অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিল বাবু। ছিল ছোটু, রানি ও মস্তানও। যদিও তাদের জন্য আলাদা চেয়ারের ব্যবস্থা করা হয়নি। তাদের জন্য আলাদা ফুড প্যাকেটও ছিল না। তবে, যে বাচ্চারা রবিবার আলিপুর চিড়িয়াখানায় বাবুদের এনক্লোজ়ারের বাইরে ছোট সেই অনুষ্ঠানে অংশ নিল, তাদের জন্য চকোলেট-এর ব্যবস্থা ছিল। রবিবার ছিল বিশ্ব শিম্পাঞ্জি দিবস।প্রতিদিনই চলে কঠোর প্রতিযোগিতা। চারপাশে সেলিব্রিটি তো নেহাত কম নেই! একপাল বাঘ, সিংহ তো আছেই। সঙ্গে রয়েছে সাদা বাঘ, লেপার্ড এমনকী জাগুয়ারও। তবু চিড়িয়াখানায় ঢুকে বাবু-রানিদের এনক্লোজ়ারের সামনে অন্তত কয়েকটা মিনিট দেন না এমন দর্শক বিরল। প্রতিদিনই ‘সেলিব্রিটি ট্রিটমেন্ট’ পাওয়া ওই চার শিম্পাঞ্জির কাছে রবিবারটা একটা ‘স্পেশ্যাল দিন’ হিসেবে রয়ে গেল।
শুধু ওই চারজন কেন, দুনিয়ার যত চিড়িয়াখানায় শিম্পাঞ্জি রয়েছে — ১৪ জুলাই ছিল একান্ত ভাবেই ‘তাদের দিন’। এদিন সারা পৃথিবীতেই পালিত হয়েছে ‘ওয়ার্ল্ড শিম্পাঞ্জি ডে’। ঘটনার সূত্রপাত ৬৪ বছর আগে। ১৯৬০-এর ১৪ জুলাই প্রখ্যাত প্রাণীবিজ্ঞানী এবং প্রাইমেটোলজিস্ট জেন গুডাল প্রথমবারের জন্য এসেছিলেন আজকের তানজ়ানিয়ার একটা জঙ্গলে।
এই জঙ্গল এখন পরিচিত গোম্বে ন্যাশনাল পার্ক নামে। এখান থেকেই গুডাল তাঁর যুগান্তকারী গবেষণা শুরু করেন শিম্পাঞ্জিদের নিয়ে। কয়েক দশক পর গুডালের গোম্বো ন্যাশনাল পার্কে আসার দিনটাকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রতি বছর ১৪ জুলাইকে ‘ওয়ার্ল্ড শিম্পাঞ্জি ডে’ হিসেবে গণ্য করা হয়।
রবিবার এর জন্যই আলিপুরে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। চিড়িয়াখানার অধিকর্তা শুভঙ্কর সেনগুপ্ত বলেন, ‘আন্তর্জাতিক শিম্পাঞ্জি দিবস উপলক্ষ্যে ছোটদের নিয়ে চিড়িয়াখানায় শিম্পাঞ্জিদের এনক্লোজ়ারের সামনে একটা ছোট অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল।
এখন চিড়িয়াখানায় যে চারটি শিম্পাঞ্জি রয়েছে — সেই বাবু, ছোটু, রানি এবং মস্তান ছোটদের সবার কাছেই অত্যন্ত জনপ্রিয়। রবিবার আমরা শিম্পাঞ্জিদের নিয়ে একটি ভিডিয়োও প্রকাশ করেছি।’ প্রাইমেটোলজিস্টদের মতে, পৃথিবীতে যত প্রজাতির প্রাণী রয়েছে, তাদের মধ্যে জিনগত ভাবে মানুষের ঘনিষ্ঠতম আত্মীয় শিম্পাঞ্জি। মানুষ ও শিম্পাঞ্জির ৯৮ শতাংশ ডিএনএ একই রকম।
শিম্পাঞ্জি দিবস পালন করার পাশাপাশি এদিন চিড়িয়াখানায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় চালু করা হয়। দৃষ্টিহীনদের জন্য রবিবার চিড়িয়াখানায় ব্রেল পদ্ধতিতে লেখা ২০টি প্লাক উন্মোচন করা হয়। চিড়িয়াখানার অধিকর্তা জানিয়েছেন, বাঘ, সিংহ, হাতি এবং গণ্ডারের মতো যে প্রাণীগুলোর এনক্লোজ়ারের সামনে সবসময় ভিড় থাকে, এমনটি ২০টি এনক্লোজ়ারের সামনে এই ধরনের প্লাক বসানো হয়েছে।
আগামী দিনে আরও কিছু ব্রেল প্লাক বসানো হবে। দৃষ্টিহীনরা যাতে কারও সাহায্য ছাড়াই সামনের এনক্লোজ়ারের প্রাণী সম্পর্কে জানতে পারেন — তার জন্যই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।