• কেশপুরে দুর্ঘটনাগ্রস্ত অ্যাম্বুল্যান্সের ফিটনেস এক্সপায়ার্ড আড়াই বছর আগে
    এই সময় | ১৫ জুলাই ২০২৪
  • সমীর মণ্ডল মেদিনীপুর

    কেশপুরে অ্যাম্বুল্যান্স দুর্ঘটনায় শেষ পর্যন্ত মারা গেলেন নববধূ অপর্ণা বাগ (১৯)। শুক্রবার গভীর রাতে ওই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল ৬ জনের। শনিবার ভোরে কলকাতার হাসপাতালে মারা যান অপর্ণা। এই নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে হলো সাত। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি অ্যাম্বুল্যান্স চালক অভিষেক মল্লিক। তবে দুর্ঘটনার পরে যেভাবে অ্যাম্বুল্যান্সটি দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছে, তাতে একাধিক প্রশ্ন উঠেছে।তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, কয়েক দিন আগে অ্যাম্বুল্যান্স চালক অভিষেকের ডান হাতের কব্জি ভেঙে যায়। প্লাস্টার করা অবস্থায় শুক্রবার গভীর রাতে তিনি অ্যাম্বুল্যান্স চালিয়ে ঘাটাল থেকে মেদিনীপুরে যাচ্ছিলেন। শুধু তাই নয়, ২০১৪ সালে রেজিস্ট্রেশন হওয়া অ্যাম্বুল্যান্সটির ফিটনেস (সিএফ) এক্সপায়ার হয়েছে ২০২১ সালের ১৭ নভেম্বর। ইনসিওরেন্সেরও মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে ১২৫০ দিন আগে।

    আগে রেজিস্ট্রেশন ছিল চন্দ্রকোনার কালিকাপুর নেতাজি স্মৃতি সংঘের নামে। বর্তমানে তারা আর দেখভাল করে না। ঘাটালের অভিজিৎ হোড় ওরফে বুল্টি হোড় নামে এক ব্যক্তি অ্যাম্বুল্যান্সটি ওই সংস্থার কাছ থেকে নিয়ে চালাচ্ছিলেন। রবিবার তাঁকে একাধিক বার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।

    ঘাটাল হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স চালকরা জানিয়েছেন, অভিষেক নিয়মিত অ্যাম্বুল্যান্স চালাতেন না। প্রাইভেট কোনও গাড়ি চালাতেন। মাঝে মধ্যে অ্যাম্বুল্যান্স চালাতেন। সূত্রের খবর, ওইদিন রাতে চালক অভিষেক মল্লিক ও তাঁর দুই বন্ধু জিৎ ও সুরজিৎ জন্মদিনের পার্টিতে ছিলেন। ডাক পড়তেই অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে রোগী পৌঁছতে বেরিয়ে পড়েন। পথে দুর্ঘটনা ঘটে।

    জন্মদিনের পার্টিতে অভিষেক মদ খেয়েছিলেন কিনা তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। মৃত অপর্ণার এক আত্মীয় বলেন, ‘রোগীর পরিবারের পক্ষে কখনও জানা সম্ভব নয়, কোন অ্যাম্বুল্যান্সের কাগজপত্র ঠিক আছে, কার ফিটনেস বা ইনস্যুরেন্স নেই। প্রশাসনকেই দেখতে হবে।’

    জানা গিয়েছে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় অন্তত দেড়শো নিশ্চয় যান ও অ্যাম্বুল্যান্স আছে। এছাড়া বিধায়ক, সাংসদ তহবিল থেকে বিভিন্ন সংস্থাকে দেওয়া হয়েছে অনেক অ্যাম্বুল্যান্স। কিন্তু তাদের নজরদারি করবে কে? কী ভাবে ফিটনেস ছাড়া গাড়ি দিনের পর দিন চলছে রাস্তায়? তাও আবার অ্যাম্বুল্যান্সের মতো জরুরি পরিষেবার ক্ষেত্রে। তাহলে কি পরিবহণ দপ্তরের কোনও নজরদারি নেই?

    ঘাটাল পরিবহন দপ্তরের সহকারি আধিকারিক সঞ্জয় হালদার বলেন, ‘আমরা প্রায়ই গাড়ি ধরে কাগজপত্র, ফিটনেস, ইনসিওরেন্স ইত্যাদি চেক করি। না থাকলে ফাইন করা হয়। অ্যাম্বুল্যান্স-সহ যে কোনও গাড়ির ক্ষেত্রেই একই নিয়ম। তারপরেও কিছু গাড়ি নজর এড়িয়ে ফাঁকি দিয়ে চলছে। আমাদের আরও নজরদারি বাড়াতে হবে। এটা অবশ্যই আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখব।’

    ঘাটালের ৮টি অ্যাম্বুল্যান্সের মালিক পাপ্পু নায়েক বলেন, ‘আমরা পরিষেবা দেওয়ার জন্য অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবসা করি। অনেকে আবার হঠাৎ শখ করে অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবসা করেন। গাড়ির কাগজপত্র, ফিটনেস কোনও কিছুই মেইনটেন করেন না তাঁরা। পরিবহণ দপ্তরের এই বিষয়গুলি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিৎ।’

    শুক্রবার রাতে ঘাটাল হাসপাতাল থেকে অসুস্থ অপর্ণা বাগকে মেদিনীপুরের নিয়ে যাওয়ার সময়ে কেশপুরের পঞ্চমীর কাছে অ্যাম্বুলেন্স ও লরির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলে মারা যান অপর্ণার স্বামী, মা, মামা, মামি-সহ ৬ জন।
  • Link to this news (এই সময়)