একাধিক মৃত্যুতেও হুঁশ নেই, শহরে যত্রতত্র ঝুলছে বিদ্যুতের উন্মুক্ত তার
বর্তমান | ১৬ জুলাই ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: দৃশ্য-১: ভবানীপুরের যদুবাবু বাজার। রাস্তার ধারের বিদ্যুতের খুঁটি থেকে ঝুলছে তার। সেখানে টেপ জড়িয়ে যুক্ত করা হয়েছে অন্য তার। সবটাই রয়েছে খোলা অবস্থায়। বৃষ্টি পড়লেই বিপত্তির আশঙ্কা।
দৃশ্য-২: বউবাজারের নির্মলচন্দ্র দে স্ট্রিট। ট্রামলাইনের ধারের ফুটপাত। সেখানে হকারদের সারি সারি ডালা রাখা। সবক’টি ডালার উপর আলো লাগানোর হোল্ডার। ফুটপাতের উপর ছাদহীন ডালার উপরে আলো লাগানোর ব্যবস্থা হল কীভাবে? সৌজন্যে সেই বিদ্যুতের খুঁটি। সেখান থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে আলো জ্বালাচ্ছেন হকাররা। ব্ল্যাকটেপের পলকা ‘সুরক্ষা’য় চলছে এই কারবার।
শহরের অন্যত্র নজর দিলেও এরকম বহু দৃশ্য চোখে পড়বে। প্রতি বছর বর্ষার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে শহরে। বছর দু’য়েক আগে রাজভবনের সামনে জমা জলে বিদ্যুতের খুঁটি স্পর্শ করায় মৃত্যু হয় এক যুবকের। ওই বছরই হরিদেবপুর থানা এলাকায় টিউশন পড়ে ফেরার পথে একইভাবে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ হারায় ১৩ বছরের এক কিশোর। ২০২১ সালে দমদমে একই ঘটনা ঘটে। একইসঙ্গে দুই নাবালিকার মৃত্যু হয় সেই ঘটনায়। এরপরই রাজ্য প্রশাসনের তরফে সব পুরসভাগুলিকে বিদ্যুতের তার সম্পূর্ণভাবে ঢেকে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সম্প্রতি শহরের একাধিক জায়গায় দেখা গেল, বিদ্যুতের তার প্রাথমিকভাবে ঢেকে দেওয়ার কাজ হলেও নজরদারির অভাব প্রকট। বউবাজার, কলেজ স্ট্রিট, সূর্য সেন স্ট্রিট, এম জি রোড সহ মধ্য কলকাতায় এই খোলা তার ফেলে রাখার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। শুধু তাই নয়, ল্যাম্পপোস্ট ও বিদ্যুতের খুঁটি থেকে হুকিং করা হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। বউবাজার এলাকার বাসিন্দা অভিরাজ মোদক বলেন, ‘এখানে হকাররা বসছেন দীর্ঘদিন ধরে। মুখ্যমন্ত্রীর নিষেধাজ্ঞার পর সাময়িকভাবে বিক্রিবাটা বন্ধ। ল্যাম্পপোস্ট থেকে বিদ্যুৎ টেনে আলো জ্বালান এখানকার হকাররা। একটি ল্যাম্পপোস্ট থেকে একাধিক কানেকশন করা আছে। হরেক রঙের টেপ দিয়ে মোড়া রয়েছে জোড়া দেওয়া জায়গাগুলি।’ স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, সামনেই একটি স্কুল রয়েছে। পড়ুয়ারা সেখান নিত্যদিন যাতায়াত করে। যেকোনও সময়ে বড়সড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা তাই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কমবেশি একই অবস্থা তারাতলা মোড়েও। তারের জঙ্গল তৈরি হয়েছে বিদ্যুতের খুঁটিতে। নীচেই ফাস্টফুডের স্টল। ওই ব্যবসায়ীর কথায়, ‘ঝুঁকি নিয়েই কাজ করি। এত তারের মধ্যে যে কোনও সময় শর্ট সার্কিট হয়ে যেতে পারে।’ তাঁর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে জায়গাটির এই অবস্থা। একাধিকবার বলেও কোনও কাজ হয়নি। এ বিষয়ে কলকাতা পুরসভার আলোক বিভাগের মেয়র পারিষদ সন্দীপরঞ্জন বক্সি বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন এলাকায় লাগাতার মাইকিং করছি, কেউ যাতে বর্ষার সময় ল্যাম্পপোস্টে হাত না দেন। ল্যাম্পপোস্টের ফিডার বক্সগুলি নিয়মিত পরীক্ষা করা হচ্ছে। নির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ নিজস্ব চিত্র