• প্রোমোটার ও গুন্ডাদের সঙ্গে সম্পর্ক নয়, জানাল তৃণমূল
    বর্তমান | ১৬ জুলাই ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর: পরপর নির্বাচনী সাফল্যের মধ্যেও আড়িয়াদহ কাণ্ডে বিব্রত হতে হয়েছে শাসক দলকে। স্থানীয় স্তরের নেতা ও কাউন্সিলারদের কর্মকাণ্ডে বিরক্ত তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বও। সেই আবহে সোমবার কামারহাটির নজরুল মঞ্চে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে করেছে জোড়ফুল শিবির। সেই বৈঠক থেকে স্পষ্ট নিদান—‘কোনও প্রোমোটার, গুন্ডা ও দাগী আসামীর সঙ্গে দলের নেতা-কর্মীদের সম্পর্ক রাখা চলবে না। এহেন কারও সঙ্গে যোগাযোগ প্রমাণ হলে দল শো-কজ করার পাশাপাশি বহিষ্কারের মতো কঠোর পদক্ষেপ নেবে।’ যদিও শাসক দলের এই ঘোষণাকে ‘আই ওয়াশ’ বলে কটাক্ষ করেছে বিরোধীরা। তাদের পাল্টা প্রশ্ন, তাহলে যে সমস্ত প্রোমোটার এখন কাউন্সিলার হয়েছেন বা কাউন্সিলার হয়ে যাঁরা প্রোমোটিং করছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে কোন নীতি নিয়ে এগবে শাসক শিবির। কারণ উত্তর শহরতলির যে এলাকা নিয়ে ‘নিদান’ এসেছে, সেখানে এরকম প্রোমোটার-কাউন্সিলারের সংখ্যা কম নয়। 


    স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আড়িয়াদহে ‘জয়ন্ত সিং’ গ্যাংয়ের অত্যাচারের কাহিনী প্রকাশ্যে আসার পর বিভিন্ন মহলে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল। পুলিস ইতিমধ্যে জয়ন্ত ও তার সাগরেদদের গ্রেপ্তার করেছে। এই আবহে সোমবার কামারহাটি পুরসভার কাউন্সিলার সহ বিভিন্ন স্তরের ১৩০ জন নেতাকে নিয়ে প্রায় একঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে সাংসদ সৌগত রায়, বিধায়ক মদন মিত্র, পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল সাহা, ভাইস চেয়ারম্যান তুষার চট্টোপাধ্যায় সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। সূত্রের খবর ওই বৈঠকে মদনবাবু ওয়ার্ড ধরে ধরে ভোট প্রাপ্তির হার নিয়ে পর্যালোচনা করেন। বলেন, আমারও যদি কোথাও ভুলভ্রান্তি থাকে, তা শুধরে নেব। সৌগতবাবু বলেন, যেসব ওয়ার্ডে বেশি ভোটে আমরা হেরেছি, সেইসব ওয়ার্ডের কাউন্সিলারদের আগামী দিনে টিকিট দেওয়া হবেনা। কম ভোটে হেরে যাওয়া ওয়ার্ডে কাউন্সিলারদের কাজ নিয়ে পর্যালোচনা করতে হবে। গোপালবাবু বলেন, ওয়ার্ডে কোনও বেআইনি কাজ হলে আপনারা আমাকে জানান। বেআইনি নির্মাণ হলে খবর দিন। আপনারা চোখ-কান খোলা রাখুন। আমরা আইনগত পদক্ষেপ নেব। প্রকাশ্যে মুখ খোলার জন্য কয়েক জন কাউন্সিলারকে  ভর্ৎসনা করেন বিধায়ক ও সাংসদ।  


    বৈঠকের শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে মদনবাবু বলেন, আজকের বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়েছে কামারহাটির যে কোনও বিষয়ে দলের তরফে একমাত্র আমাদের নেতা সৌগতবাবু বক্তব্য রাখবেন। এছাড়া রাজ্যের মুখপাত্ররা বলবেন।  কামারহাটির স্থানীয় কেউ বক্তব্য রাখলে, তা দলবিরোধী কাজ হবে। দল পদক্ষেপ নেবে। সৌগতবাবু বলেন, কিছু কিছু ভুল হয়েছে। কার ভুল এখন এসব ভেবে লাভ নেই। অতীতের ভুল সংশোধন করতে হবে। দলের কোনও নেতা-কর্মীই প্রোমোটার, গুন্ডা ও দাগী দুষ্কৃতীদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে পারবে না। আমরা সর্বসম্মত ভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দলের সঙ্গে গুন্ডা বদমায়েশদের নাম জড়ালে এই ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। জয়ন্তের প্রাসাদোসম বাড়ির প্রসঙ্গে বলেন, আমরা জানতাম না। পুরসভা আইনানুগ পদক্ষেপ নেবে। যদিও এদিন শাসক দলের এই নির্দেশকে কেন্দ্র করে বারাকপুর মহকুমা জুড়ে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এই সিদ্ধান্ত যদি বাস্তবায়িত হয়, তাহলে তা কি স্রেফ কামারহাটির জন্য? নাকি এই নীতি সর্বত্র প্রযোজ্য হবে। কামারহাটির প্রাক্তন বিধায়ক মানস মুখোপাধ্যায় বলেন, ওদের পাঁচ কাউন্সিলার প্রোমোটিং করেন। তাহলে ওঁদের কী হবে? তৃণমূলের নেতারা প্রোমোটার ও দুষ্কৃতী ছাড়া রাজনীতি করবেন, এটা শুনলে সাধারণ মানুষ হাসবেন।
  • Link to this news (বর্তমান)