• জলঙ্গি থেকে মাটি তোলার কাজ বন্ধ উদ্বিগ্ন জেলার পরিবেশপ্রেমীরা
    বর্তমান | ১৬ জুলাই ২০২৪
  • সংবাদদাতা, কৃষ্ণনগর: কৃষ্ণনগরে দ্বিজেন্দ্র সেতুর এক্সটেনশন ব্রিজ তৈরির সময় ফেলা মাটি আবর্জনা জলঙ্গি থেকে তোলার কাজ শুরু হলেও আচমকা জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ সেই কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় শুরু হয়েছে উদ্বেগ। নতুন শম্ভুনগরের মৎস্যজীবীরা, জলঙ্গি নদী সমাজ ও সাধারণ মানুষের আন্দোলনের জেরে দু’ সপ্তাহ আগে সকালবেলায় দু’টি জেসিবি দিয়ে এন এইচ কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত একটি সংস্থা ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু করে। প্রসঙ্গত, গত দু’ বছর আগে দ্বিজেন্দ্র সেতুর এক্সটেনশন ব্রিজ তৈরি হয়। জানা গিয়েছে, এই ব্রিজ তৈরির সময় মাটি আবর্জনা জলঙ্গি নদীতে ফেলা হয়। প্রায় এক বছর আগে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিজের উদ্বোধন হয়ে গেলেও নদী থেকে এই মাটি আবর্জনা তুলে দেওয়া হয়নি। স্বাভাবিক ভাবেই ব্রিজের নীচে জলঙ্গির কোথাও ১ ফুট, ২ ফুট থেকে ৪ ফুটের মধ্যে জল বহমান অবস্থায় রয়ে যায়। এই অবস্থায় কচুরিপানা জন্ম নেওয়া, নৌকা চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হওয়া থেকে একাধিক সমস্যা দেখা যায়। জলঙ্গির স্বাভাবিক বহমানতা বন্ধ হয়ে যায়। এই অবস্থা দূর করা একইসঙ্গে জলঙ্গির স্বাভাবিক প্রবহমানতা ফেরানোর জন্য আন্দোলন হয়। তারপরই এন এইচ কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসে। শুরু হয় ড্রেজিংয়ের কাজ। ৭ দিন চলার পর নদীতে জল বেড়ে যাওয়ার কথা বলে এই ড্রেজিংয়ের কাজ বন্ধ করে দেয় ঠিকাদার সংস্থা। জানা যায়, জলঙ্গি নদীর দৈর্ঘ্য ২৪৮.৫ কিলোমিটার। এই পথের অনেক আগে মুর্শিদাবাদের চর মধুবোনা থেকে করিমপুরের মোক্তারপুর পর্যন্ত প্রায় ৪৮ কিলোমিটার নদীপথ হারিয়ে গিয়েছে। যেখানে জল নেই। ভৈরব নদের জলেই জলঙ্গি এখানে ভরে ওঠে। তবে জুলাইয়ে বর্ষা মরশুমে জলঙ্গি আরও কালো হয়। গোটা এলাকা দুর্গন্ধে ভরে ওঠে। নদীর মাছ মারা যায়। হাজার হাজার মাছের মড়ক লেগে যায়। প্রতিবছর মুর্শিদাবাদের সূতির খাল থেকে বর্জ্য পদার্থ মিশে যায় জলঙ্গিতে। এছাড়া পেঁয়াজের খেতে থাকা বর্জ্য বর্ষার জলে মিশে নদীতে পড়ে। এমনিতেই জলঙ্গিতে পলি জমা, কচুরিপানা ভর্তি হওয়ার সমস্যা রয়েছে। এছাড়া নদীতে প্লাস্টিক, ফুল, বরণডালা ফেলা হয়। পড়ে পুরসভার বর্জ্যও। পুজোর মরশুম এলেই প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয় জলঙ্গিতে। দুর্গাপুজো থেকে জগদ্ধাত্রী পুজোর মধ্যে গোটা জেলায় প্রায় এক হাজার প্রতিমা বিসর্জন হয়। প্রতিমার গায়ের রঙে থাকে লেড, জিঙ্ক, ক্যাডমিয়ামের মতো ভারী ধাতু। নদীর জলে সরাসরি এই সমস্ত ভারী ধাতু মিশে জলকে দূষিত করে তুলছে। ফলে নদীতে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ অস্তিত্ব সংকটের মুখে। স্বাভাবিক ভাবেই  সমস্যায় মাছ ও মৎস্যজীবীরা। এ সমস্ত কিছু নিয়ে জলঙ্গি বিপন্ন। এই অবস্থায় দু’ বছর আগে দ্বিজেন্দ্র সেতুর এক্সটেনশন ব্রিজ তৈরির সময় জলঙ্গিতে মাটি আবর্জনা ফেলা হয়। তাতে জলঙ্গির স্বাভাবিক বহমানতা বন্ধ হয়ে যায়। ব্রিজের নীচে স্বাভাবিক অবস্থা ফেরানোর দাবিতে আন্দোলনের জেরে ২৮ জুন নদীতে ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু করে এন এইচের অনুমোদিত ঠিকাদার সংস্থা। এ প্রসঙ্গে জলঙ্গি নদী সমাজের অমিতাভ সেন গুপ্ত বলেন, টানা ৭ দিন ড্রেজিংয়ের কাজ চলার পর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা উদ্বেগে আছি। আমাদের লিখিত প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল নদীতে ড্রেজিং করা হবে ২০ ফুট গভীরতায়। কিন্ত আমরা আশঙ্কা করছি কাজটা থামিয়ে দেওয়ার নামে  বন্ধ করে দেওয়া হল। তা হলে আমরা আন্দোলন করব। এ নিয়ে এন এইচের প্রজেক্ট ডিরেক্টর অমিত কুমার সিং বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে মিটিং আছে। সেখানে সকলে থাকবে। সমস্ত কিছু আলোচনা হবে।  নিজস্ব চিত্র 
  • Link to this news (বর্তমান)