• নকল সোনার কারবারি সাদ্দামের বাড়িতে ৪০ ফুট লম্বা সুড়ঙ্গ,  কুলতলিতে আক্রান্ত পুলিস, চলল গুলি, গ্রেপ্তার ২
    বর্তমান | ১৬ জুলাই ২০২৪
  • সংবাদদাতা, বারুইপুর: শত্রুর হাত থেকে বাঁচতে রাজা-মহারাজাদের কেল্লায় সুড়ঙ্গপথের কথা উল্লেখ রয়েছে ইতিহাসের পাতায়। এই যুগে এবার সেই গোপন পথের হদিশ মিলল, পিতলের উপর রং করে নকল সোনা বানানোর এক কারবারির বাড়িতে! আইন রক্ষকদের নাগাল এড়াতে সুড়ঙ্গ বানিয়ে রেখেছিল ওই দুষ্কৃতী। কুলতলির পয়তারহাটে সাদ্দাম সরদার নামে ওই দুষ্কৃতীর শোওয়ার ঘরের নীচে ৪০ ফুটের সুড়ঙ্গ দেখে ‘থ’ পুলিস। সেই গোপন পথ গিয়ে মিশেছে মাতলা নদী সংলগ্ন খালে। পুলিসের হানার মাঝে তা ধরেই ‘পগার পার’। সোমবার প্রতারণার একটি মামলায় সাদ্দামকে পাকড়াও করতে  সকালে তার বাড়ি গিয়েছিল কুলতলি থানার পুলিস। অভিযোগ, তখন সাদ্দামের বাড়ির লোক ও গ্রামবাসীরা যৌথভাবে চড়াও হয় উর্দিধারীদের উপর। পুলিসকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর অভিযোগও ওঠে অভিযুক্তের ভাইয়ের বিরুদ্ধে। এরপরই ধস্তাধস্তি শুরু হয় দু’পক্ষে। সেই সুযোগে চম্পট দেয় সাদ্দাম। বিকেলে আরও ফোর্স নিয়ে সেখানে অভিযান চালায় পুলিস। তখনই বাড়ির ভিতরে ঢুকে তল্লাশি চালানোর সময় ওই সুড়ঙ্গের খোঁজ মেলে।  


    কী করে মিলল এই সুড়ঙ্গের খোঁজ? তল্লাশির সময় সাদ্দামের শোওয়ার  ঘরে খাটের নীচে মেঝেতে কংক্রিটের ঢাকনা দেখে সন্দেহ হয়েছিল তদন্তকারীদের। তা খুলতেই হদিশ মলে সুড়ঙ্গের। চোরা পথ নীচে নেমে গিয়েছে। প্রবেশ পথের মুখে রয়েছে গ্রিল লাগানো একটি গেট। সুড়ঙ্গের শেষ মাথায় পৌঁছে পুলিস দেখতে পায়, বাইরের দিক দিয়ে তালা বন্ধ করা রয়েছে। তদন্তকারীরা মনে করছেন, সকালের গোলমালের পর সাদ্দাম এই সুড়ঙ্গপথ দিয়েই বেরিয়ে খাল ধরে মাতলার জলপথে পগারপার হয়েছে। খোঁজ খবর করে পুলিস জেনেছে, ওই সুড়ঙ্গের মুখে খালে একটি ডিঙি নৌকা বাঁধা থাকত। বিপদ এলেই যাতে এই জলপথ ধরেই পালানো যায়, সেই পরিকল্পনা একদম তৈরি ছিল সাদ্দামের। 


    পুলিস সূত্রের খবর, জয়নগর-কুলতলিতে সক্রিয় ‘সোনার প্রতিমা’ বিক্রির নামে চলা প্রতারণা চক্রের মূল মাথা সাদ্দামই। তার বিরুদ্ধে একাধিক এমন অভিযোগ রয়েছে। মাটি খুঁড়ে মেলা প্রাচীন আমলের সোনার দেব-দেবী  মূর্তি লক্ষ লক্ষ টাকায় বিক্রির টোপ সোশ্যাল মিডিয়ায় দিত সাদ্দাম। সেই ফাঁদে পড়ে মানুষজন টাকা নিয়ে সাদ্দামের কথামতো জায়গায় পৌঁছতেন। সেখানে অস্ত্র দেখিয়ে সর্বস্ব লুট করে পালিয়ে যেত ওই দুষ্কৃতী ও তার দলবল। 


    এদিন সাদ্দামকে তার বাড়িতে গ্রেপ্তার করতে যাওয়ার পরই শুরু হল গোলমাল। সেই সময়েই বাড়ির মহিলা ও পুরুষরা চড়াও হয় পুলিসের উপর। অফিসারদের হাত ধরে টানাটানি করতে থাকেন পরিবারের লোকজন। ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া হয় কয়েকজন পুলিস কর্মীকে। এই ঘটনায় কুলতলি থানার তিনজন পুলিস কর্মী সামান্য আহত হয়েছেন। সাদ্দামের দাদা সাইরুলের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র আছে জানতে পেরে, তাকে ধরার জন্য পুলিস এগতেই সে গুলি চালিয়ে দেয়। এর জেরে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এই প্রসঙ্গে বারুইপুর পুলিস জেলার সুপার পলাশচন্দ্র ঢালি বলেন, এক দুষ্কৃতীকে ধরতে গেলে শূন্যে গুলি চালনার ঘটনা ঘটে। আমাদের পুলিসকর্মীরাও ধাক্কাধাক্কিতে আহত হয়েছেন। এই ঘটনায় রাবেয়া সরদার ও মাসুদা সরদার নামে দুই  মহিলাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য অভিযুক্তদের সন্ধানে জোরদার তল্লাশি শুরু হয়েছে। - ফাইল চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)