিষয়গুলির উপর বাড়তি নজরদারি চালানোও পুলিসের লক্ষ্য।