ধৃতদের বিরুদ্ধে আমি অভিযোগ তুলে নিচ্ছি! বিচারকের কাছে দাবি ‘গণধর্ষণে নির্যাতিতা’র
বর্তমান | ১৬ জুলাই ২০২৪
স্বার্ণিক দাস, কলকাতা: গণধর্ষণের মতো গুরুতর অভিযোগ দায়ের করেও শেষমেশ ‘পাল্টি’ খেলেন অভিযোগকারী। ধৃতদের পুলিস হেফাজত শেষ হওয়ার আগেই ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে ‘নির্যাতিতা’ বললেন, ধর্ষণই নাকি হয়নি!
সটান থানায় গিয়ে তরুণী নিজেই অভিযোগ করেছিলেন, তিনজন মিলে ধর্ষণ করেছে তাঁকে। কিন্তু, বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দিতে একেবারে উলটপুরাণ। এমন নজিরবিহীন ঘটনা ঘটল আনন্দপুর থানা এলাকায়। শুধু তাই নয়, অভিযোগকারী ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে বলেন, ধৃতদের উপর থেকে আমি অভিযোগ তুলে নিচ্ছি। ওদের বিরুদ্ধে আমার কোনও অভিযোগ নেই। ফলে গণধর্ষণের মতো গুরুতর ধারায় মামলা হলেও পুলিস হেফাজত থেকেই জামিন পেয়ে গেল ধৃতরা। মেডিক্যাল রিপোর্টেও ধর্ষণের প্রমাণ মেলেনি বলে পুলিস সূত্রের দাবি। তাহলে কী কারণে এমন গুরুতর অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল? ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটাতেই কী ‘ধর্ষণ’-এর মিথ্যা অভিযোগ চাপানো হয়েছিল? নাকি অন্য কোনও চাপ? সবটাই ধোঁয়াশা। ৩ জুলাই রাতে গাড়িতে তুলে তাঁকে গণধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে তিলজলা থানায় যান এক তরুণী। তাঁর মতে, ঘটনাটি ঘটেছে আনন্দপুর থানা এলাকার মধ্যেই। তবে যৌন হেনস্তা সংক্রান্ত অভিযোগ হওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী জিরো এফআইআর করে আনন্দপুর থানায় পাঠিয়ে দেয় তিলজলা থানার পুলিস। তদন্তে নেমে পুলিস স্রেফ ‘নির্যাতিতা’র দাবি অনুযায়ী মূল অভিযুক্ত রিজওয়ান খান ওরফে ভিকি সহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। পরের দিন ধৃতদের আলিপুর আদালতে পেশ করা হলে তাদের আটদিনের পুলিস হেফাজত হয়। তদন্ত জারি রাখে পুলিস। মহিলার মেডিক্যাল পরীক্ষা করানো হয়। সেই রিপোর্ট জমা পড়ে আদালতে। পাশাপাশি, ধর্ষণের মামলার নিয়ম অনুযায়ী নির্যাতিতাকে বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দি দিতে হয়। আইন অনুযায়ী, সেই ব্যবস্থা করে আনন্দপুর থানা। তবে বিচারকের কাছে গিয়েই উল্টো সুর গাইতে শুরু করেন নির্যাতিতা।
সূত্রের দাবি, অভিযোগকারী বিচারককে জানিয়েছেন, ধৃতদের বিরুদ্ধে তাঁর কোনও অভিযোগ নেই। মামলাটি বন্ধ করে দিতে চান তিনি। তাই তিনি স্বেচ্ছায় অভিযোগ তুলে নিচ্ছেন। যা শুনে রীতিমতো চমকে ওঠেন স্বয়ং বিচারক। তিনি দ্বিতীয়বার বিষয় ভাবনাচিন্তা করার জন্য বলেন নির্যাতিতাকে। কোনওরকম চাপ থেকে তরুণীর এই সিদ্ধান্ত কি না, তাও জিজ্ঞাসা করা হয়। কিন্তু, নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন তিনি। তবে অভিযোগকারী নিজেই গণধর্ষণের মতো অভিযোগ তুলে নিয়েছেন, এমন নজির আছে বলে মনে করতে পারছেন না আইন বিশেষজ্ঞরা। বিচারক থেকে আইনজীবী— সকলেই একে নজিরবিহীন বলেই দাবি করছেন।
উল্লেখ্য, এর আগে আনন্দপুর থানা এলাকায় একটি ভুয়ো গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল। প্রাক্তন প্রেমিকের বিরুদ্ধে সেই অভিযোগ করেছিলেন এক তরুণী। যদিও সেই ঘটনায় প্রাক্তন প্রেমিককে অপহরণের অভিযোগে নিজেই জেল খাটছেন তরুণী। এর আগেও কড়েয়া এলাকায় একই ধরনের ভুয়ো ধর্ষণের অভিযোগ সামনে এসেছিল। বারবার একই ঘটনা কেন? ধর্ষণের মতো গুরুতর ধারাকে ইচ্ছামতো ব্যবহার করা হচ্ছে মনে করছে পুলিসের একাংশ।