হকার নিয়ন্ত্রণের জন্য একমাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যে সময়সীমা শেষ হচ্ছে ২৭ জুলাই। কিন্তু তার মধ্যে কলকাতার হকার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব? পুরসভা সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশমতো সমীক্ষা শুরু হলেও কাজ অর্ধেকও হয়নি। হকারদের তথ্য সংগ্রহের জন্য ১২টি দল গঠিত হয়েছে।প্রতি দলের সাত-আট জন সদস্য ঘুরে ঘুরে প্রত্যেক হকারের বায়োডেটা জোগাড় করছেন। তৈরি হয়েছে মোবাইল অ্যাপও। তাতে হকারের নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, বাবার নাম এবং পুরসভার দেওয়া রেজিস্ট্রেশন নম্বর নথিভুক্ত করা হচ্ছে। হকাররা যেখানে বসে ব্যবসা করেন, লোকেশন ম্যাপ থেকে তার ছবিও তুলে রাখা হচ্ছে।
পুরকর্তাদের অনুমান, এই সমীক্ষা শেষ করতেই দু’-তিন মাস সময় লেগে যাবে। ফলে মুখ্যমন্ত্রীর বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে শহরে হকার নিয়ন্ত্রণ করা কার্যত অসম্ভব বলেই মনে করছেন তাঁরা। কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ এবং মুখ্যমন্ত্রীর গঠিত হকার নিয়ন্ত্রণ কমিটির অন্যতম সদস্য দেবাশিস কুমার বলেন, ‘আমাদের শুধু সমীক্ষা করতে দেওয়া হয়েছিল। সে কাজ শেষ হলেই আমরা নবান্নে রিপোর্ট পাঠিয়ে দেবো। এরপর নবান্নের নির্দেশমতোই কাজ হবে।’
সমীক্ষার প্রাথমিক রিপোর্টেই পুরকর্তাদের কপালে ভাঁজ বেড়েছে। আধিকারিকরা দেখেছেন হাতিবাগান, ধর্মতলা, গড়িয়াহাট-সহ শহরের বহু জায়গায় ফুটপাথের দু’দিকে বসে হকাররা ব্যবসা করছেন। নিয়ম অনুযায়ী, ফুটপাথের এক-তৃতীয়াংশ জায়গায় হকারদের বসার কথা। গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড়ে ৫০ মিটারের মধ্যে হকাররা বসতে পারবেন না। পিচ রাস্তার উপরেও হকারি নিষিদ্ধ। অনেকে সেই নিয়মকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছেন।
সম্প্রতি পুলিশি অভিযানের পর নিউ মার্কেট, হগ মার্কেট, শ্রীরাম আর্কেডের আশপাশের রাস্তা থেকে হকাররা সরে গিয়েছিলেন। কিন্তু কয়েক দিন যেতে না-যেতে তাঁরা ফিরে এসেছেন। সন্ধের পর থেকে ওই এলাকায় সেই পুরোনো ছবি। নিউ মার্কেটের প্রবীণ ব্যবসায়ী উদয় সাহু বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী নিষেধ করার পরেও কী ভাবে হকাররা রাস্তায় বসছেন, সেটাই বুঝতে পারছি না।’
স্থানীয় হকারদের বক্তব্য, ‘সরকার বিকল্প জায়গা দেখে দিলেই উঠে যাব।’ এ ব্যাপারে দেবাশিস বলেন, ‘যাঁরা রাস্তায় বসছেন, তাঁরা নিজেদের দায়িত্বে বসছেন। পুলিশকে বলব ব্যবস্থা নিতে।’ হকার সংগ্রাম কমিটির সম্পাদক শক্তিমান ঘোষও বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে পুলিশ ব্যবস্থা নিক। আমরা এঁদের সমর্থন করি না। কিন্তু যাঁরা ফুটপাথে অনেক দিন ধরে ব্যবসা করছেন, তাঁদের বিকল্প জায়গা দিক পুরসভা। মুখ্যমন্ত্রীও সে কথা বলেছেন।’