হিপো-হাতি ‘ছুঁয়ে দেখতে’ চিড়িয়াখানায় ব্রেল কোড, দেশের মধ্যে আলিপুরেই প্রথম
প্রতিদিন | ১৫ জুলাই ২০২৪
ধ্রবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: আলিপুর চিড়িয়াখানার (Alipore Zoo) এনক্লোজারের জল-কাদায় শুয়ে-বসে দিন কাটে, পেট ভরে নেহাত ঘাসপাতা বা পেঁপে-তরমুজে। আদ্যোপান্ত কলকাত্তাইয়া হয়ে ওঠা সেই জলহস্তী যে আদতে সুদূর আফ্রিকা মহাদেশের, চোখ বন্ধ করে একবার ভাবলে তবে তার ‘ওজন’ বোঝা যায়। ধারে-ভারে মনে থেকে যায় সাড়ে ৩ মিটার লম্বা আর ৩ হাজার কেজি ওজনের সেই ‘হিপো’কে। দৃষ্টিহীন পর্যটকদের জন্য ‘চোখ বন্ধ’ করা সেই অনুভূতির কথা ভেবে দেশে এই প্রথম আলিপুর চিড়িয়াখানার এনক্লোজারের গায়ে তাই বসল ব্রেল কোড। যেখানে পশুর বিবরণ লেখা থাকবে ব্রেলে। চোখ বন্ধ করে যাকে মনে রাখা যাবে, দৃষ্টি ছাড়াও অন্তর থেকে বুঝে নেওয়া যাবে পশুদের।
রবিবার অরণ্য সপ্তাহের শুরুর দিন বনমহোৎসবের আমেজে আলিপুর চিড়িয়াখানায় নিজে গিয়ে দৃষ্টিহীন এমন বেশ কয়েকজন শিশু-কিশোরকে সঙ্গে নিয়ে যার উদ্বোধন করলেন বনমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা। ছিলেন দপ্তরের একাধিক আধিকারিক ও চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। এদিন চিড়িয়াখানার ২১টি এনক্লোজারে এমন ব্রেল কোড বসানো হয়েছে। এর পর একে একে যা বসবে দার্জিলিং চিড়িয়াখানা, শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারি পার্ক-সহ রাজ্যের সর্বত্র। দৃষ্টিহীন বেশ কয়েকজন পর্যটকের সঙ্গে মন্ত্রী এদিন নিজে কথা বলে তাঁদের অনুভূতি জেনেছেন। তাঁর কথায়, “আমি তাঁদের কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করলাম, এতে কি কিছু সুবিধা হল? তাঁরা বললেন, এতদিন লোকে বলত, আমরা শুনতাম। কিন্তু সেটা বেশিদিন মনে থাকে না। এবার থেকে হাতে ছুঁয়ে দেখব। তাতে মনে থাকবে বেশিদিন।” নিজের ছোটবেলার কথা মনে করালেন মন্ত্রী। বললেন, “ছোটবেলায় আমাদের কোনও কিছু পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটা লিখতেও বলা হত। তাতে সেটা বেশি করে মনে থাকত। চিড়িয়াখানায় দৃষ্টিহীনদের জন্য এই ভাবনার কারণও একই।”
রাজ্য বা ভিনরাজ্যে আগে এ ধরনের ব্রেল কোড দেখা গিয়েছে চিড়িয়াখানা বা নেচার ইন্টারপ্রিটেশন সেন্টারে বিশেষ দিকনির্দেশের জন্য। তবে পশু পরিচয় লেখা ব্রেল কোড এই প্রথম, যা বানিয়ে দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল আই ব্যাঙ্ক। চলতি বছরের মধ্যে বাকি চিড়িয়াখানাগুলিতেও এই ব্রেল কোড বসে যাওয়ার কথা। আলিপুরে এই কর্মসূচির পাশাপাশি এদিন আন্তর্জাতিক শিম্পাঞ্জি দিবস উপলক্ষে বাবুর এনক্লোজারের সামনে লাইভ কুইজের ব্যবস্থা হয়েছিল। পুরস্কারে ছিল বাবুর মাস্ক। কচিকাঁচাদের ভিড় জমে যায় বেশ। ২৬ বছর ধরে বাবুর দেখভালের অভিজ্ঞতাও শোনানো হয় তাদের।