প্রতিবেশী রাজ্য বিহারে একের পর এক সেতু ভেঙে পড়ার স্মৃতি এখনও টাটকা। দিন দশেক আগে ভেঙে পড়েছে পাশের জেলা পশ্চিম বর্ধমানের রানিগঞ্জের বল্লভপুর পঞ্চায়েতের বেলুনিয়া ব্রিজ। লোকসভা নির্বাচনের আগেই পিলার ভেঙে দুর্বল হয়ে পড়ে সেতুটি। এই পরিস্থিতিতে শান্তিতে নেই পুরুলিয়া জেলার একটি অংশের মানুষ।পুরুলিয়া-১ নম্বর এবং আড়শা ব্লকের সংযোগকারী কাঁসাই নদীর উপর বেলডি সেতু নিয়ে প্রচণ্ড চিন্তায় স্থানীয়রা। গত বর্ষা থেকে সেতুর বেশ কয়েকটি পিলার নদীগর্ভে বসে গিয়েছে। প্রায় ১০০ মিটার দীর্ঘ সেতুটি এখন যান চলাচলের অনুপযুক্ত। বাম আমলে নির্মিত সেতুটির পিলার বসে যাওয়ায় ভারী যান চলাচলে সম্পূর্ণ অনুপযুক্তই শুধু না, এর বেশ কিছু জায়গা হেঁটে পার হওয়াও বিপজ্জনক। তাত্ক্ষণিক ভাবে সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয় সেতুটিকে।
পরে পথচারী এবং দু’চাকার বাহনের জন্য এটিকে খুলে দেওয়া হলেও গাড়ি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি থাকে। এবার বর্ষা শুরু হতেই ঘুম ছুটেছে বেলডি, কাঞ্চনপুর, বাঘুডির মতো কয়েকশো গ্রামের মানুষের। পুরুলিয়া শহরের সঙ্গে আড়শা ব্লক সদর ও আশপাশের বহু গ্রামের সংযোগের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম এই সেতু।
অন্তত ১০টি পঞ্চায়েত এলাকার মানুষ সরাসরি এই সেতুর উপর নির্ভরশীল। তেমনই এক জন বেলডির বাসিন্দা দেবাশিস পরমানিক। পুরুলিয়া শহরে চাকরি করেন তিনি। ওই সেতু দিয়ে নিত্য যাতায়াত রয়েছে তাঁর। ক্ষোভপ্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এক বছর হতে চলল নতুন সেতুর ব্যবস্থা হলো না। বড় গাড়ি চলা তখন থেকেই বন্ধ। ছোট গাড়িতেও প্রাণ হাতে করে যেতে হচ্ছে ওই সেতু দিয়ে।’
এখন বর্ষা এসে গিয়েছে। সে প্রসঙ্গে বলেন, ‘এত দিন তা-ও গ্রামের মানুষ নদীর বুকের উপর দিয়েই গাড়ি চালিয়ে পার হয়েছেন। বর্ষায় নদীর জল বাড়লে সমস্যা বহুগুণ বেড়ে যাবে।’ পেশায় গাড়িচালক বাবলু গোপ এবং রবি গোপ বলেন, ‘এতদিন নদীর উপর দিয়ে গাড়ি নিয়ে প্রায় ১২ কিমি দূরের পুরুলিয়া শহরে যেতাম আমরা। নদীতে জল বাড়ায় ঝুঁকি অনেক বেড়ে গিয়েছে। এবার আর নদী পার হওয়া যাবে না। তখন টামনা দিয়ে ঘুরতে গেলে অন্তত ৩০ কিমি বেশি ঘুরতে হবে।’
কাঞ্চনপুরের কৃষক ভক্তিপদ মাহাতো বলেন, ‘ঘুরপথে পুরুলিয়া যেতে ভাড়া অনেক বেশি পড়বে। সার, বীজ সমেত চাষের জিনিস পুরুলিয়া শহর থেকে আনার খরচ অনেক বেড়ে যাবে।’ সমস্যার কথা স্বীকার করে আড়শার বিডিও গোপাল সরকার বলেন, ‘সেতুটি নিয়ে পদক্ষেপ করছে জেলা প্রশাসন। এ নিয়ে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে।’
সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলেও কবে সেতুর কাজ শুরু হবে তা বলতে পারেননি পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি নিবেদিতা মাহাতো। তিনি বলেন, ‘বিপজ্জনক ভাবে কেউ যাতে পার না হয় তার জন্য পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্ষায় নতুন সেতু নির্মাণ সম্ভব নয়। তাই আপাতত বিকল্প ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’