রাস্তায় লাখো কর্মীর মাথায় থাকে না আচ্ছাদন, তাই মঞ্চেও বৃষ্টিতে ভেজেন নেতারা! ২১ জুলাইয়ে এমনই রীতি...
আজকাল | ১৬ জুলাই ২০২৪
রিয়া পাত্র
২১ জুলাই। তৃণমূলের শহিদ দিবস। প্রস্তুতি সভা, শহরে সভার প্রস্তুতি পেরিয়ে বিপুল লোকসমাগম নিয়ে তৃণমূলের এই শহিদ দিবস। এই মঞ্চ থেকেই রাজ্য এবং জাতীয় স্তরের রাজনীতির কৌশল বাতলে দেন দলনেত্রী। সুর বেঁধে দেন লড়াইয়ের। দলের সুপ্রিমো আগেই জানিয়েছেন, লোকসভা ভোট এবং উপনির্বাচনের ব্যাপক জয়ের পর সমাবেশ থেকেই তা উৎসর্গ করা হবে ২১ জুলাই দিনটিকে। তবে এসব কিছু ছাপিয়ে চিন্তা ছিল বৃষ্টির। প্রশ্ন ছিল সেদিন বৃষ্টি হবে কি?
সাধারণত বড় কোনও অনুষ্ঠানের দিন বৃষ্টি না হোক, এটাই চান সবাই। তবে, মঙ্গলবার সকালে রাজ্যের আবহাওয়ার যে পূর্বাভাস পাওয়া গিয়েছে, তাতে হাওয়া অফিস জানিয়েছে, সপ্তাহান্তে বৃষ্টি বাড়বে দক্ষিণবঙ্গে। ২১ জুলাই কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের জেলায় জেলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা। আর এই পূর্বাভাসেই কিছুটা স্বস্তি দলের নেতা কর্মীদের।
বৃষ্টিতে স্বস্তির কারণ কী? কারণ শাসক দল মনে করে, বৃষ্টি তাদের জন্য শুভ। আরও ভাল করে বললে, দলনেত্রী মনে করেন বৃষ্টি ‘পয়মন্ত’। দলের সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জির মুখে বারবার একথা কর্মী-সমর্থক-সাধারণ মানূষ শুনেছেন। বিগত বছরগুলিতে ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে বৃষ্টি হওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। এমনকি ভিজে ভিজে বক্তব্যও রেখেছেন মাঝ-মঞ্চে। কোনও ছাতাও ব্যবহার করেননি। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ২১জুলাইসহ যে কোনও বড় সভা-সমাবেশে বৃষ্টিকে ‘পয়মন্ত’ মানেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। শুধু মমতা নন, অভিষেকও ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে বৃষ্টিতে ভিজে বক্তব্য রেখেছেন। এই গত বছরের কথা ধরা যাক, মঞ্চে বক্তব্য রাখেছেন অভিষেক ব্যানার্জি। বৃষ্টিও নেমেছে হুড়মুড়িয়ে। অভিষেকের মাথায় ছাতা ধরেছিলেন একজন। অন্যদিকে মঞ্চের সামনে অগণিত কর্মী সমর্থক ভিজতে ভিজতে শুনছেন তাঁর কথা। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ছাতা সরিয়ে কর্মী-সমর্থকদের মতো ভিজতে ভিজতেই বক্তব্য রেখেছিলেন। যে কয়েকজনের মাথায় ছাতা খোলা ছিল, ভিড়ের মাঝে গুটিয়ে নিয়েছিলেন তাঁরাও। দলের কর্মী সমর্থকদের সমাজমাধ্যমেও ভিজতে ভিজতে মিছিল-সমাবেশের ছবি দেখা যায় ২১ জুলাই। তবে এবার তো হাওয়া অফিস আগেই পূর্বাভাসে জানাল বৃষ্টির কথা। আগাম সতর্কবার্তায় কি তাহলে দল বৃষ্টি থেকে বাঁচতে কোনও পরিকল্পনা করছে?
তৃণমূল ছাত্রপরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, পূর্বাভাস পেয়েও একেবারেই কোনও পরিকল্পনা নেই। কেন নেই? জানালেন, ভিজতে ভিজতেই এবার নেতা-কর্মীরা পালন করবেন ২১ জুলাই। কিন্তু কারণ কী? তাঁর মতে, যে জায়গায় ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ হয়, সেখানে বিস্তীর্ণ জায়গা জুড়ে ‘শেড’ তৈরি সম্ভব নয়। প্রতিবারই সমাবেশ শেষ হওয়ার ২ ঘণ্টার মধ্যে রাস্তা ফাঁকা করে দেওয়া হয়। যেহেতু কর্মী-সমর্থকদের মাথায় শেড থাকে না, তাই রোদ হোক কিংবা বৃষ্টি, নেতা-নেত্রীদের মঞ্চেও শেড থাকে না। তাঁরাও খোলা মঞ্চেই বসেন। অভিষেকের গত বছরের ছাতা সরিয়ে ভিজতে ভিজতে বক্তব্য দেওয়ার কথাও মনে করিয়ে দেন তৃণাঙ্কুর। বললেন, ‘তৃণমূলে নেতা-কর্মীর সহাবস্থান রয়েছে। বৃষ্টি হলে একসঙ্গেই ভিজবেন সকলে।‘
উল্লেখ্য, ২১ জুলাই উপলক্ষে সোমবারই সুব্রত বক্সির নেতৃত্বে খুঁটিপুজো হয়েছে। প্রতিবছর ২১ জুলাইয়ের মঞ্চের গঠন-কাঠামোর দিকেও নজর থাকে। জানা গিয়েছে, এবারে কিছু বদল থাকছে মঞ্চে। এবার মূল মনে ওঠার জন্য সিঁড়ির পরিবর্তে থাকবে র্যাম্প। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউর দিকের মঞ্চের পরিধি বাড়ানো হবে কিছুটা। জানা গিয়েছে, মূল মঞ্চের আয়তন হবে ৫২ ফুট বাই ২৪ ফুট। দ্বিতীয় মঞ্চটি হবে ৪৮ ফুট বাই ২৪ ফুট, তৃতীয় মঞ্চ হবে ৪০ ফুট বাই ২৪ ফুট। এবার ২১ জুলাই রবিবার হওয়ায়, সাধারণ মানুষও সমস্যায় পড়বেন না সেভাবে।