নার্সদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন সিউড়ি হাসপাতালে উত্তেজনা
বর্তমান | ১৬ জুলাই ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, সিউডি: চিকিৎসার গাফিলতিতে রোগীর মৃত্যু—এই অভিযোগ তুলে তুলকালাম কাণ্ড বাঁধিয়ে দিলেন পরিজনরা। স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা থেকে শুরু করে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন তাঁরা। ওয়ার্ডে ঢুকেও চিৎকার, চেঁচামেচি করে বলে অভিযোগ। শেষে পুলিস এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। রবিবার রাতে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যপাক উত্তেজনা ছড়াল সিউড়ি সদর হাসপাতালে। মৃতের পরিবারের অভিযোগ, হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সদের ডাকা হলেও তাঁরা কেউ রোগীর কাছে আসেননি। মোবাইল ঘাঁটতেই তাঁরা ব্যস্ত ছিলেন। তাঁদের গাফিলতিতেই রোগী মারা গিয়েছেন। হাসপাতালের সুপার নীলাঞ্জন মণ্ডল বলেন, ‘মৃতের আত্মীয়দের তরফে সোমবার বিকেল পর্যন্ত কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এখনও আসেনি। অন্যান্য অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সিউড়ি সদর হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এই প্রথম নয়। এর আগেও একাধিকবার রোগীমৃত্যুতে তাঁদের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতালে ভর্তি থাকা কয়েকজন রোগীর বাড়ির লোকজন বলছিলেন, ‘এটা নতুন কোনও ঘটনা নয়। এই হাসাপাতালের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের আরও বেশি যত্নশীল হওয়া উচিত। রোগীদের সঙ্গে একটু ভালো ব্যবহার করলে, কী এমন ক্ষতি হয়ে যায়!’
সিউড়ির বাঁশজোড় গ্রামের বাসিন্দা শেখ লালু (৪৩) রবিবার সকালে কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় পরিবারের লোকেরা তাঁকে সিউড়ি হাসপাতালে ভর্তি করেন। অভিযোগ, সকালে ভর্তি করা হলেও দীর্ঘক্ষণ তাঁর চিকিৎসাই শুরু হয়নি। হাসপাতালের নার্সদের বারবার বললেও তাঁরা কোনও কর্ণপাত করেননি। রাতে মারা যান লালু। তারপরই উত্তেজিত রোগীর পরিজনদের সঙ্গে চিকিৎসক, নার্সদের সঙ্গে বাকবিতন্ডা শুরু হয়ে যায়। চলতে থাকে গালিগালাজও। বাশজোড় এলাকার প্রচুর মানুষ ওয়ার্ডে ঢুকে চিৎকার শুরু করে। তাদের বাধা দিলে দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হওয়ার উপক্রম হয়। ঠেলাঠেলিও চলে। ততক্ষণে হাসপাতালে চলে আসে সিউড়ি থানার পুলিস। রোগীর আত্মীয়দের ওয়ার্ড থেকে বাইরে বের দেওয়া হয়। রাতে আবারও উত্তেজনা ছড়ায়।
মৃতের ছেলে শেখ আলমগীর বলেন, ‘সকাল ১১টায় বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করাই। চিকিৎসা শুরু হয় বারোটায়। এরপরও ঠিকঠাক চিকিৎসা হয়নি। স্যালাইন পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। বারবার নার্সদের কাছে গিয়েছে। অনুরোধ করেছি। উল্টে আমাদের ধমক দিয়ে বলা হয়েছে, যখন চিকিৎসক আসবে তখন দেখবেন। খুব খারাপ ব্যবহার করেছে। ওঁদের এই গাফিলতিতেই বাবার মৃত্যু হল। মৃতের আত্মীয় শেখ রাজা বলেন, ‘আমরা যখনই নার্সদের কাছে গিয়েছি, তখনই দেখি তাঁদের যকেউ ফোন ঘাঁটছেন, কেউ বা লুডো খেলছেন। আমরা গামছা দিয়ে রোগীকে বেঁধে রেখেছি। একবার দেখতে পর্যন্ত এল না! ঠিকঠাক ভাবে চিকিৎসা লালু বেঁচে যেত।’
তবে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এর আগেও উঠেছে। নার্সদের দুর্ব্যবহার নিয়ে অনেকেই সরব হয়েছেন। রোগীদের প্রতি তাঁদের দায়বদ্ধতা দিন দিন কমছে বলে অভিযোগ। এছাড়াও চিকিৎসকদের একাংশ হাসপাতালে এসে যেভাবে মোবাইল ফোনে মুখ গুঁজে থাকেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সিউড়ির বাসিন্দা সন্দীপন সান্যাল বলেন, ‘সদর হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যবহার সত্যিই ভালো নয়। গায়ে হাত দিয়ে তো দেখেনই না। রোগীর সম্পর্কে কিছু জানতে চাইলে খারাপ ব্যবহার করেন। বিষয়টির উপর জেলা প্রশাসনের নজর দেওয়া প্রয়োজন।’