নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: জটিলতা কেটে যাওয়ায় প্রাক্তন মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম সোমবার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে কাউন্সেলিংয়ে অংশগ্রহণ করলেন। এদিন কড়া নিরাপত্তায় তাঁকে বর্ধমান সংশোধনাগার থেকে আনা হয়। নির্দিষ্ট সময়েই তিনি পিএইচডি করার জন্য ইতিহাস বিভাগে কাউন্সেলিংয়ে অংশগ্রহণ করেন। অর্ণব বলেন, উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞ থাকব। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম এবং গৌরব বৃদ্ধির চেষ্টা করব। কারা দপ্তরের আধিকারিক এবং রাজ্য সরকারের সহযোগিতা ছাড়া এই জায়গায় আসা সম্ভব ছিল না। তাঁদের ধন্যবাদ।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সৈয়দ তানভীর নাসরিন বলেন, কাউন্সেলিং সম্পন্ন হয়েছে। এবার ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হবে। ১৯ জুলাই তিনি ভর্তি হতে আসবেন। ওইদিন নথিপত্র যাচাই করা হবে। ২০০জন ইন্টারভিউ দিয়েছিলেন। তারমধ্যে অর্ণব নির্বাচিত হয়েছেন। বাকি ছাত্রছাত্রীদের মতোই তিনি ক্লাস করবেন বলে আশা করছি। উনি নিজের যোগ্যতায় সুযোগ পেয়েছেন। বধর্মান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গৌতম চন্দ্র বলেন, কারা কর্তৃপক্ষ অর্ণব দামের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে বলে জানিয়েছে। ওঁর পিএইচডি সংক্রান্ত বিষয়ে কোনও অসুবিধা হবে না বলে আশা করছি। বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনার জন্য। কোনও ছাত্রছাত্রীকে ফেরানো আমাদের উদ্দেশ্য নয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ইন্টারভিউ দেওয়ার পরই সাজাপ্রাপ্ত মাওবাদী নেতার ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। পিএইচডি করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করতে হবে। তিনি জেলবন্দি অবস্থায় কীভাবে ক্লাস করবেন তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়। কর্তৃপক্ষ কাউন্সেলিং প্রক্রিয়া স্থগিত করে দেয়। পরে প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষের হস্তক্ষেপে জটিলতা কাটে। তিনি উপাচার্যকে ফোন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক বলেন, পুলিসি নিরাপত্তায় ওই সাজাপ্রাপ্ত মাওবাদী নেতা ক্লাস করবেন। ক্লাসের বাইরে পুলিস মোতায়েন থাকবে। এছাড়া অনলাইনেও তিনি ক্লাস করতে পারবেন। গাইড পেতেও তাঁর কোনও সমস্যা হবে না বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, একসময় অর্ণব মাওবাদী নেতা কিষেণজির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তিনি নিজেও হাতে আগ্নেয়াস্ত্র তুলে নিয়ে জঙ্গলমহল দাপিয়ে বেড়াতেন। একাধিক হিংসাত্মক ঘটনায় তাঁর নাম জড়িয়ে যায়। তিনি সেইসময় পুলিসের কাছে মোস্ট ওয়ান্টেড ছিলেন। ২০১২সালে তাঁকে শ্রীঘরে যেতে হয়। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক বলেন, সমাজ বদলানোর জন্য এক সময় ভুল পথ বেছে নিয়েছিলেন। তখন তাঁর ধারণা ছিল, বন্দুকের নলই ক্ষমতার উৎস। পরে তিনি বুঝেছেন, একে-৪৭ এর চেয়ে পেন অনেক বেশি শক্তিশালী। সেকারণেই তিনি বই-পেন হাতে সমাজের মূলস্রোতে ফিরতে চাইছেন। তাঁকে দেখে আরও অনেকেই অন্ধকার পথ থেকে আলোয় ফেরার চেষ্টা করবেন।