• ‘জয়রাইডই ঠিক আছে’, ‘শ্লথ’ ট্রাম নিয়ে আর ভাবতে নারাজ শহর
    বর্তমান | ১৬ জুলাই ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: দ্রুতগামী জীবন। আর সেই জীবনে ‘ঠং ঠং’ করে দেওয়া বিপদ সঙ্কেত বা ‘ঠকাস’ শব্দ তুলে গিয়ার বদল যেন ভীষণ বেমানান। অ্যাক্সেলেটরের চাপে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ০ থেকে ১০০ কিলোমিটারের গতি ছুঁয়ে ফেলে অত্যাধুনিক গাড়ি। সেই গতির সঙ্গে কোথাও যেন তাল মেলাতে ব্যর্থ শ্লথগতির ট্রাম। তার পরেও রয়ে যায় নস্টালজিয়া। ফেলে আসা আবেগ। আর সেই আবেগের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ট্রাম। তাই ময়দানের বুকে জয়রাইডে ‘না’ নেই শহরবাসীর। তবে ব্যস্ত জীবনে গণপরিবহণ হিসেবে ট্রামের ব্যবহারিক প্রয়োগ চায় না তিলোত্তমাবাসী। 


    ১৫০ বছরের বর্ণময় ইতিহাস। সেই ইতিহাস সঙ্গে নিয়েই এবার পাকাপাকিভাবে বইয়ের পাতায় ঠাঁই হচ্ছে ট্রামের। পরিবহণ দপ্তর সূত্রে খবর, জনস্বার্থ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম চালানো নিয়ে রাজ্য সরকার কী পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা জানতে চায় আদালত। সম্প্রতি প্রশাসনের অনুমোদন মাফিক সেই ট্রাম পাকাপাকিভাবে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‘বর্তমান’-এ সেই খবর প্রকাশিত হতেই রীতিমতো নস্টালজিয়ায় ভুগছে শহর। তবে স্কুল-কলেজ বা অফিসযাত্রীদের এনিয়ে বিশেষ ভ্রুক্ষেপ নেই। তাঁদের কথায়, অফিস টাইমে রাস্তায় প্রচণ্ড জ্যাম থাকে। সেই জ্যাম ঠেলে ট্রামে চেপে গন্তব্যে যেতে গেলে অর্ধেক দিন কাবার। তার চেয়ে বাস-অটোই ভালো।


    তার পরেও ট্রাম ছোটবেলার স্মৃতি। এককথায় তা স্বীকার করছেন বেশিরভাগ মানুষই। উত্তর কলকাতার বাসিন্দা জয়তী মজুমদারের কথায়, ‘স্কুলে যাওয়ার একমাত্র ভরসা ছিল ট্রাম। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়েও মাঝেমধ্যে চড়েছি। তবে এখন আর ওঠা হয় না। বর্তমান যুগে আমরা কেউই ট্রামে চড়ে কোনও জরুরি কাজে যাই না। একমাত্র যদি বৈদ্যুতিক ইঞ্জিন লাগিয়ে বিদেশের মতো চালানো সম্ভব হয়, তাহলেই ট্রামের ব্যবহার উপযোগী হবে। কিন্তু, কলকাতার মতো পুরনো শহরে তা কতটা আদৌ সম্ভব?’ রাসবিহারীর বাসিন্দা শালিনী দাস বলেন, ‘ছোটবেলায় গড়িয়াহাটে পড়তে যেতাম। ট্রামই ছিল ভরসা। দেড় টাকা টিকিট ছিল। সেই দিনগুলি খুব মনে পড়ে।’ শালিনীর কথায়, সোমবার সকালে ট্রাম বন্ধের খবর দেখে পুরনো স্মৃতিগুলি যেন তাজা হয়ে গেল। 


    উল্লেখ্য, ট্রাম স্তব্ধ হওয়ার খবরে সবচেয়ে স্বস্তি পেয়েছেন শহরের বাইকচালকরা। কারণ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গণ পরিবহন হিসেবে শহরে এই মুহূর্তে তিনটি রুটে ট্রাম চলে। তার জেরে শহরে এখনও বসানো রয়েছে ট্রাম লাইন। এছাড়াও একাধিক রাস্তায় ট্রাম রুট বন্ধ হলেও লাইন ওঠেনি। সেই লাইনে হামেশাই পিছলে যান বাইকচালকরা। কলকাতা পুলিসের হিসেব, প্রতিদিন শহরে অন্তত ১৫-২০ জন বাইকচালক ট্রাম লাইনে পিছলে যান। সংখ্যাটি বর্ষাকালে আরও বৃদ্ধি পায়। 
  • Link to this news (বর্তমান)