• সুস্বাদু বোরোলির চাষ পুকুরেই, নজির কোচবিহারের মৎস্যচাষির
    বর্তমান | ১৬ জুলাই ২০২৪
  • অলকাভ নিয়োগী, বিধাননগর: উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি নদীতেই পাওয়া যায় সুস্বাদু বোরোলি মাছ। আকারে বড় না-হলেও মাছটির স্বাদের প্রেমে পড়েছেন বহু সেলিব্রেটিও। পর্যটকদের কাছেও মাছটি যথেষ্ট আর্কষণীয়। কিন্তু, নদীর বদলে পরীক্ষামূলকভাবে পুকুরে বোরোলি চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন কোচবিহারের মৎস্যজীবী সমীরকুমার দত্ত।


    মৎস্য গবেষকদের কথায়, দেশে নজির গড়েছেন তিনি। যদি স্থায়ীভাবে পুকুরে চাষ সম্ভব হয়, তাহলে যেকোনও সময় চাইলেই মিলবে বোরোলির স্বাদ। বোরোলিসহ বিভিন্ন ধরনের মাছচাষে সাফল্যে মেলায় একাধিক পুরস্কার পেয়েছেন সমীরবাবু। পেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে ‘কৃষক সম্মান’ও। এবার তাঁর সাফল্যের ঝুলিতে নবতম সংযোজন আইসিএআর-সেন্ট্রাল ইনল্যান্ড ফিশারিজ ইনস্টিটিউটের (সিফরি) পক্ষ থেকে জাতীয় স্তরের সম্মান। তাঁকে সম্মানিত করতে পেরে আপ্লুত সিফরিও।


    কোচবিহারের তুফানগঞ্জে বাড়ি সমীরবাবুর। বিকম পাশ করার পর তিনি সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। কিন্তু, সেই চাকরি ছেড়ে ৪৪ বছর আগে ১৯৮০ সাল থেকে শুরু করেন মাছচাষ। দু’বছর পর থেকেই হ্যাচারিতে কৃত্রিম প্রজননের ব্যবস্থা চালু করেন তিনি। এখন ৪০ একর জমিতে নানা ধরনের মাছচাষ করেন তিনি। তাঁর সঙ্গে যুক্ত হয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছেন প্রায় এক হাজার মানুষ। বিভিন্ন ধরনের মাছচাষের পর তিনি ২০১৭ সালে পুকুরে বোরোলি মাছ চাষের উদ্যোগ নেন এবং ২০১৯ সাল পর্যন্ত তা করেন। নদী থেকে ডিমপোনা সংগ্রহ করে পুকুরে বড় করেছেন সমীরবাবু। তবে, বোরোলির কৃত্রিম প্রজনন করা যায়নি। এবার তাঁর দ্বিতীয় লক্ষ্য, বোরোলির কৃত্রিম প্রজনন।


    পুকুরে বোরোলি চাষে সফলতা মেলায় ২০১৭ সালে জেলা স্তরে ‘বেস্ট অ্যাওয়ার্ড ইন দ্য ফিল্ড অব কনজারভেশন অব বোরোলি ফিশ’, পুরস্কার পেয়েছেন। বোরোলিসহ নানা ধরনের মাছচাষে সফল মৎস্যচাষি হিসেবে ২০১৯ সালে মুখ্যমন্ত্রীর কৃষক সম্মান, রাজ্য স্তরে ইনোভেটিভ ফার্মিংয়ের উপর মীনমিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। ২০১৫ সালে জেলা স্তরে ‘লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ও পেয়েছেন। গত ১০ জুলাই সিফরিতে জাতীয় মৎস্যপালক দিবসে আটটি রাজ্য থেকে দেশের ১২ জন সফল মৎস্যচাষিকে সম্মাননা দেওয়া হয়। তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ থেকে ওই সম্মান পান সমীরবাবু। পুরস্কার পেয়ে তিনি উচ্ছ্বসিত। সমীরবাবু বলেন, ৪৪ বছর ধরে নানা ধরনের মাছচাষ করছি। তবে, বোরোলির চাষ সম্পূর্ণ আলাদা রকমের। ডিম পাড়ার সময় এই মাছ পাহাড়ি নদীর উপরে উঠে যায়। সেখানেই ডিম পাড়ে। পুকুরে তারা ডিম পাড়ে না। আমি নদী থেকে ডিমপোনা সংগ্রহ করেই তিনবছর চাষ করেছি। পুকুরে বড়ও হয়েছে। এবার হ্যাচারিতে কৃত্রিম প্রজনন করার ইচ্ছে রয়েছে। ফলে, পুকুরেও ডিম পাড়বে বোরোলি।
  • Link to this news (বর্তমান)