• ‘অ্যারেস্ট করিয়ে ভোটে জেতা যায় না’,  বঙ্গ বিজেপির একের পর এক ভরাডুবি নিয়ে বিস্ফোরক সুকান্ত
    বর্তমান | ১৬ জুলাই ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ‘অ্যারেস্ট করিয়ে ভোটে জেতা যায় না’। প্রথমে লোকসভা ভোট, আর তারপর উপ নির্বাচন। ভরাডুবির এই ধারাবাহিকতায় সরাসরি বঙ্গ বিজেপির একাংশের ‘ভুল নীতি’র দিকে আঙুল তুলে দিলেন দলেরই রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তাঁর সাফ কথা, ‘অনুব্রত মণ্ডলও তো জেলে রয়েছেন। তারপরও তো বীরভূম দখল করতে পারিনি আমরা। লোকসভা ভোটে বীরভূমের দু’টি আসনে জয় আসেনি।’ তিন বছর দায়িত্বে থাকার পর এই উপলব্ধি কেন? কে বা কারা তাঁর নিশানায়? এই প্রশ্ন কিন্তু উঠছে। কারণ হিন্দমোটরের সভায় সুকান্তবাবু স্পষ্ট ভাষাতেই বলেছেন, এজেন্সি নামিয়ে ভোট হয় না।


    বিধানসভা ভোটে বিপর্যয়ের পর ২০২১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর বঙ্গ বিজেপির সভাপতি পদে বসেন বালুরঘাটের এমপি। তাঁর নেতৃত্বে পঞ্চায়েত, পুরসভা, লোকসভায় লড়েছে দল। যার প্রতিটিতেই কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে বিজেপি। সেই প্রেক্ষিতে সুকান্তবাবুর উপলব্ধি, সংগঠন গোছানো যায়নি। রবিবার হুগলিতে জোড়া কর্মিসভায় পরোক্ষে নিজেই তা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন বর্তমান কেন্দ্রীয় শিক্ষা রাষ্ট্রমন্ত্রী। দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে সুকান্তর বার্তা, ‘আপনি পরিশ্রম করে যদি সংগঠন তৈরি করতে পারেন, তা হলে জিতবেন। আর না পারলে কোনওদিন জিতবেন না। ইডি-সিবিআই দেখিয়ে ভোটে জয় আসবে না। সব ছেড়ে আগে দলের সংগঠন মজবুত করার লক্ষ্যে ঝাঁপানো জরুরি। নরেন্দ্র মোদি আসবেন, ম্যাজিক ছড়িয়ে দেবেন, আমরা জিতে যাব—এটা হয় না। অনেকেই বলেন, দাদা সিবিআইকে বলুন। ওকে জেলে ঢুকিয়ে দিন। জিতে যাব। এসব করে কাঙ্ক্ষিত জয় আসবে না।’ উল্লেখ্য, বীরভূমের গোরু-বালি-কয়লার টাকা কলকাতায় বিজেপি নেতাদের কাছে যায়—এই অভিযোগ দলেরই একাধিক নেতা বারবার করেছেন। সুকান্তবাবুর এদিনের মন্তব্য সেই সব নেতাদের দিকেই ইঙ্গিত করছে বলে ধারণা রাজনৈতিক মহলের। 


    পাণ্ডুয়ার সভাতেও এই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কথায় ছিল সংগঠন-ফর্মুলা। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করিয়ে কিছু হবে না। জিততে হলে দলীয় নেতা-কর্মীদেরই আরও সক্রিয় হতে হবে। ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে। তবে সেটা বিরিয়ানির মশলার মতো। বিরিয়ানির চাল আর মাংস হতে হবে দলের কর্মীদেরই। তবেই ভালো বিরিয়ানি হবে।’ ঘটনাচক্রে, গতকয়েক বছরে রাজ্যে বিভিন্ন হিংসাত্মক ঘটনা ও দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তভার ইডি-সিবিআইয়ের হাতে গিয়েছে। এই ধরনের একাধিক মামলায় শাসকদলের বহু নেতা-মন্ত্রী বর্তমানে জেলে। এই ইস্যুতে নিরপেক্ষতা নিয়ে বারবার প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। বঙ্গ বিজেপি আশা করেছিল, ভোটযন্ত্রে এর প্রভাব পড়বে। যদিও তেমন কিছু হয়নি। সোমবার সুকান্তবাবুর বার্তা প্রশ্ন তুলছে, তাহলে কি এজেন্সি ত্বত্ত্ব থেকে সরে আসবে বঙ্গ বিজেপি? 


    এ বিষয়ে রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের কটাক্ষ, ‘বঙ্গ বিজেপি অস্তিত্ব সঙ্কটে ভুগছে। কারণ, ওদের নেতারা রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের এজেন্সি দিয়ে ভয় দেখিয়ে ভোটে জিততে চেয়েছিল। আমরা মানুষের সেবা করি। আন্দোলনে শামিল হয়ে জনতার পাশে থাকি। আর বিজেপির রাজনীতি ইডি-সিবিআই-আইটি নির্ভর, যা বাংলার মানুষ বারবার প্রত্যাখ্যান করেছে।’ কর্মিসভায় বঙ্গ বিজেপির সভাপতির বার্তাকে বিলম্বিত বোধোদয় বলে ব্যাখ্যা করেছেন কলকাতার মেয়র।
  • Link to this news (বর্তমান)