মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন জেনেবুঝেই, কোর্টে স্পষ্ট বার্তা মমতার আইনজীবীর
এই সময় | ১৬ জুলাই ২০২৪
এই সময়: রাজভবনে ‘যে সব কীর্তিকলাপ চলছে...’ বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিকদের সামনে যে মন্তব্য করেছিলেন, তাতে তাঁর সম্মানহানি হয়েছে—এই অভিযোগ তুলে বেনজির ভাবে মানহানির মামলা করেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। সোমবার সেই মামলার শুনানিতে নিজের মন্তব্য থেকে সরলেন না বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।এদিন কলকাতা হাইকোর্টে মুখ্যমন্ত্রীর তরফে বর্ষীয়ান আইনজীবী সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘আমার মক্কেল যা বলেছেন, সব জেনেবুঝেই বলেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন যে, মহিলারা রাজভবনে যেতে ভয় পাচ্ছেন বলে তিনি অভিযোগ পেয়েছেন। আদালত চাইলে তিনি হলফনামা দিয়ে জানাবেন, কাদের থেকে তিনি ওই তথ্য পেয়েছেন।’
মুখ্যমন্ত্রীর আইনজীবী শুনানি চলাকালীন গত মে মাসে রাজভবনে ‘শ্লীলতাহানি’র যে অভিযোগ উঠেছিল, সে প্রসঙ্গও তোলেন। বিচারপতি কৃষ্ণা রাওয়ের এজলাসে এদিন প্রায় আড়াই ঘণ্টা সওয়াল-জবাবের পর শুনানি শেষ হয়েছে। তবে রায়দান স্থগিত রেখেছে আদালত।
রাজ্যপালের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যে সব মন্তব্য করছেন, তা থেকে তাঁদের বিরত থাকার জন্য আদালতের কাছে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশের নির্দেশ দেওয়ার আবেদন করা হয় বোসের তরফে। যদিও আদালত এদিন সেই ব্যাপারে কোনও হস্তক্ষেপ করেনি।
এদিন আদালতে সৌমেন্দ্রনাথ বলেন, ‘রাজ্যপালের সম্মানহানি হয়, এমন কোনও মন্তব্য করা হয়নি। যা বলা হয়েছে, তা নির্দিষ্ট ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে। আর যদি সম্মানহানিই না হয়ে থাকে, তাহলে আদালতের অন্তর্বর্তী নির্দেশ জারি করার কোনও সুযোগ নেই।’ তাঁর সওয়াল,✓‘যদি মূল অভিযোগ সত্যি বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে জনগণের সেটা জানার অধিকার রয়েছে। একজন জনপ্রতিনিধি (সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়) অভিযোগ করছেন, রাজ্যপালের কারণে তিনি সময়ে শপথ নিতে না পারায় তাঁর দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। এতে কীভাবে সম্মানহানি হয়?’
এরপর সৌমেন্দ্রনাথ যুক্তি দেন, রাজভবনে যে ঘটনা ঘটেছে বলে মূল অভিযোগ, সেটা ইতিমধ্যেই মানুষের সামনেই আছে। সেটাকে তো কোথাও রাজ্যপাল চ্যালেঞ্জ করেননি। যেহেতু এক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমের খবরের ভিত্তিতে মামলা হয়েছে, তাই মিডিয়াকে মামলায় যুক্ত না করায় প্রশ্ন তোলেন তিনি। রাজ্যপালের দায়ের করা মামলার ড্রাফটিংয়ের ত্রুটি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রেয়াত হোসেন সরকার—এই দুই তৃণমূল বিধায়কের শপথগ্রহণ ঘিরে টানাপড়েনের প্রেক্ষিতেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মুখ্যমন্ত্রী রাজভবন নিয়ে কিছু মন্তব্য করেন। এই বিষয়ে বক্তব্য পেশ করেছিলেন সায়ন্তিকা, রেয়াত ও তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষও। ফলে মামলায় পার্টি করা হয়েছিল এই তিনজনকেও। রেয়াত হোসেন সরকারের আইনজীবী যুক্তি দেন, রাজ্যপালের এই মামলা গ্রহণযোগ্য নয়।
কারণ, সাংবিধানিক রক্ষাকবচ থাকায় তাঁর বিরুদ্ধে কোনও আদালত কোনও ধরনের পদক্ষেপ করতে পারে না। এখন যদি এই মামলায় তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হয়, তাহলেও রক্ষাকবচের কারণে সেটা সম্ভব নয়। সায়ন্তিকার আইনজীবীর সওয়াল, রাজভবনের এক মহিলা কর্মীর সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছিল বলে অভিযোগ উঠেছে, সেটা তাঁর মক্কেলও জানতে পেরেছেন।
সেই কারণেই তিনি একজন মহিলা হিসাবে তাঁর আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। কুণালের আইনজীবীর বক্তব্য, কোনও ভাবেই রাজ্যপালের সন্মানহানি করা হয়নি। কোন পরিপ্রেক্ষিতে তিনি কী বলেছেন, তা হলফনামা দিয়ে জানাতে প্রস্তুত কুণালও। তাঁর এই আবেদন গৃহীত হয়েছে।
রাজ্যপালের আইনজীবী ধীরাজ ত্রিবেদীর বক্তব্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ থেকে একাধিক বিল পাশ-সহ বিভিন্ন ইস্যুতে রাজ্য এবং রাজ্যপালের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই মতপার্থক্য আছে। তারমধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ তোলা হচ্ছে, সেগুলি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বিদ্বেষমূলক।
ধীরাজের প্রশ্ন, ‘সবাই বলছেন, তাঁরা বিভিন্ন ব্যক্তি বা মহিলার কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছেন বা জানতে পেরেছেন যে, রাজভবনে কী ঘটনা ঘটেছিল এবং তাঁরা রাজভবনে যেতে ভয় পাচ্ছেন। কিন্তু ওই ব্যক্তি বা মহিলা কে বা কারা?’ তাঁর সংযোজন, ‘একজন মহিলা নিজের আবেদন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছেন, কিন্তু তিনি প্রকাশ্যে বলেননি তিনি আতঙ্কিত। যাঁরা এ নিয়ে মন্তব্য করেছেন, তাঁদের কারও এই বিষয়ে কোনও ব্যক্তিগত জ্ঞান নেই।’