স্বাস্থ্য দপ্তরের টেন্ডারের নামে দুর্নীতি, অর্থ পাচার বিদেশে পাখির ব্যবসায়! আরও কোটি কোটি টাকার হদিশ
প্রতিদিন | ১৭ জুলাই ২০২৪
অর্ণব আইচ: স্বাস্থ্য দপ্তরের টেন্ডার পাইয়ে দেওয়ার নামে দুর্নীতির ঘটনায় আরও কোটি টাকার হদিশ পেল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। এ ছাড়াও প্রায় ১১ কোটি টাকার সম্পত্তিও চিহ্নিত করেছে ইডি। এই দুর্নীতির মূল অভিযুক্ত বুধাদিত্য চট্টোপাধ্যায়কে মঙ্গলবার ব্যাঙ্কশালের বিশেষ ইডি আদালতে তোলা হয়। তাঁর জামিনের আবেদন করেন আইনজীবী। জামিনের বিরোধিতা করেন ইডির আইনজীবী অভিজিৎ ভদ্র। কীভাবে দামী বিদেশি পাখি কেনাবেচার মাধ্যমে টাকা পাচার করা হত, সেই তথ্য ইডি আদালতে তুলে ধরে। দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে অভিযুক্তকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত ইডি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। প্রেসিডেন্সি জেলে গিয়ে বুধাদিত্য চট্টোপাধ্যায়কে জেরা করতে পারবেন ইডি আধিকারিকরা।
ইডির সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে ৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার দুর্নীতি ধরা পড়ে। বেঙ্গালুরুর একটি ই ক্লিনিক, যেটি যক্ষা, কোভিড ও অন্যান্য ছোঁয়াচে রোগ নির্ণয় করে, সেই সংস্থাটিকেই স্বাস্থ্য দপ্তরের টেন্ডার দেওয়ার নামে টোপ দেওয়া হয়। কলকাতা ও বেঙ্গালুরুর মোট তিনটি সংস্থার মাধ্যমে টাকা তোলা হয়। বুধাদিত্য ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল হেল্থ অ্যান্ড ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার’-এর অ্যাকাউন্ট কন্ট্রোলারের পরিচয় দিয়ে টেন্ডার পাইয়ে দেওয়ার নামে আগাম টাকা তুলতে শুরু করেন। তার জন্য স্বাস্থ্য দপ্তরের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের ভুয়ো সিল ও দপ্তরের ভুয়ো ওয়েবসাইট ও ভুয়ো মেল আইডি তৈরি করেন বুধাদিত্য, তাঁর এক সঙ্গী ও আরও কয়েকজন। দুর্নীতির অর্থ লেনদেনের জন্য একটি সফটওয়্যারও তৈরি করে অভিযুক্তরা।
এর আগে অন্যান্য মামলার ক্ষেত্রে সোনা কেনাবেচার মাধ্যমে টাকা পাচারের হদিশ পায় ইডি। এই ক্ষেত্রে বুধাদিত্যদের চক্র বেছে নেয় বিদেশি পাখি কেনাবেচা। চোরাপথে বিদেশি পাখি কেনাবেচার মাধ্যমে টাকা পাচার করে চক্রটি। বিপুল পরিমাণ টাকা যে হাওয়ালার মাধ্যমে বিদেশে গিয়েছিল, সেই তথ্যও জানতে পেরেছেন ইডির গোয়েন্দারা। ইডি হাওয়ালার গদিও চিহ্নিত করেছে। প্রাথমিকভাবে হদিশ পাওয়া মোট ৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার দুর্নীতির মধ্যে ইডি ১০ কোটি ৭০ লাখ টাকা চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে বুধাদিত্যর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ৮ লাখ ৫ হাজার টাকার নগদ ও ১ কোটি ৯৮ লাখ টাকার হদিশ মিলেছে ধৃত বুধাদিত্যর ব্যাঙ্ক অ্যকাউন্ট থেকে। কুড়ি কোটি টাকার সম্পত্তির হদিশ চলছে। এর মধ্যেই ইডি তদন্ত করে আরও ১ কোটি ১ লাখ টাকার সম্পত্তির হদিশ পেয়েছে। তল্লাশির সময় মোট ১৮ লাখ টাকার ফিক্সড ডিপোজিটের নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
এক পোষ্য ব্যবসায়ী ইডির জিজ্ঞাসাবাদের মুখে জানান যে, বুধাদিত্য তাঁকে ৮৫ লাখ টাকা দেন। আবার তিনি ওই ব্যবসায়ীকে পরামর্শ দেন, অন্য পাঁচজন পোষ্য ব্যবসায়ী ও ব্রিডারের মাধ্যমে ওই টাকা পাচার করতে। তল্লাশি চালানোর সময় ইডি বুধাদিত্যর কাছ থেকে বহু দামী উপহার সামগ্রী উদ্ধার করেছে। ওই উপহারগুলি তিনি কাদের দিতে চেয়েছিলেন, তা নিয়ে চলছে তদন্ত। এই ব্যাপারে ইডি তাঁকে জেরা করতে পারে। তল্লাশিতে বেশ কিছু জাল ভিজিটিং কার্ডও পাওয়া গিয়েছে। বুধাদিত্য নিজেকে যে সরকারি কর্তা বলেও পরিচয় দিতেন, তার প্রমাণ মিলেছে বলে জানিয়েছে ইডি।