সংগঠন না করে এজেন্সি নির্ভরতা! সুকান্তর মন্তব্যে আলোড়ন বিজেপিতে, প্রশ্নে শুভেন্দুদের ভূমিকা
প্রতিদিন | ১৭ জুলাই ২০২৪
রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: সংগঠন পোক্ত না করে বিজেপি কর্মীদের মধ্যে এজেন্সি নির্ভরতা নিয়ে কদিন আগেই দলীয় বৈঠকে মন্তব্য করেছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। আর সুকান্তর এই মন্তব্যের পরই দলের মধ্যে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। বিজেপি কর্মীদের বড় অংশের প্রশ্ন, এই ইডি-সিবিআই নির্ভরতা তো শীর্ষ নেতারাই তৈরি করেছিলেন। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) কথায় কথায় শাসক দলকে হুমকি দিতেন ইডি-সিবিআইয়ের। কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে লেলিয়ে দেওয়ার ভয় দেখাতেন। তাই নিচুতলার নেতা কর্মীদের মধ্যে এজেন্সি নির্ভরতা চলে আসাটা স্বাভাবিক।
সোশাল মিডিয়া থেকে শুরু করে দলের বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে কর্মীদের বক্তব্য, এজেন্সি নির্ভরতা তৈরি করেছিলেন রাজ্যের শীর্ষ নেতারাই। এখন কর্মীদের উপর দোষ দিয়ে লাভ কি! ভোটে ধাক্কা খাওয়া বা বিপর্যয়ের দায় নিচুতলার কর্মীদের উপর কেন চাপানো হবে, প্রশ্ন গেরুয়া শিবিরের একাংশের। গত রবিবার সুকান্ত মজুমদারের (Sukanta Majumdar) কর্মসূচি ছিল হুগলিতে। পাণ্ডুয়া ও হিন্দমোটরে দলের অভ্যন্তরীণ বৈঠকে সুকান্ত বলেছিলেন, “দাদা সিবিআইকে বলুন একে আরেস্ট করিয়ে দিতে। সঙ্গে সঙ্গে আমরা জিতে যাব। হবে না! ওকে জেলে ঢুকিয়ে দিন, জিতে যাব। হবে না!”
এর পরই সুকান্তর প্রশ্ন ছিল, “অনুব্রত মণ্ডল তো জেলে আছে, সেই বীরভূমে আমরা জিতেছি?” পরিশ্রম করে সংগঠন তৈরি করলে তবেই জেতা যায়, কাউকে অ্যারেস্ট করিয়ে নয় বলে মন্তব্য করেছিলেন সুকান্ত। দলের রাজ্য সভাপতির এই মন্তব্যের পরই চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে দলের মধ্যে। দলের এক জেলা ইনচার্জের কথায়, এই এজেন্সি নির্ভরতা আর রাজভবন নির্ভরতা তো দলে প্রথমে শুভেন্দুদাই দেখিয়েছিলেন। বিজেপিতে (BJP) সংগঠন সব। দলের সাংগঠনিক কাঠামো নিয়ে শুভেন্দুদার ধারণা কম।” তৃণমুলের (TMC) তরফে বারবার অভিযোগ করা হয়, এজেন্সিকে দিয়ে প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে বিজেপি। প্রাক্তন তৃনমূল সাংসদ কুণাল ঘোষেরও (Kunal Ghosh) বক্তব্য ছিল, ইডি ও সিবিআইকে তাদের শাখা সংগঠনে পরিণত করেছে বিজেপি (BJP)। এবার বিজেপি দলের মধ্যেই সেই এজেন্সি নির্ভরতা নিয়ে আলোড়ন তুঙ্গে উঠে গেল। পাশাপাশি দলের একাংশ মনে করছে, এজেন্সি নির্ভরতা নিয়ে শুভেন্দুকেও পরোক্ষে বার্তা দিয়েছেন সুকান্ত। এজেন্সি নির্ভরতা নিয়ে শুভেন্দু ও সুকান্তর ভিন্ন অবস্থান সামনে এসে গেল। দলের এক রাজ্য নেতার কথায়, এজেন্সি নির্ভরতার কথা শুভেন্দুদা আগে শুরু করেন। সুকান্তদা অবশ্য অনেক পরে এসব বলেছেন।
দলের একাংশের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে দিয়ে চমকানোর রাজনীতি করেছেন রাজ্যের দু-একজন শীর্ষ নেতা। কিন্তু ভোটে জেতার মতো সংগঠন তৈরি হয়নি। কেন্দ্রীয় বাহিনীর নির্ভরতা নিয়েও হুগলিতে দলীয় বৈঠকে বলেছিলেন সুকান্ত। সুকান্ত বলেছিলেন কর্মীদের, কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করিয়ে কিছু লাভ হবে না। কর্মীদের সক্রিয় হতে হবে। বিরিয়ানিতে মশলা হচ্ছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। কিন্তু বিরিয়ানির চাল আর মাংস দলের কর্মীদের হতে হবে। দলের এক প্রাক্তন জেলা সভাপতির কথায়, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দিয়ে মার খাওয়ানোর হুমকি তো শুভেন্দু অধিকারীই দিতেন। ফলে, ভোটে বিপর্যয়ের দায় শীর্ষ নেতারা নিচুতলার কর্মীদের উপর ঠেলে দিলেও পাল্টা রাজ্য নেতাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলছে কর্মীরাও। শুরু হয়েছে দায় ঠেলাঠেলি।