পাহাড় অন্তপ্রাণ! দুর্গম পর্বতশৃঙ্গ জয়ের নেশা ছোট থেকেই তাড়া করে বেড়ায় নদিয়ার রানাঘাটের স্কুল শিক্ষিকা রুম্পা দাসকে। প্রথম ভারতীয় মহিলা পর্বতারোহী হিসেবে হিমাচল প্রদেশের কঠিন পর্বতশৃঙ্গ ‘রামজাক’ জয় করেছেন তিনি। সংসার, স্কুল সামলেও ২০১২ সাল থেকে একটানা ট্রেকিং, রক ক্লাইম্বিং এবং দীর্ঘ উচ্চতার দুর্গম পর্বতশৃঙ্গ অভিযানে যুক্ত থেকেছেন তিনি।এর আগে বড় অভিযানের তিনটি সাফল্য রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। ২০২১ সালে মাউন্ট এভারেস্ট অভিযানে গিয়ে ২ নম্বর ক্যাম্পে পৌঁছনোর পরে কোভিড আক্রান্ত হলে ফিরে আসতে হয়েছিল তাঁকে। সেবার জয় অধরা থাকলেও এভারেস্ট জয়ের ইচ্ছেটা নতুন করে চাগাড় দিয়েছে। রামজাক শৃঙ্গ জয়ের পরে আরও আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। এখন বয়স ৪৩ এর কাছাকাছি। তাতে কী!
রুম্পা বলেন, ‘পাহাড়ের বুকে আরও কঠিন পথে হাঁটতে চাই। ছুঁতে চাই আরও অনেক দুর্গম পর্বতশৃঙ্গ।’ বসন্ত সিংহ রায় বলেন, ‘রুম্পা বাড়িতে রান্নাবান্না নিজের হাতেই করে। আবার বাবা মাকেও দেখে। স্কুলে গিয়েও আদর্শ শিক্ষিকার মতোই পড়ায় বলে জানি। এসব করেও আমাদের সঙ্গে যখন অভিযানে বের হয় একদম পাখির চোখ করেই এগোয় সে।’
রুম্পার বাড়ি রানাঘাটের নাসড়ায়। স্থানীয় কুপার্স কলোনি হাই স্কুলে ইংরেজি পড়ান তিনি। এম এ, বিএড। স্বামী কলকাতার একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী। ছোটবেলা থেকেই শরীরচর্চা করতেন। তবে পাহাড়ের প্রেমে পড়ে সে চর্চা আরও বাড়াতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
রুম্পা বলেন, ‘রোজ সকালে মাঠে গিয়ে শরীরচর্চা করি। সন্ধ্যায় বাড়িতে। প্রচণ্ড গরমে সকালে স্কুল হলে কাকভোরে উঠে মাঠে যাই। তারপর বাড়ি ফিরে রান্নাবান্না শেষ করে নির্দিষ্ট সময়ে স্কুলে হাজিরা দিই। মাউন্টেনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ কৃষ্ণনগর (ম্যাক) এর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পরে আরও অনেক কিছু শিখেছি। বসন্ত সিংহ রায়ের মতো পর্বতারোহীর সঙ্গে অভিযানে থাকতে পেরে নিজেকে অনেক সমৃদ্ধ করতে পেরেছি। আরও শিখছি।’
শুরুর কথা বলতে গিয়ে রুম্পা জানিয়েছেন, ২০১২ সাল থেকে আমার ট্রেকিং শুরু। ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রতি বছরই ট্রেকিংয়ে গিয়েছি। প্রথম দিকে সান্দাকফু, রূপকুণ্ড। পরের দিকে দীর্ঘ উচ্চতার বাসুকীতাল। ২০১৫ সালে হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট থেকে বেসিক কোর্সও করেছিলাম। ২০১৯ সালে উত্তর কাশীর নেহরু ইনস্টিটিউট অফ মাউন্টেনিয়ারিং থেকে অ্যাডভান্স মাউন্টেনিয়ারিং কোর্স করে বেস্ট ট্রেনির সম্মান পেয়েছিলাম।
রুম্পা বলেন, ‘আমি কৃষ্ণনগরের ‘ম্যাক’-এর সঙ্গে যুক্ত ২০১৫ সাল থেকে। ওই বছর ম্যাক এর উদ্যোগে হওয়া রক ক্লাইম্বিং কোর্স করি শুশুনিয়া থেকে। পরের বছর আমাদের ক্লাব রক ক্লাইম্বিং কোর্স আয়োজন করেছিল গাজাবুর হিল-এ। সেখান থেকে রক ক্লাইম্বিংয়ের অ্যাডভ্যান্স কোর্স করি।
সফল পর্বতশৃঙ্গ জয়ের কথা বলতে গিয়ে রুম্পা বলেন, ‘২০১৫ সালেই ক্লাবের অন্যদের সঙ্গে অভিযানে গিয়ে একটা পর্বতশৃঙ্গ জয় করতে পেরেছিলাম। নাম মাউন্ট স্টিক কাংরি (৬,১৫৪ মিটার)। ২০১৭ সালে মাউন্ট ব্ল্যাক পিক (৬,৩৮৭ মিটার) জয় করি। ২০১৯ সালে মাউন্ট দেবাচেন (৬,২৬৫মিটার) শৃঙ্গ জয় করতে সমর্থ হই। ২০২১ সালে মাউন্ট এভারেস্ট অভিযানে গেলেও ক্যাম্প টু-তে ওঠার পর কোভিড আক্রান্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত ফিরতে হয়।’
সামিট করতে না পারলেও বিভিন্ন বছরে ক্লাবের অন্যদের সঙ্গে মাউন্ট চাঙাব্যাঙ, মাউন্ট ত্রিশূল, মাউন্ট সাসেরকাংরি, মাউন্ট গাংস্ট্যাং, মাউন্ট মানাসলু, মাউন্ট গোরিচেন-এ আমি সঙ্গী ছিলাম। বাড়িতে স্বামী সুমন বসুর সহযোগিতা পান বলেই জানান রুম্পা। এভারেস্ট অভিযানে আবারও যেতে চান তিনি। বলেন, ‘বড় অভিযানে খরচ জোগানোর ব্যাপারও আছে। নিজের জমানো টাকার বাইরে বন্ধুদের সহযোগিতা নিতে হয়।’