নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বিভিন্ন দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিংয়ে অন্যান্য সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে নিয়মিত প্রথম স্থান অধিকার করে যাদবপুর। সরকারি তো বটেই, বেসরকারি র্যাঙ্কিংয়েও এগিয়ে থাকে তারা। পিছনে থাকে অনেক নামকরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং বহু আইআইটিও। তবে কিছু কারণে আন্তর্জাতিক পড়ুয়া টানার ক্ষেত্রে যাদবপুর পিছিয়ে থাকে। এবার নিউটাউনের তৃতীয় ক্যাম্পাসকে গবেষণা এবং উদ্ভাবনার উৎকর্ষ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পড়ুয়াবান্ধব করার প্রয়াস চালাচ্ছে তারা। সেখানে এই পড়ুয়াদের জন্য থাকবে অত্যাধুনিক ছাত্রাবাস।
পড়াশোনা এবং গবেষণার মান নিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কখনও প্রশ্নের মুখে পড়েনি। তবে র্যাগিংয়ে ছাত্র মৃত্যু সহ বিভিন্ন ‘উচ্ছৃঙ্খল’ ঘটনাবলীর জেরে বারবার সংবাদ মাধ্যমের তোপের মুখে পড়েছে এই প্রতিষ্ঠান। ফলে এখানে পড়ুয়া নিরাপত্তা এখনও একটি বড় ইস্যু। এছাড়াও প্রতিপদে যে সমস্যার মুখোমুখি যাদবপুরকে হতে হয়, সেটা হল তহবিল। এর জন্য সরকার বা প্রাক্তনীদের কাছে মাঝেমধ্যেই সাহায্য চায় তারা। ছাত্র সুরক্ষায় নজরদারির ব্যবস্থা, ছাত্রাবাস তৈরি প্রভৃতি খাতে ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের কাছ থেকে বড়সড় অনুদান পেয়েছে যাদবপুর। এবার ছাত্র সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং বিকল্প আয়ের সংস্থান তৈরির লক্ষ্যে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চাইছে। আন্তর্জাতিক পড়ুয়া এলে প্রতিষ্ঠানে বাড়তি অর্থ আসে। আবার অত্যাধুনিক ক্ষেত্রে গবেষণার জন্যও বেসরকারি অনুদানের সুযোগ খুলে যায়। সেই কারণে তৃতীয় ক্যাম্পাসকে পাখির চোখ করতে চায় যাদবপুর।
২০১৮ সালে সরকারের কাছ থেকে পাওয়া নিউটাউনের জমিটি পাঁচ একরের। কর্তৃপক্ষের ইচ্ছা, সেখানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) পার্ক এবং যুগোপযোগী ক্ষেত্রের গবেষণাকেন্দ্র তৈরি করার। এ ধরনের গবেষণায় অর্থ আসে। বেসরকারি সংস্থার সঙ্গেও চুক্তি করাও সহজ হয়। ফলে ক্যাম্পাসের সঙ্গে শিল্পক্ষেত্রের যোগাযোগের পথও সুগম হয়ে ওঠে। আন্তর্জাতিক পড়ুয়াদের জন্যও নিরাপদ এবং সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন হস্টেল তৈরির পিছনেও রয়েছে একই উদ্দেশ্য। এশিয়া, আফ্রিকা বা ল্যাটিন আমেরিকার মতো মহাদেশগুলি থেকে প্রথম থেকেই পড়ুয়া পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী প্রতিষ্ঠান। তাদের হাত ধরে আসবে বিদেশি মুদ্রাও। সেখানে কোনওরকম র্যাগিং বা আহমেদাবাদে গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলের মতো বিদেশি পড়ুয়াদের উপরে বহিরাগতদের হামলার মতো কোনও বিরূপ সম্ভাবনা প্রথমেই নির্মূল করতে চায় তারা।
গত জুলাইয়ে হিডকো তথা এনকেডিএ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে জানায়, তারা যেভাবে দীর্ঘদিন জমি ফেলে রেখেছে, তাতে নানা সমস্যা হতে পারে। তারা যেন আপাতত সেটি ঘিরে ফেলার ব্যবস্থা করে। তারপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসতে না বসতেই আগস্টে ঘটে যায় র্যাগিংয়ে মৃত্যুর ঘটনা। বহু পটপরিবর্তন হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে। সরকারের কাছে পাঁচিল দেওয়ার অর্থও চেয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়। তা না মেলায় নিজেদের অর্থেই জমি ঘিরে ফেলে তারা। কর্পোরেট সোশাল রেসপন্সিবিলিটি বা সিএসআর’এর মাধ্যমে তারা যাতে টাকা পেতে পারে, তার জন্য সরকার তাদের সিএসআর পোর্টালে ডিটেইলড প্রজেক্ট রিপোর্ট (ডিপিআর) জমা দিতে বলে। সেই রিপোর্টই তৈরি হচ্ছে। রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু বলেন, ‘ডিপিআর বিষয়ক একটি কমিটি তৈরি হচ্ছে। সব ফ্যাকাল্টির সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। সরকারের কাছে আমরা আশাবাদী। তহবিলের জন্য প্রাক্তনীদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হবে।’