• আগস্টেই ত্রিস্তর পঞ্চায়েতকে ৮০০ কোটির তহবিল রাজ্যের, কেন্দ্রীয় বঞ্চনার আবহেই পদক্ষেপ নবান্নের
    বর্তমান | ১৬ জুলাই ২০২৪
  • প্রীতেশ বসু, কলকাতা: গ্রামোন্নয়নের একাধিক প্রকল্পের টাকা আটকে রেখেছে মোদি সরকার। এই পরিস্থিতিতে একেবারে নিজের কোষাগার থেকে গ্রামীণ এলাকা উন্নয়ন খাতে ৮০০ কোটি টাকা দিতে চলেছে রাজ্য সরকার। সূত্রের খবর, আগস্ট মাসের শুরুতেই এই টাকা পৌঁছে যাবে রাজ্যের প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদের কোষাগারে। তা ব্যবহার করা হবে গ্রামীণ এলাকার সামগ্রিক উন্নয়নের কাজে। তৈরি হবে নানা ধরনের নতুন পরিকাঠামো। তার সুবাদে সৃষ্টি হবে নতুন নতুন কাজের সুযোগ। কেন্দ্র ১০০ দিনের কাজ বাবদ টাকা বরাদ্দ বন্ধ রাখায় ‘কর্মশ্রী’ প্রকল্প চালু করেছে নবান্ন। পঞ্চায়েতগুলির জন্য রাজ্যের এই নয়া বরাদ্দের ফলে কর্মশ্রী প্রকল্পে আরও বেশি করে কাজ দেওয়া যাবে বলেই মনে করছেন রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা।


    পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার জানান, কেন্দ্র যে একেবারে রাজনৈতিক কারণে বাংলার প্রতি বঞ্চনা করে চলেছে তা মানুষ বুঝে গিয়েছেন। আর তার ঠিক উল্টো পথেই হাঁটেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল স্তরে মানুষ যাতে সবরকম সুযোগ-সুবিধা এবং কাজ পান, সেই লক্ষ্যেই তিনি উদ্যোগ নেন। এই পদক্ষেপ তারই একটি নতুন উদাহরণ। 


    পঞ্চায়েত এবং পুর এলাকার উন্নয়নের জন্য পঞ্চম রাজ্য অর্থ কমিশনের টাকা দেয় রাজ্য। পঞ্চায়েতের জন্য একটি অর্থবর্ষে দুটি কিস্তিতে ৮০০ কোটি টাকা করে দেওয়া হয় রাজ্যের কোষাগার থেকে। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের প্রথম কিস্তির টাকা ছাড়া হয়েছিল গত নভেম্বরে। নিয়ম অনুযায়ী সার্বিকভাবে ৬০ শতাংশ টাকা খরচ করলে পরবর্তী কিস্তির টাকা ছাড়ে নবান্ন। কিন্তু নির্বাচন এসে যাওয়ায় জেলাগুলির পক্ষে এবার ওই পরিমাণ টাকা খরচ করা সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি এই টার্গেটে পৌঁছনো সম্ভব হয়েছে। তারপরই রাজ্য পঞ্চায়েত দপ্তরের তরফে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের দ্বিতীয় কিস্তির টাকা ছাড়ার জন্য রাজ্য অর্থদপ্তরকে অনুরোধ করা হয়েছে। এমাসের শেষেই এই টাকা রাজ্য অর্থদপ্তর ছাড়বে বলেই নবান্ন সূত্রের খবর। তাহলে রাজ্য পঞ্চায়েত দপ্তর আগস্টের শুরুতেই ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের সকলকেই ওই টাকা পাঠিয়ে দেবে। কেন্দ্রের পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের মতো রাজ্যের পঞ্চম অর্থ কমিশনের ক্ষেত্রেও রয়েছে শর্তাধীন এবং নিঃশর্ত তহবিল। শর্তাধীন তহবিল বাবদ বরাদ্দ অর্থ খরচ করতে হবে—জৈববৈচিত্র্য, প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ এবং কাজে স্বচ্ছতা বৃদ্ধির নানা প্রকল্পে। নিঃশর্ত তহবিলের টাকায় অন্যান্য পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ করে পঞ্চায়েতগুলি। গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির ক্ষেত্রে তাদের আগের কাজের গুণমান বিচার করেই পরবর্তী টাকা দেওয়া হয়। 


    সূত্রের খবর, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে কোন পঞ্চায়েত কত টাকা পাবে, তা বিচার করার জন্য নতুন করে কিছু মাপদণ্ড নির্ধারণ করা হবে। সেটি নির্ণয় করার কাজও চলছে। কিন্তু ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের প্রথম কিস্তির ৬০ শতাংশ টাকা সামগ্রিকভাবে খরচ হলেও বহু জেলা এই টার্গেটে পৌঁছতে পারেনি। ফলে ভালো কাজ করা জেলাগুলির (যাদের ৮০ শতাংশের বেশি খরচ হয়েছে) উপর ভর করেই অন্যান্য জেলা (যাদের ৬০ শতাংশের কম খরচ হয়েছে) বৈতরণী পেরিয়েছে। আগামী দিনেও যাতে এমনটি না-হয়, তার জন্যই মাপদণ্ডে বদল আনার তোড়জোড় শুরু করেছে রাজ্য সরকার। 
  • Link to this news (বর্তমান)