অর্ণব আইচ: আইনি মর্যাদা পেয়েছে ‘তৃতীয় লিঙ্গ’। কিন্তু তৃতীয় লিঙ্গের অভিযুক্ত ‘আসামি’রা থাকবে কোন লকআপে? তা নিয়ে এখনও ধন্দে পুলিশ। নতুন আইন ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় অভিযুক্তদের ক্ষেত্রে পুরুষ ও নারীর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে ‘ট্রান্সজেন্ডার’ অথবা তৃতীয় লিঙ্গকে। লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, সেক্ষেত্রে কোনও ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারির সময় যদি সে দাবি করে যে, সে পুরুষ অথবা নারী নয়, তৃতীয় লিঙ্গের, তাহলে ‘লিঙ্গ’র জায়গায় পুলিশকে ‘ট্রান্সজেন্ডার’ই লিখতে হবে। ভারতীয় ন্যায় সংহিতা লাগু হওয়ার আগে কলকাতা ও রাজ্যের প্রত্যেক পুলিশ আধিকারিককে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ওই প্রশিক্ষণের সময়ই এই তৃতীয় লিঙ্গের বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়। যদিও পুলিশকর্তাদের মতে, নতুন আইনে ‘তৃতীয় লিঙ্গ’কে যোগ করতে বলা হলেও সেসব অভিযুক্তদের কোথায় রাখা হবে, কীভাবে রাখা হবে, অথবা তাদের জন্য বিশেষ কোনও লকআপ থাকবে কি না, তা নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। তাই এনিয়ে বিভ্রান্ত পুলিশ আধিকারিকরা।
পুলিশের সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, কিছুদিন আগেই কলকাতা পুলিশের (Kolkata Police) গোয়েন্দা বিভাগের হাতে এক ট্রান্সজেন্ডার বা তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তি গ্রেপ্তার হয়। এক সাংসদের নাম করে জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে একটি গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে। ওই জালিয়াতি গ্যাংয়ের অন্যতম সদস্য ওই ‘ট্রান্সজেন্ডার’ (Transgender), এমনই অভিযোগ পুলিশের। দিল্লি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। সোফিয়া নামে তৃতীয় লিঙ্গের ওই ব্যক্তির চালচলন ও হাবভাব নারীদের মতোই। তাকে যখন গ্রেপ্তার করা হয়, তখনও নতুন আইন চালু হয়নি। কিন্তু তার চেহারা ও হাবভাব দেখে পুলিশ তাকে মহিলা হিসাবেই ধার্য করে।
জানা গিয়েছে, সে নিজেও মহিলাদের মতোই থাকতে চায় বলে পুলিশের কাছে দাবি করে। মূলত সেই কারণেই তার পাহারায় মহিলা পুলিশ রাখা হয়। আদালতে তার জায়গা হয় মহিলা লকআপে। আবার লালবাজারের (Lalbazar)সেন্ট্রাল লকআপে মহিলাদের লক আপেই রাখা হয় তাকে। আদালতের এজলাসেও মহিলা অভিযুক্তদের মতোই তাকে পুরুষদের সঙ্গে এক কাঠগড়ায় রাখা হয়নি। লালবাজারের কর্তাদের মতে, ভবিষ্যতে এরকম তৃতীয় লিঙ্গের অভিযুক্তরা গ্রেপ্তার হতেই পারে।
যদিও তৃতীয় লিঙ্গদের (Third Gender) জন্য এখনই কোনও বিশেষ লকআপ তৈরির কথা ভাবা হচ্ছে না। আবার তৃতীয় লিঙ্গের মানেই যে মহিলা লকআপে রাখতে হবে, এমনটাও নয়। লালবাজারের অভিমত, সেক্ষেত্রে পুলিশ আধিকারিকদের তৃতীয় লিঙ্গের অভিযুক্তর আচরণ ও হাবভাবের দিকে নজর দিতে বলা হয়েছে। কোনও তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তির মধ্যে মহিলাচিত ভাব বেশি প্রকাশ পেলে তাকে মহিলা লকআপেই (Police Lockup) রাখা হবে। আবার কোনও ট্রান্সজেন্ডারের আচরণ কিছুটা পুরুষালি হলে তাকে পুরুষদের লকআপেই অন্য অভিযুক্তদের সঙ্গে রাখা হবে। অবশ্য ট্রান্সজেন্ডারদের মধ্যে কেউ লকআপে অস্বাভাবিক আচরণের চেষ্টা করলে সেই ব্যক্তিকে আলাদাভাবে কোথাও রাখা যাবে কি না, তা পরিস্থিতি বুঝেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।