দৃষ্টিহীনদের জন্য আলিপুর চিড়িয়াখানায় বসল ব্রেইল বোর্ড, উল্লেখ নেই পশুর নাম
বর্তমান | ১৫ জুলাই ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: উদ্যোগ ভালো কিন্তু তা কেবলমাত্র প্রচারের জন্যই। ঘটা করে উদ্বোধনও হল। কিন্তু আদতে কাজে এল না। ফলে সমালোচনাও গেল শুরু হয়ে। দৃষ্টিহীনদের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহায়তায় নয়া উদ্যোগ নিয়েছে আলিপুর চিড়িয়াখানা। জীবজন্তুদের এনক্লোজারের সামনে দৃষ্টিহীনদের সুবিধার জন্য বসানো হয়েছে ব্রেইল বোর্ড। দৃষ্টিহীনরা ব্রেইল স্পর্শ করে জানতে পারবেন খাঁচায় থাকা পশু বা পাখিটির বিশেষত্ব। জন্তুটি কোথায় পাওয়া যায়, তার ওজন-উচ্চতা, কী খাওয়া দাওয়া করে? কতদিন বাঁচে ইত্যাদি তথ্য। সে সব খোদাই আকারে থাকে ব্রেইলে। তাতে হাত বুলিয়ে পড়ে নেন দৃষ্টিহীনরা। ঘটা করে সে ব্রেইল বসানো হয়েছে। কিন্তু দেখা গেল, গোড়াতেই গলদ।
খাঁচায় থাকা পশু বা পাখিটির নাম কী? সেটাই বুঝতে পারলেন না দৃষ্টিহীনরা। নাম দিতে বিলকুল ভুলে গিয়েছে প্রস্তুতকারী। ফলে উদ্বোধনের লগ্নেই এই উদ্যোগের কার্যকারিতা নিয়েই উঠে গেল প্রশ্ন। যদিও আলিপুর চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের দাবি, যত দ্রুত সম্ভব ব্রেইল বোর্ড ঠিক করে দেওয়া হবে। রবিবার আলিপুর পশুশালায় বন মহোৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। উপস্থিত ছিলেন বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা, আলিপুর চিড়িয়াখানার অধিকর্তা শুভঙ্কর সেনগুপ্ত সহ রাজ্য বনদপ্তরের অন্যান্য আধিকারিকরা। চিড়িয়াখানা চত্বরে এদিন বৃক্ষরোপণ হয়। অন্যদিকে ১৪ জুলাই ছিল ওয়ার্ল্ড শিম্পাঞ্জি ডে। সেই উপলক্ষ্যে একটি বিশেষ তথ্যচিত্র প্রদর্শনও করা হয়। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল ২০জন দৃষ্টিহীনকে। কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছিলেন তাঁরা। সবার উপস্থিতিতে পশুশালায় ব্রেইল বোর্ডের উদ্বোধন হয়। পশুশালার অধিকর্তা বলেন, ‘একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে চিড়িয়াখানার ২০টি এনক্লোজারের বাইরে একটি করে ব্রেইল বোর্ড বসানো হয়েছে। দেশের সমস্ত চিড়িয়াখানার মধ্যে প্রথমবার আলিপুরই এই উদ্যোগ নিয়েছে।’
এদিন জিরাফের খাঁচার সামনে এক দৃষ্টিহীনের হাত দিয়ে ব্রেইল বোর্ডের উদ্বোধন করেন মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা। কৃষ্ণনগর থেকে এই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এসেছিলেন গৌর হালদার। তিনি খোদাই করা অংশে হাত বুলিয়ে জন্তুটির উচ্চতা, ওজন, খাদ্যাভাস, আয়ু সবটাই পড়তে সক্ষম হন। কিন্তু ‘পশুটির নাম কী?’ এই প্রশ্ন শুনেই থমকে যান গৌরবাবু। পাশ থেকে চিড়িয়াখানার আধিকারিকরা তাঁকে বলে দেন ‘জিরাফ’। গৌড়ের কথায়, ‘পশু সম্পর্কে সবটাই তো লেখা আছে। কিন্তু নাম কী, সেটা তো লেখা নেই। ভবিষ্যতে হয়ত আরেকটু উন্নতি হবে’। কিন্তু এই ভুল শুধুমাত্র একটি খাঁচার ক্ষেত্রে নয়। বাঘের খাঁচার সামনে বসানো বোর্ডেও উল্লেখ নেই পশুর নাম। তা জানার পরই পশুশালার দিকে ধেয়ে আসতে শুরু করেছে সমালোচনা।