নিজস্ব প্রতিনিধি, আরামবাগ: সোমবার খানাকুল-১ পঞ্চায়েত সমিতিতে স্থায়ী সমিতির মিটিং ঘিরে ধুন্ধুমার বাধল। বৈঠক চলাকালীন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও অন্যান্য সদস্যদের বাঁশ, লাঠি, চেয়ারের পায়া দিয়ে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছে। দলেরই পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ ও তাঁর গোষ্ঠীর লোকজন এই হামলা চালায় বলে অভিযোগ। ঘটনায় সভাপতির মাথা ফেটে যায়। অফিসের বাইরে বোমাবাজি করা হয়। খবর পেয়ে বিশাল পুলিস বাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিকেলের দিকে পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শেখ নইমুল হক ও তাঁর ঘনিষ্ঠরা খানাকুল থানার চৌমাথায় টায়ার জ্বালিয়ে অবস্থান বিক্ষোভে বসেন। পূর্ত কর্মাধ্যক্ষের পাল্টা অভিযোগ, সাংগঠনিক জেলা সভাপতির ইন্ধনে একাধিক সদস্যকে মারধর করা হয়েছে। মহিলাদের হেনস্তা করা হয়েছে। ঘটনায় দলের দুই গোষ্ঠীর কোন্দল প্রকাশ্যে আসায় যথেষ্ট অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূল।
আরামবাগের এসডিপিও সুপ্রভাত চক্রবর্তী বলেন, পঞ্চায়েত সমিতির অফিস সংলগ্ন এলাকায় পুলিস মোতায়েন ছিল। সঙ্গে সঙ্গে উত্তেজিত জনতাকে হটিয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
খানাকুল-১ পঞ্চায়েত সমিতিতে গত কয়েক মাস ধরেই অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। নইমুল এই পঞ্চায়েতে সমিতির সহ সভাপতি ও পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ ছিলেন। যা নিয়ে দলেরই সদস্যদের একাংশ সরব হয়। বাধ্য হয়ে নইমুল সহ সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন। সেই পদে এখনও নির্বাচন হয়নি। এছাড়াও পূর্ত, খাদ্য, বিদ্যুৎ, মৎস্যের স্থায়ী সমিতির একাধিক সদস্য পদত্যাগ করেছেন। ফলে সমিতির কাজকর্ম থমকে গিয়েছে। সহ সভাপতি নির্বাচিত না হওয়ায় স্থায়ী সমিতিগুলি নতুন করে গঠন করা যায়নি। প্রশাসনের তরফে জটিলতা কাটাতে উদ্যোগ নেওয়া হয়। মহকুমা প্রশাসনের নির্দেশে এদিন স্থায়ী সমিতির বোর্ড মিটিং ডাকা হয়। পঞ্চায়েত সমিতির বৈঠক ঘিরে অশান্তির আশঙ্কা ছিলই। তারজন্য পুলিস মোতায়েন করা হয়েছিল। তারপরেও অশান্তি এড়ানো গেল না। বৈঠক শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়। বোমাবাজির শব্দে বাইরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বেশ কয়েকজন জখম হন। পুলিস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তৃণমূল কর্মীদের অফিস থেকে ২০০মিটারের বাইরে সরিয়ে দেয়।
পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তাপস ঘোষ বলেন, এদিন বৈঠক চলাকালীন নইমুল ও তার ঘনিষ্ঠ পঞ্চায়েত সদস্যরা বাঁশ, লাঠি, চেয়ারের পায়া দিয়ে আমাদের মারধর করে। সভাপতির মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। বৈঠক বানচাল করার জন্যই এসব করা হয়েছে।
সমিতির সভাপতি শম্পা মাইতি বলেন, বৈঠকে নইমুল ও তার ঘনিষ্ঠরা আমাদের মারধর করেছে। চেয়ারের পায়া দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করে। মাথা ফাটা অবস্থাতেই আমরা বৈঠক করেছি। সমিতির অফিসের ভিতর এমন ঘটনা কাঙ্খিত ছিল না। থানায় অভিযোগ করা হয়েছে।
পূর্ত কর্মাধক্ষ্য নইমুল হকও পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন। নইমুল ও তাঁর ঘনিষ্ঠরা এদিন চৌমাথায় টায়ার জ্বালিয়ে অবস্থানে বসে। নইমুল বলেন, সাংগঠনিক জেলা সভাপতির ইন্ধনে সমিতির একাধিক সদস্যকে মারধর করা হয়েছে। মহিলা সদস্যদের গায়ে হাত তোলা হয়েছে। দলের উচ্চ নেতৃত্ব ব্যবস্থা নিক। তৃণমূলের ব্লক সভাপতি দীপেন মাইতি এনিয়ে মুখ খুলতে চাননি। সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি রামেন্দু সিংহ রায়বলেন, বিষয়টি নিয়ে দল পদক্ষেপ নেবে।